X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১
চাকরি হারানোর শঙ্কায় কর্মীরা

‘বন্ধ হওয়া’ এড়াতে নিজেদের মতো চেষ্টা করছে সিটিসেল

হিটলার এ. হালিম
০২ আগস্ট ২০১৬, ১০:০৩আপডেট : ০২ আগস্ট ২০১৬, ১০:৫৫

সিটিসেল আর্থিক সক্ষমতার অভাব, অভ্যন্তরীণ কোন্দল, অব্যাহতভাবে গ্রাহক সংখ্যা কমে যাওয়া, নতুন প্রযুক্তি চালু না করায় ডুবতে বসেছিল মোবাইলফোন অপারেটর সিটিসেল। এবার বকেয়া পরিশোধ না করার অভিযোগে সরকারই অপারেটরটিকে বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। রবিবার টেলিযোগাযাগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি এই বিষয়ক একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সিটিসেলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। অনেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য যোগাযোগ করতে শুরু করে দিয়েছেন। এদিকে, বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণার পরপরই নড়েচড়ে বসেছে সিটিসেল। প্রতিষ্ঠানটির ‘বন্ধ’ ঠেকাতে নিজেদের মতো করে চেষ্টা করছে অপারেটরটি। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ সব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, সিটিসেল গ্রাহকদের অন্য অপারেটরে যেতে দুই সপ্তাহের সময়ও দিয়েছে সরকার এবং এর জন্য গ্রাহকদের কাছে দুঃখও প্রকাশ করেছে।   

প্রসঙ্গত, মোবাইলফোন অপারেটর সিটিসেলের কাছে সরকারের পাওনা রয়েছে ৪৭৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। আগামী ১৬ আগস্টের মধ্যে এই টাকা পরিশোধ না করলে বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে অপারেটরটি। রাজস্ব বকেয়া বাকি এবং পরিশোধে গড়িমসি করায় যেকোনও সময় বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটর সিটিসেলের লাইসেন্স ও তরঙ্গ বাতিল এবং অপারেশনাল কার্যক্রম বন্ধ করে অপারেটরটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে সরকার। ৩১ জুলাই সিটিসেলের গ্রাহকদের উদ্দেশে এক বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানিয়ে বিটিআরসি দুই সপ্তাহের মধ্যে বিকল্প সেবা নেওয়ার জন্য গ্রাহকদের আহ্বান জানিয়েছে।

সিটিসেলের প্রধান নির্বাহী মেহবুব চৌধুরীর সঙ্গে মোবাইলফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। বিকল্প উপায়ে সিটিসেলের একজন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি নাম-পরিচয় প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি। তবে তিনি নিজেকে উদ্ধৃত না করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এখন সিটিসেলের মালিক পক্ষ ও শেয়ার হোল্ডাররা মিলে ঠিক করবেন তারা কী পদক্ষেপ নেবেন। তবে আমরা বিটিআরসির চেয়ারম্যানের কাছে আজ অ্যাপয়েনমেন্ট চাইব। তিনি সময় দিলে আমরা তার সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী করণীয় ঠিক করব।

বিটিআরসির চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন,  সেবা চালু রাখার বিষয়ে সিটিসেল থেকে একটি আবেদন পেয়েছি। বিটিআরসি ওই আবেদন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে পাঠিয়ে দেবে। মন্ত্রণালয়ই সেবা চালু রাখার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

সোমবার দুপুরের আগ পর্যন্ত তারা (সিটিসেল) বিটিআরসির পক্ষ থেকে কোনও নোটিশ বা চিঠি পাননি জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, যা পেয়েছি তা হলো পাবলিক ডকুমেন্ট। সবকিছুই মিডিয়ার মাধ্যমে জেনেছি।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, মানি রিকভারির জন্য বিটিআরসি মামলা করেছে সিটিসেলের বিরুদ্ধে। সেই মামলার শুনানি চলছে। এই সময়ে এ ধরনের সিদ্ধান্তে সিটিসেল বিস্মিত হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের লাখো গ্রাহক রয়েছে। গ্রাহকদের একটা ব্যবস্থা না করে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করলে তা গ্রাহকদের প্রতি অবিচারই করা হবে। আমরা তা করতে চাই না। সিটিসেলে কর্মীদের অনিয়মিত বেতন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আপনারা তো জানেন সিটিসেলের আর্থিক অবস্থা বেশকিছু দিন ধরে ভালো যাচ্ছে না। এ কারণে কর্মীদের বেতন অনিয়মিত হয়ে গেছে।

জানা গেছে, সরকারের ঘোষণায় চাকরি হারানোর আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন কর্মীরা। এরই মধ্যে সিটিসেলের অনেক কর্মী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ শুরু করেছেন। ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম জানান, তিনিও সিটিসেলের একাধিক কর্মীর ফোন পেয়েছেন। তারা চাকরি চান। তিনি বলেন, তারা বেতন নিয়ে কোনও কথা বলেনি। শুধু বলেছে, খারাপ সময় আসছে। একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। চাকরি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থাকলে কর্মক্ষেত্রে ভালো করা যায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিটিসেলে কর্মীদের মধ্যে চাকরি হারানোর আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, প্রতিষ্ঠানটির ভেতরের আন্তঃকোন্দল আর্থিকভাবে দুর্বল করে ফেলেছে। একাধিকবার সিটিসেলকে বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া হলেও বিক্রি করা সম্ভব হয়নি বিভিন্ন জটিলতার কারণে। বিদ্যুৎবিল বকেয়া থাকায় সংযোগ বিছিন্ন (বেশির ভাগের) করা হয়েছে সিটিসেলের ৮৭৬টি বিটিএস টাওয়ারের মধ্যে ৭০০টি। ফলে কার্যত অনেক জায়গায় এমনিতেই নেটওয়ার্ক বিছিন্ন সিটিসেল। আর গ্রাহক হারানোর ফলে ভয়েস ও ইন্টারনেট থেকে সিটিসেলের রাজস্ব কমেছে আশঙ্কাজনক হারে। এসব কারণেই সূত্রের দাবি সিটিসেলের বন্ধ হওয়াটাই এখন নিয়তি।

বিটিআরসির ঘোষণা অনুযায়ী, গত ৩০ জুন পর্যন্ত সিটিসেলের গ্রাহক ছিল ৭ লাখ ২ হাজার।৩১ মে যা ছিল ৭ লাখ ৩৫ হাজার। ৩০ এপ্রিল সিটিসেলের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৬৮ হাজার। আর ৩১ মার্চ যা ছিল ৭ লাখ ৯৯ হাজার। দেখা যাচ্ছে, এভাবেই প্রতি মাসে গ্রাহক হারিয়েছে সিটিসেল।   

বন্ধ না করে বিকল্প ব্যবস্থার দাবি সিটিসেল গ্রাহক ফোরামের

সরকারের এমন ঘোষণায় সিটিসেলের লাগো গ্রাহক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। অধিকাংশ গ্রাহক ব্যক্তিগত নম্বর হিসেবে দীর্ঘদিন সিটিসেল নম্বরটি ব্যবহার করে আসছেন। হঠাৎ সরকারি সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ সিটিসেল ব্যবহারকারীরা।

সোমবার সিটিসেল গ্রাহক ফোরামের আহ্বায়ক পারভেজ আহমেদ বলেন, হঠাৎ করে বিটিআরসি নেওয়া এই সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সাধারণ মানুষ। অনেকেই ব্যবসায়ী নম্বর হিসেবে সিটিসেল ব্যবহার করে আসছেন। সরকারের এই সিদ্ধান্তে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন ব্যবসায়ীরা। সিটিসেল সিমগুলো সরকারি মোবাইল কোম্পানি টেলিটক বা অন্য যে কোনও কোম্পানিতে মাইগ্রেশন করার দাবি জানান পারভেজ আহমেদ।

সিটিসেল গ্রাহক ফোরামের মুখপাত্র এ আর সীমান্ত বলেন, আমরা সিটিসেল গ্রাহক ফোরামের পক্ষ থেকে বিটিআরসি বরাবর স্মারকলিপি দেব।

সিটিসেল গ্রাহক ফোরামের সদস্য হাসান কবির বলেন, আমার ব্যবসার প্রথম থেকে আমি সিটিসেল ব্যবহার করে আসছি। সারাদেশে থাকা কাস্টমারদের কাছে আমার সিটিসেলের নম্বরটি রয়েছে। এখন যদি এই নম্বরটি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে আমার ব্যবসায় ধস নামবে। বিটিআরসি’র উচিত সিটিসেল গ্রাহকদের জন্য একটি বিকল্প ব্যবস্থা করা।

/এমএনএইচ/এসএ/ 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
১০ বাংলাদেশিকে সীমান্ত এলাকা থেকে মিয়ানমারে অপহরণ
১০ বাংলাদেশিকে সীমান্ত এলাকা থেকে মিয়ানমারে অপহরণ
তিন মামলায় মিল্টনের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
তিন মামলায় মিল্টনের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
ভারতের ভোটে বিজেপির পক্ষে কি ‘৪০০ পেরোনো’ আদৌ সম্ভব?  
ভারতের ভোটে বিজেপির পক্ষে কি ‘৪০০ পেরোনো’ আদৌ সম্ভব?  
বিশ্বকাপ দল নিয়ে লুকোচুরি কেন?
বিশ্বকাপ দল নিয়ে লুকোচুরি কেন?
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে