X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

সাবধান, আপনার ছবি দিয়েই ফেসবুকে ‘ভিডিও ভাইরাস’

হিটলার এ. হালিম
০৪ অক্টোবর ২০১৬, ০৮:০০আপডেট : ০৫ অক্টোবর ২০১৬, ১৮:৪৫

ফেসবুকে ইনবক্সে আসা ভিডিও ভাইরাসের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কোনও ভিডিও লিংক ঘুরে বেড়ালে কিংবা ইনবক্সে কেউ কোনও ভিডিও লিংক পাঠালে সেসবে ক্লিক না করার পরামর্শ দিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি সংশ্লিষ্টরা। এগুলো এক ধরনের ভাইরাস (স্প্যাম)। মুহূর্তেই আপনার আইডিকে কব্জা করে ফেলতে পারে। এসব ভিডিও লিংকে কোনও ভিডিও নেই, এগুলো স্প্যাম। সম্প্রতি এসব স্প্যামই ছড়িয়ে পড়েছে ফেসবুকে। যা দিনে দিনে ভয়াবহ আকার ধারণ করছে।
সম্প্রতি ফেসবুকে একটি ভাইরাস ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। এটি এক ধরনের ফাঁদ। অনেকে বুঝে না বুঝে কিংবা স্রেফ কৌতূহলের বশে স্প্যামটির লিংকে ক্লিক করে ফাঁদে পড়ছেন। এর ফলে অনেকেই তাদের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হারাচ্ছেন। স্প্যামটি মূলত ভিডিও লিংকের মাধ্যমে ছড়ায়।
কখনও ভিডিও লিংকরূপী ভাইরাসটি আপনার ফেসবুক ওয়ালে ঘুরতে থাকবে, কখনও ইনবক্সে এসে ঘাপটি মেরে বসে থাকবে। ক্লিক করলেই সর্বনাশ। তাই সাবধান। কখনও আপনার ছবি দিয়ে ভিডিও, কখনও বিশেষ কোনও গানের ভিডিও, কখনও অ্যাব্স্ট্রোক্ট কোনও কিছুর ছবি দিয়ে আসতে পারে ভিডিও লিংক।
যারা ফেসবুকে স্প্যামটির আক্রমণের শিকার হবেন, তাদের কাছ থেকে বন্ধুতালিকায় থাকা সদস্যদের কাছে একটি ভিডিও লিংক যাবে। এটা দেখতে অনেকটা ইউটিউব ভিডিও লিংকের মতো। এই লিংকটি যার কাছে যাবে তার নিজের প্রোফাইলের ছবি এতে সংযুক্ত থাকবে। ফলে সহজাতভাবেই তিনি ভাবতে পারেন এটা তার সম্পর্কিত কোনও ভিডিও। আর এই ভেবে যখনই কৌতূহল নিয়ে তিনি এতে ক্লিক করবেন তখন তিনি নিজেও স্প্যামটি দিয়ে আক্রান্ত হবেন। পরবর্তী সময়ে তার অ্যাকাউন্টের বন্ধু তালিকায় থাকা সবার ইনবক্সে এমন লিংক যাবে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)-এর সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে এটা ফেসবুকের সিকিউরিটিজনিত নিজস্ব সমস্যা। নিরাপত্তা সমস্যার কারণে ভাইরাস ছড়াচ্ছে এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমটি।’ তিনি মনে করেন, ‘এ জন্য ফেসবুক ব্যবহারকারীকে আরও সচেতন হতে হবে। পরিচিত না হলে বা নিশ্চিত হতে না পারলে যে এটা কোনও ভাইরাস নয়, তখনই কেবল ক্লিক করা উচিত। এছাড়া যেকোনও লিংকে ক্লিক করা উচিত নয়।’
ইন্টারনেট ঘেঁটে জানা গেল, স্প্যাম হছে অনাকাঙ্ক্ষিত মেসেজ যা সাধারণত ই-মেইলের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর কাছে পাঠানো হয়। স্প্যামের মাধ্যমে কমদামি পণ্য বা সেবার বিজ্ঞাপন যেমন বিভিন্ন ধরনের ঋণ, দ্রততম সময়ে বড়লোক হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ, অর্থ উপার্জনের উপায়, লটারিসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য বিজ্ঞাপন ইত্যাদি পাঠানো হয়। অনেক সময় বিভিন্ন নিউজ গ্রুপ বা বুলেটিনবোর্ডে অপ্রাসঙ্গিক পোস্টকেও স্প্যাম বলা হয়।

স্প্যাম সাধারণ মেইলের মতোই আপনার ইনবক্সে আসে। স্প্যামিং-এর মূল উদ্দেশ্য হলো বিনা পয়সায় পণ্যের প্রচার। স্প্যামগুলোর মাধ্যমে আপনার ‘প্রাইভেসি’ও হুমকির মুখে পড়তে পারে। স্প্যাম যারা পাঠায় তারা হলো স্প্যামার। এই স্প্যামাররা ইন্টারনেট থেকে এবং র‌্যান্ডমলি বিভিন্ন ইমেল অ্যাড্রেস জেনারেট করে স্ম্যাম মেইল পাঠিয়ে থাকে। এবার এসবই আরও জাটিল আকারে ভর করেছে ফেসবুকে।
এভাবেই ক্রমশ বিস্তার লাভ করছে এই স্প্যাম। গত কয়েকদিনে যেটা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এ সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিয়া ইসলাম রুম্পা বলেন, ‘আমার অনেক বন্ধু এই স্প্যামের শিকার হয়েছে। আমার কাছেও অনেকবার স্প্যামটির লিংক এসেছে। কিন্তু সেগুলোতে ক্লিক না করায় আমার অ্যাকাউন্টের কোনও সমস্যা হয়নি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগেরর শিক্ষার্থী দায়িদ হাসান মিলন বলেন, ‘আমি আর একটু হলেই স্প্যামের ফাঁদে পড়তে যাচ্ছিলাম। শেষ মুহূর্তে সতর্ক হওয়ায় তা হয়নি।’ তিনি মনে করেন, ‘একটু অসতর্ক হলে যেকেউ স্প্যামটির শিকার হতে পারেন। ফলে হ্যাক হয়ে যেতে পারে অ্যাকাউন্ট। তাই ফেসবুক ব্যবহার করার সময় এখন থেকে একটু বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে এবং ইনবক্সে আসা কোনও লিংক কিংবা অন্যকোনও লিংকে না জেনে ক্লিক করা যাবে না।’

একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী আসমা উল হুসনা জানিয়েয়েছেন, ‘এক বন্ধুর ইনবক্স থেকে পাঠানো তার চেহারা দেওয়া ভিডিও দেখে ওটায় ক্লিক করেই বিপদে পড়ি। পরে পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে আইডি ডিঅ্যাক্টটিভেট করে আবার অ্যাকাউন্টটি রিস্টার্ট করি। কিন্তু এই যন্ত্রণা সামলাতে পুরো একটা দিন গেছে। ফেসবুকে এটা নিয়ে আগে কোনও প্রচারণা দেখিনি। দেখলে আগেই সাবধান হতে পারতাম।’

স্প্যামে আক্রান্ত হলে করণীয়:
১. দ্রুত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করে ফেলা।
২. কিছু সময়ের জন্য ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি ডিঅ্যাক্টিভেট করে রাখা। পরে সময় বুঝে চালু করা। অনেক সময় যার অ্যাকাউন্ট থেকে স্প্যামটি আসছে তাকে আনফ্রেন্ড করলেও এ থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। এছাড়া যদি ফেসবুকের সিকিউরিটি (ব্যবহারকারীর) ব্যবস্থা দুর্বল থাকে তাহলে অনেক সময় ফেসবুকই পরামর্শ দিয়ে থাকে ব্যবহারকারীকে কী করতে হবে। ব্যবহারকারীর ফায়ারওয়াল দুর্বল থাকলে সে মতো নির্দেশনা দেয় ফেসবুক। ওই নির্দেশনা মেনে চললে ওই স্প্যামের হাত থেকে মুক্তি মিলতে পারে। আরও নিশ্চিত হতে চাইলে যিনি ভিডিওটি পাঠিয়েছেন, তাকে ফোন করে বা ইনবক্স করে জেনে নিন ভিডিওটি তিনিই পাঠিয়েছেন কিনা। নিশ্চিত হয়েই তবে লিংক ওপেন করতে পারেন।

/এইচএএইচ/আপ-এমও/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন ওবায়দুল কাদের
স্বজনদের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন ওবায়দুল কাদের
দুর্নীতির দায়ে ক্যারিবিয়ান ব্যাটারকে ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা
দুর্নীতির দায়ে ক্যারিবিয়ান ব্যাটারকে ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা
এসএসসি’র ফল প্রকাশের দিন ঘোষণা
এসএসসি’র ফল প্রকাশের দিন ঘোষণা
সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় ৮ সেনা আহত
সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় ৮ সেনা আহত
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক