X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

মোবাইল ব্যাংকিং: লেনদেনের সীমা কমানোয় হুমকিতে ই-কমার্স

হিটলার এ. হালিম
২৩ জানুয়ারি ২০১৭, ১০:১৮আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০১৭, ১৭:০২

মোবাইল ব্যাংকিং

বাংলাদেশ ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেনের সীমা কমিয়ে নির্দিষ্ট করায় হুমকির মুখে পড়েছে ই-কমার্স খাত। বিশেষ করে ফেসবুকভিত্তিক ই-কমার্স তথা এফ কমার্স (ফেসবুক কমার্স) প্রতিষ্ঠানগুলো এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ই-কমার্স লেনদেনে মূল্য পরিশোধের পদ্ধতিগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় জনপ্রিয় মাধ্যম হলো মোবাইল ব্যাংকিং।

তবে ই-কমার্স খাতের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, এতে করে ই-কমার্স খাতে সমস্যা হলেও তা বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এ খাতের ওপর তা প্রভাব ফেলতে পারে।

তারা আরও বলছেন, মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করতে গেলে সীমা সমস্যা না হলেও এই অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করার যে সীমা রয়েছে তা সমস্যায় ফেলতে পারে খাতের সঙ্গে জড়িতদের। এছাড়া অনেকে এর মাধ্যমে বেতন পেয়ে থাকেন। ফলে বেতনের টাকা তোলার সময় সমস্যা তৈরি করতে পারে।

প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) তথা মোবাইল আর্থিক সেবা চালুর লক্ষ্য ছিল দরিদ্র ও ব্যাংকিং সেবা বহির্ভূত একটা বিশাল জনগোষ্ঠীকে নিয়মতান্ত্রিক আর্থিক সেবা প্রদানের মাধ্যমে অর্থনীতির চাকা সচল করা করা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পলিসি সাপোর্ট, সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পরিশ্রম এবং সাধারণ মানুষের আস্থার কারণে গ্রাহক ও লেনদেন দুটোই বেড়ে সেবাটি একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমএফএসকে একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করে ই-কমার্সসহ নানা ধরনের ব্যবসা বেড়েছে। অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে তাদের ব্যবসায়িক লেনদেন সম্পন্ন করছে তেমনি অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান তাদের সরবরাহকারীদের পাওনা পরিশোধ থেকে শুরু করে কর্মীদের বেতনও দিচ্ছে এর মাধ্যমে। ফলে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসকে কেন্দ্র করে এক ধরনের ডিজিটাল অর্থনৈতিক ইকো-সিস্টেম গড়ে উঠেছে। নতুন নির্দেশনা কার্যকর হলে অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসের (বেসিস) সাবেক সভাপতি শামীম আহসান মনে করেন, এই নতুন নিয়মের ফলে ই-কমার্সে প্রভাব পড়বে।

কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ই-কমার্স লেনদেনের মাত্র ১৫ শতাংশ বিকাশের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় যার পরিমাণ ১০ হাজার টাকার কম। এ কারণে হয়তো এখনই খুব একটা প্রভাব না পড়বে না। তবে পরবর্তীতে দীর্ঘ মেয়াদে এ খাতে প্রভাব পড়বে।’

অনলাইন শপ ‘আজকেরডিল’র প্রধান নির্বাহী ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি বোঝা যাবে না। এটি কী ব্যক্তিগত মানি ট্রান্সফারের জন্যই প্রযোজ্য নাকি যে কোনও পেমেন্টের জন্যও-সে বিষয়ে ওস্পষ্ট ধারণা নেই। পেমেন্টের জন্য কোনও লিমিট থাকা উচিত না। কেননা পেমেন্ট হয় মার্চেন্ট অ্যাকাউন্টে। যাতে প্রতিটি লেনদেন কোন মার্চেন্ট পাচ্ছে তার রেকর্ড থাকে এবং কোনও সমস্যা থাকলে তা ধরা যায়।’

দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশের মুখপাত্র জাহেদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংক এমএফএস প্রতিষ্ঠানগুলোকে লেনদেনের সীমা পুনর্নির্ধারণ করে একটি নির্দেশনা দিয়েছে। নতুন নির্দেশনা গ্রাহকদের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে আমরা বিশ্লেষণ করছি এবং গ্রাহক স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে কিভাবে নির্দেশনাটি প্রতিপালন করা যায় তা নিয়ে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’

সিন্দাবাদ ডট কমের প্রধান নির্বাহী জিশান কিংশুক হক বলেন, ‘ছোট আন-স্ট্রাকচার্ড ই-কমার্স ব্যবসা তথা এফ-কমার্স ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এদের বেশিরভাগই ব্যক্তিগত মোবাইলফোন নম্বরটিই মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর হিসেবে ব্যবহার করছে। এসব ব্যক্তিগত নম্বরও কি বাংলাদেশ ব্যাংকের সীমা ঠিক করে দেওয়ার অধীনে পড়বে?’

ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) এর সভাপতি রাজীব আহমেদ মনে করেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেনের সীমা বেঁধে দেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবশ্যই কোনও শক্ত কারণ রয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ না করেই বলতে চাই, ই-কমার্স ব্যাপারটিকে আলাদা করে বিবেচনা করা উচিত। ই-কমার্সে লেনদেনে অনেক সহজে রেকর্ড রাখা যায় এবং ট্র্যাক করার উপায়ও বের করা যায়। তাই ই-কমার্সের লেনদেনে কোনও সীমা বেঁধে দিলে তা এই খাতের জন্য বিশাল ক্ষতি বয়ে আনবে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর মিরপুরের একজন বিকাশ এজেন্ট বলেন, ‘এর ফলে আমাদের আয় কমে যাবে। কারণ তারা এমএফএস অপারেটর থেকে ক্যাশ ইন, ক্যাশ আউটে কমিশন পান। যদি লেনদেন কমে যায় তাহলে আমাদের আয় কমে যাবে।’

ওই এজেন্ট জানান, নতুন নিয়মে ক্যাশ ইনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৫ হাজার টাকার বেশি ক্যাশ-আউট করা যাবে না। মোবাইল ব্যাংকিং এর উদ্দেশ্য হচ্ছে দ্রুত  প্রয়োজনে টাকা পাঠানো। ৫ হাজার টাকার বেশি ক্যাশ-আউট করলে এজেন্টকে জাতীয় পরিচয়পত্রর ফটোকপি দিতে হবে। দেশের সবাইকে এখনও জাতীয় পরিচয়পত্র পায়নি। গ্রামাঞ্চলে সব জায়গায় ফটোকপিও করা যায় না। ফলে গ্রাহকরা হয়রানি শিকার হবেন। এছাড়া এজেন্টদের কাছে ভুয়া পরিচয়পত্র শনাক্তের কোনও মেশিন নেই। ফলে এটা হয়রানি বাড়াতে পারে।

 /এসটি/

আরও পড়ুন: রাজধানীতে অবৈধ লেগুনার দাপট কার জোরে?

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ছাঁটাই ও পলিশ বন্ধ হলে কম দামে চাল কিনতে পারবে মানুষ: খাদ্যমন্ত্রী
ছাঁটাই ও পলিশ বন্ধ হলে কম দামে চাল কিনতে পারবে মানুষ: খাদ্যমন্ত্রী
উচ্চশিক্ষা খাতকে ডিজিটালাইজেশনে আনার পরামর্শ ইউজিসির
উচ্চশিক্ষা খাতকে ডিজিটালাইজেশনে আনার পরামর্শ ইউজিসির
বিটুমিন গলে যাওয়া মহাসড়ক পরিদর্শনে দুদক
বিটুমিন গলে যাওয়া মহাসড়ক পরিদর্শনে দুদক
মিয়ানমারের ৩৮ শরণার্থীকে ফেরত পাঠালো ভারত
মিয়ানমারের ৩৮ শরণার্থীকে ফেরত পাঠালো ভারত
সর্বাধিক পঠিত
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তদন্ত করবে ডিবি
সজলের মুগ্ধতা অপির চোখে, জন্মদিনে
সজলের মুগ্ধতা অপির চোখে, জন্মদিনে