X
সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫
২৩ আষাঢ় ১৪৩২

১৪ অক্টোবর অনলাইনে ‘নোকতা’ মুক্ত হবে বাংলা ভাষা

হিটলার এ. হালিম
১৩ অক্টোবর ২০১৯, ০৭:৫৫আপডেট : ১৩ অক্টোবর ২০১৯, ১৬:৪১

ড় ঢ় য়- তিন বর্ণের সংকট দূর হচ্ছে

বাংলা ডোমেইনের ক্ষেত্রে ‘ড় ঢ় য়’- এই তিন বর্ণের সংকট কাটতে যাচ্ছে। সংকট কাটলে যেকোনও বাংলা বর্ণমালা দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করা যাবে এবং সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইট অনলাইনে বাংলায় লিখে খুঁজে পাওয়া যাবে। বর্তমানে ডট বাংলা ডোমেইনে এই তিনটি বর্ণ দিয়ে ওয়েবসাইট তৈরি করা যায় না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এখন কেউ চাইলেও সময় নামে কোনও বাংলা ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবেন না।



আগামী ১৪ অক্টোবর এই সমস্যা দূর হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এই সমস্যা দূর হলে বাংলা ডোমেইন লেখার প্রযুক্তিগত বাধা থেকে মুক্তি পাবে বাংলাদেশ। একইসঙ্গে অনলাইন দুনিয়ায় বাংলা ভাষা ‘নোকতা’ মুক্ত হবে।
জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে সরকারের পাশাপাশি বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম কাজ করছে দীর্ঘদিন ধরে। সম্প্রতি ফোরাম কর্তৃপক্ষ ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে বিষয়টি নিয়ে ইন্টারনেটের ডোমেইন ঠিকানা বরাদ্দকারী সংস্থা ইন্টারনেট করপোরেশন ফর অ্যাসাইনড নেমস অ্যান্ড নাম্বারসকে (আইকান) জানানো হবে।
গত ৬ অক্টোবর সবিচালয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে ডোমেইনে বাংলা ভাষার ব্যবহার সংক্রান্ত বিষয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সভাপতিত্বে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় ১৪ অক্টোবর বৈঠক শেষে ইউনিকোড কনসোর্টিয়াম ও আইকানকে (আইসিএএনএন) বাংলা বর্ণমালার পূর্ণাঙ্গ লিপি দেওয়া হবে।
ওই বৈঠকে বিটিআরসি’র ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড অপারেশন বিভাগের মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মাহ্ফুজুল করিম মজুমদার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) পরামর্শক মামুন অর রশীদ, বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের মহাসচিব মোহাম্মাদ আব্দুল হক অনু এবং ভাষা প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও প্রফেশনালস সিস্টেমসের প্রধান নির্বাহী হাসিব রহমান উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন ডট বাংলা ডোমেইন। এখন পর্যন্ত (২০ আগস্ট) এই ডোমেইনে নিবন্ধনের সংখ্যা ৫৫৮টি। তবে এসব সাইটের মধ্যে তিনটি বর্ণ (ড়,ঢ়,য়) দিয়ে রাখা নামের কোনও ওয়েবসাইট নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) পরামর্শক মামুন অর রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এক বছরের বেশি সময় ধরে আমরা আইকানের সঙ্গে এক ধরনের যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি ১৪ অক্টোবর যুদ্ধে শেষ হবে এবং বাংলাদেশ সেই যুদ্ধে জিতবে। ১৪ তারিখে কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন,১৪ তারিখে আমরা আইকানের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠক করবো। ওইদিন আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবো। তিনি আরও বলেন, আইকান মূলত আমাদের ওই বৈঠকের অপেক্ষাতেই আছে। আমাদের সঙ্গে বৈঠকের পরে ওরা বিষয়টি চূড়ান্ত করবে। আমরা ওই তিনটি বর্ণ যুক্ত করানোর ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি জানান, আইকান খুবই নিরপেক্ষ একটি প্রতিষ্ঠান। আমরা তাদের বোঝাতে পেরেছি।
বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের মহাসচিব মোহাম্মদ আবদুল হক অনু বলেন, বৈঠক সফল হলে তিনটি বর্ণ একক ক্যারেক্টারের মর্যাদা পাবে। আর নোকতা থাকবে না। তিনি উল্লেখ করেন, এই তিনটি বর্ণ লেখার সময় আমরা সব সময় ডট (.) চিহ্ন দেই (ড়,ঢ়, য়), নোকতা নয়। এটা হিন্দিতে আছে। এই দুটির জটিলতার কারণে এমনটা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আইকানের সঙ্গে সফলতা অর্জন করলে আমরা ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে যোগাযোগ করবো।
জানা গেছে, বাংলা বর্ণের সঙ্গে হিন্দি ভাষার (দেবনাগরী বর্ণ) মধ্যে স্পষ্টতই পার্থক্য রয়েছে। এটা নিরসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলা ভাষার স্বাতন্ত্র্য রেখে একটি মান ঠিক করতে ড়, ঢ়, য় বর্ণের স্বতন্ত্র কোড তৈরি করা হচ্ছে। ফলে আগামীতে ইউনিকোড বাংলার ড়, ঢ়, য় এর প্রতিটি ক্যারেক্টারের জন্য দুটি করে কোড প্রয়োজন হবে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছে, বাংলা ডোমেইন লেখার রীতি নিয়ে কাজ করছে আইকান। এই কাজটি করা হচ্ছে একটি প্যানেলের মাধ্যমে। এই প্যানেলের নাম নিউ ব্রাক্ষ্মি জেনারেশন প্যানেল বা এনবিজিপি। এই প্যানেল ভারতের নয়টি লিপির (তামিল, তেলেগু, গুজরাটি, গুরুমুখি, দেবনাগরি, কানাড়া, মালায়ালাম, ওড়িয়া ও বাংলা) নীতিমালা (এলজিআর) চূড়ান্তকরণ নিয়ে কাজ করছে। বাংলা ছাড়া অন্য লিপির নীতিমালার কাজ শেষ পর্যায়ে (পাবলিক রিলিজ ও ফিডব্যাক রিসিভ) রয়েছে। বাংলালিপি এখনও পাবলিক রিলিজ পর্যায়ে যায়নি। বাংলা ভাষা সংক্রান্ত নীতিমালা ঠিক করার জন্য প্যানেলের কিছু অংশের অবস্থানের সঙ্গে বাংলাদেশ দ্বিমত পোষণ করে। বাংলাদেশের দাবি, বাংলা বর্ণমালা ছক থেকে নোকতা অপসারণ এবং তিনটি বর্ণকে একক ক্যারেক্টার হিসেবে গণ্য করতে হবে। অন্যদিকে, প্যানেল অনুসরণ করে ইউনিকোড নির্ধারিত বাংলা কোড চার্ট যা মূলত আসকি স্ট্যান্ডার্ড ও দেবনাগরি লিপির ওপর ভিত্তি করে, তা বেশ কয়েক বছর আগে ঠিক হয়।
জানা যায়, ইউনিকোডের ছকে নোকতা (নুক্তা) নামে একটা ক্যারেক্টার রয়েছে যার কোড পয়েন্ট 09BC. বাংলাভাষার সঙ্গে নোকতার কোনও সম্পর্ক না থাকায় সংশ্লিষ্টরা এটাকে সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে, বাংলা বর্ণমালার তিনটি আবশ্যিক মৌলিক বর্ণকে (ড়, ঢ়, য়) অতিরিক্ত ব্যঞ্জন বর্ণ হিসেবে দেখানো হয়েছে যেগুলোর কোড পয়েন্ট 09DC, 09DD x 09DF
ছকে তিনটি বর্ণকে ড+নোকতা, ঢ+নোকতা ও য+নোকতা দিয়ে লেখার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু এই তিনটিই একক বা পূর্ণ বর্ণ। ইউনিকোডে এদের পূর্ণ বর্ণ হিসেবে স্থান দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা আরও বলছেন, ইউনিকোডে বাংলা দাঁড়ি নেই। আছে দেবনাগরি (হিন্দি ভাষা) দণ্ড (।) যার কোড পয়েন্ট 0964. বাংলা দাঁড়ির ঘরটি (যার কোড 09E4) এখনও সংরক্ষিত বা অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে। এগুলোর সংশোধন ও যুক্তকরণ প্রয়োজন।

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
টিভিতে আজকের খেলা (৭ জুলাই, ২০২৫)
টিভিতে আজকের খেলা (৭ জুলাই, ২০২৫)
মধ্যরাতে সংবর্ধনায় বিশ্বকাপ স্বপ্নের কথা বললেন ঋতুপর্ণা ও আফঈদারা 
মধ্যরাতে সংবর্ধনায় বিশ্বকাপ স্বপ্নের কথা বললেন ঋতুপর্ণা ও আফঈদারা 
গণভবন জয় করেছি, এবার জাতীয় সংসদ জয় করবো: নাহিদ ইসলাম
গণভবন জয় করেছি, এবার জাতীয় সংসদ জয় করবো: নাহিদ ইসলাম
একটি দলের কারণে ঐকমত্য কমিশনে মৌলিক সংস্কারের প্রস্তাবনা আটকে যাচ্ছে: আখতার
একটি দলের কারণে ঐকমত্য কমিশনে মৌলিক সংস্কারের প্রস্তাবনা আটকে যাচ্ছে: আখতার
সর্বাধিক পঠিত
আসছে নতুন কারিকুলাম: ফ্রেমওয়ার্ক ডিসেম্বরে, ‘বড় পরিসরে’ থাকবে জুলাই
আসছে নতুন কারিকুলাম: ফ্রেমওয়ার্ক ডিসেম্বরে, ‘বড় পরিসরে’ থাকবে জুলাই
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক 
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক 
ফার্মেসিতে ওষুধের আড়ালে ‘ট্যাপেন্টাডল’ বিক্রির অভিযোগ, আটক ৫
ফার্মেসিতে ওষুধের আড়ালে ‘ট্যাপেন্টাডল’ বিক্রির অভিযোগ, আটক ৫
লোহিত সাগরে জাহাজে হামলায় আগুন, ডুবে যাওয়ার শঙ্কা
লোহিত সাগরে জাহাজে হামলায় আগুন, ডুবে যাওয়ার শঙ্কা
সেই ব্যাংক কর্মকর্তার খোঁজ মিলেছে
সেই ব্যাংক কর্মকর্তার খোঁজ মিলেছে