X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘এক সেন্সে আমাদের দেশে ইন্টারনেটের দাম কম’

হিটলার এ. হালিম
২৯ নভেম্বর ২০১৯, ১৯:৫৫আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০১৯, ২০:০৪

আইএসপিএবির নতুন সভাপতি মোহাম্মদ আমিনুল হাকিম দেশে যত ধরনের সরকারি সেবা আছে তা জনগণের কাছে পৌঁছতে হলে ইন্টারনেটের কোনও বিকল্প নেই। এখনও দেশের অধিকাংশ গ্রামের লোকজন ইন্টারনেটের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাদের মেইনস্ট্রিমে নিয়ে আসা এবং ডিজিটাল বৈষম্য কমিয়ে আনতে ইন্টারনেটে ‘এক দেশ এক রেট’ ধারণাটা জরুরি বলে জানিয়েছেন ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি’র নতুন কমিটির সভাপতি ও আম্বার আইটির প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আমিনুল হাকিম।

আমিনুল হাকিম বলেন, আমাদের প্রথম কাজ কম দামে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়া। এজন্য দরকার সারাদেশে এক রেট। কিন্তু দেশে এখন পর্যন্ত ‘এক দেশ এক রেট’ এই ধারণাটি দাঁড়ায়নি। সম্প্রতি নিজ কার্যালয়ে বাংলা ট্রিবিউনের মুখোমুখি হয়ে তিনি এসব কথা বলেন। এছাড়া ইন্টারনেটে কীভাবে নিরাপদ থাকা যায়, প্যারেন্টাল কন্ট্রোল, ইন্টারনেট মেলা ও আইএসপিএবি’র কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে জানান তিনি। তিনি বলেন,এক সেন্সে আমাদের দেশে ইন্টারনেটের দাম কম।

বাংলা ট্রিবিউন: পুরনো দায়িত্ব নতুন করে পেলেন, কেমন লাগছে?

আমিনুল হাকিম: ভালো লাগছে। সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আমরা নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করি। এই পর্যায়ে কাজ করতে গেলে দুই বছর যথেষ্ট সময় নয়, আরও দুই বছর সময় পাওয়াতে সুবিধা হলো। নতুন, ঝুলে থাকা এবং অর্ধসম্পন্ন কাজগুলো এবার শেষ করা যাবে।

বাংলা ট্রিবিউন: নতুন দায়িত্বের শুরুটা কিভাবে করতে চান?

আমিনুল হাকিম: চ্যালেঞ্জ অনেক। একে একে করতে চাই। বর্তমান ইসি কমিটি এরইমধ্যে ২৫ থেকে ৩০টি কাজ চিহ্নিত করেছে। যেগুলো আগামী দুই বছরের মধ্যে আমরা শেষ করবো। বেশি প্রাধান্য পাওয়া কাজগুলো বর্তমান কমিটির ১৩ জন সদস্যর মাঝে ভাগ করে দেওয়া হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে আমরা কিছু স্ট্যান্ডিং কমিটি করবো। যেগুলো সদস্যদের নিয়ে করা হবে। জানুয়ারি মাসে আমরা একটি ইন্টারনেট মেলা করতে যাচ্ছি। যেটা আমাদের টপ প্রায়োরিটি পর্যায়ে রয়েছে। এছাড়া গত কমিটিতে থাকাকালে আমরা কিছু কাজ করেছিলাম, তার ফলোআপ জরুরি। যেমন ভ্যাট ইস্যু। এটার মিমাংসা এখনও হয়নি। এখন ফলোআপটা জরুরি হয়ে পড়েছে।

আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এগুলো একটু ‘ডিসিপ্লিন’ ও ‘মেইনস্ট্রিমে’ নিয়ে আসতে চাই। যেন সদস্যরা এই অ্যাসোসিয়েশনকে নিজের মনে করে। মোটিভেশন দিয়ে তাদের বিভিন্ন কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে চাই। 

বাংলা ট্রিবিউন: আগামী দুই বছরের জন্য কোনও রোডম্যাপ বা পরিকল্পনা তৈরি করেছেন?

আমিনুল হাকিম: আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এগুলো একটু ‘ডিসিপ্লিন’ ও ‘মেইনস্ট্রিমে’ নিয়ে আসতে চাই। যেন সদস্যরা এই অ্যাসোসিয়েশনকে নিজের মনে করে। মোটিভেশন দিয়ে তাদের বিভিন্ন কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে চাই। এছাড়া অ্যাসোসিয়েশনে অটোমেশন নিয়ে আসতে যাচ্ছি।  যেমন, সদস্যদের বিভিন্ন সমস্যার কথা বলতে, মেম্বারশিপের আবেদন, রেজিস্ট্রেশন- যেন সবই অনলাইনে করা যায়। টোটাল একটা অটোমেশন প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা হবে সংগঠনটিকে। এছাড়া আমাদের ইন্ডাস্ট্রির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হলো, অনেক গ্রাহক ‘সার্ভিস কস্ট’ না দিয়ে অপারেটর বদল করছে। এদের তালিকা করে ‘কালো তালিকা’ তৈরি করা। আরেকটা হলো ইন্টারনেট মেলা করা। ট্রান্সমিশনের (ব্যান্ডউইথ পরিবহন) একটি সমস্যা রয়েই গেছে। এই বিষয়টার প্রতি আমরা নজর দেব।

মোহাম্মদ আমিনুল হাকিম  

বাংলা ট্রিবিউন: ইন্টারনেটের দাম নিয়ে ব্যবহারকারীদের মাঝে হতাশা রয়েছে। দূর করার উপায় কি? এজন্য কি মূল্য বেঁধে দেওয়াকে সমাধান বলে মনে করেন?

আমিনুল হাকিম: নতুন করে যদি এনটিটিএন লাইসেন্স পাই তাহলে আমরা খুব অল্প মূল্যে ইন্টারনেট সেবা দিতে পারবো। (যদিও এরই মধ্যে বাহন নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে এনটিটিএন লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে)। এছাড়া একটি ট্রেডবডি হিসেবে আমরা ইন্টারনেটের মূল্য বেঁধে দিতে পারি না। সরকারও বেঁধে দিতে পারবে না। গণমানুষের কথা চিন্তা করলে,  সরকার চাইবে বাজারে যেন প্রতিযোগিতা থাকে। আমরা বিটিআরসির মাধ্যমে চেষ্টা করছি। গত জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত ডিএনসিসির মিটিং প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে হয়েছিল। তখন আমরা তাঁকে অনুরোধ করেছিলাম, ট্রান্সমিশনের রেটটা যেন ফিক্সড থাকে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অথবা পঞ্চগড় যেখানেই ব্যান্ডউইথ নিয়ে যাচ্ছি তার ফিক্সড একটা রেট যেন থাকে। তাহলে সবার জন্য একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি হবে। এতে সব পর্যায়ে স্বচ্ছতা থাকবে।

এক সেন্সে আমাদের দেশে ইন্টারনেটের দাম কম। বাইরের দেশগুলোতে দেখেন যেখানে যত স্পিড (গতি) সেখানে কিন্তু ‘ডাটা ক্যাপিং’ আছে। আমাদের দেশে কিন্তু ‘ডাটা ক্যাপিং’ নেই। কিন্তু মোবাইলে ডাটা ক্যাপিং খুবই যৌক্তিক। মোবাইল অপারেটররা যে ট্রান্সমিশন ব্যবহার করে, ওয়্যারলেস ট্রন্সমিশনেরও কিন্তু একটা সীমাবদ্ধতা আছে।

বাংলা ট্রিবিউন: আমাদের দেশে ইন্টারনেটের দাম কম না বেশি?

আমিনুল হাকিম: এক সেন্সে আমাদের দেশে ইন্টারনেটের দাম কম। বাইরের দেশগুলোতে দেখেন যেখানে যত স্পিড (গতি) সেখানে কিন্তু ‘ডাটা ক্যাপিং’ আছে। আমাদের দেশে কিন্তু ‘ডাটা ক্যাপিং’ নেই। কিন্তু মোবাইলে ডাটা ক্যাপিং খুবই যৌক্তিক। মোবাইল অপারেটররা যে ট্রান্সমিশন ব্যবহার করে, ওয়্যারলেস ট্রন্সমিশনেরও কিন্তু একটা সীমাবদ্ধতা আছে। প্রযুক্তির যদি সীমাবদ্ধতা থাকে সেখানে কিন্ত অন্যান্য ‘লিমিটেশন’ কমে আসবে। আমরা যারা ফিক্সড ব্রডব্র্যান্ড সেবা দিচ্ছি, এখানে কোনও সীমাবদ্ধতা নেই। আমরা ইচ্ছে করলেই অনেক ব্যান্ডউইথ দিতে পারছি। সেজন্য আনলিমিটেড ডাটা ক্যাপিংটা হচ্ছে না। এই ‘ডাটা ক্যাপিং কনসেপ্ট’ থেকে যদি তুলনা করেন তাহলে দেশে ইন্টারনেটের মূল্য এখনও পর্যন্ত কম।

বাংলা ট্রিবিউন: আমাদের দেশে ইন্টারনেটের ব্যবহার হচ্ছে, অপব্যবহারও হচ্ছে। বলা চলে একটা ডিজিটাল ফাঁদ তৈরি হচ্ছে ইন্টারনেটে। এর থেকে বাঁচানোর জন্য মানুষকে সচেতন করার কোনও উদ্যোগ নিবেন কি? যাতে মানুষ ইন্টারনেটে নিরাপদ থাকে, ইন্টারনেট নিরাপদ রাখে।

আমিনুল হাকিম: দুটি উদ্যোগ রয়েছে। প্রথমত, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার-এর নির্দেশনা অনুযায়ী টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি প্রত্যেকটি আইএসপিকে সরাসরি চিঠি ইস্যু করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কোনও অভিভাবক যদি প্যারেন্টাল কন্ট্রোল চায়, তাহলে তা দিতে বাধ্য থাকবে সংশ্লিষ্ট আইএসপি। সাইবার সিকিউরিটি এতো বড় ডোমেইন যেখানে সরকার একা কিছু করতে পারবে না। সবাইকে এর সঙ্গে জড়িত হতে হবে। প্যারেন্টাল কন্ট্রোল প্রায় তৈরি। ডিসেম্বরের মধ্যে আমরা তৈরি থাকবো আভিভাবকদের দেওয়ার জন্য। এছাড়া আমরা জানুয়ারিতে যে মেলা (জাতীয় ইন্টারনেট মেলা) করছি, এই মেলা উপলক্ষে আমরা বেশ কিছু  প্রকাশনা বের করবো। সিকিউরিটি টিপস, ট্রিকসসহ অনেক কিছু থাকবে সেসবে। শিশু, পিতা-মাতা, সরকারি কর্মকর্তা,করপোরেটসহ যারা আছেন তাদের টার্গেট করে সচেতনতা প্রোগ্রাম করা হবে। 

বাংলা ট্রিবিউন: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

আমিনুল হাকিম: বাংলা ট্রিবিউনকেও ধন্যবাদ। 

শ্রুতি লিখন: রাসেল হাওলাদার

 

/এইচএএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ফাইনালে ১১ মিনিট লড়াই, জব্বারের বলী খেলায় চ্যাম্পিয়ন বাঘা শরীফ
ফাইনালে ১১ মিনিট লড়াই, জব্বারের বলী খেলায় চ্যাম্পিয়ন বাঘা শরীফ
বন ডাকাতদের জন্যই পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয়: জিএম কাদের
বন ডাকাতদের জন্যই পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয়: জিএম কাদের
ঢাবির জগন্নাথ হলে বসে প্রাথমিকের প্রশ্নের সমাধান!
ঢাবির জগন্নাথ হলে বসে প্রাথমিকের প্রশ্নের সমাধান!
চেন্নাইয়ের হয়ে খেলাটা আমার কাছে ছিল স্বপ্ন: মোস্তাফিজ (ভিডিও)
চেন্নাইয়ের হয়ে খেলাটা আমার কাছে ছিল স্বপ্ন: মোস্তাফিজ (ভিডিও)
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা