X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

আইএসপি লাইসেন্সের বার্ষিক ফি বাড়ানোর প্রস্তাব, ইন্টারনেটের দাম কমবে কিভাবে?

হিটলার এ. হালিম
০২ মার্চ ২০১৭, ০৭:৫৩আপডেট : ০৬ মার্চ ২০১৭, ২০:৫৮

আইএসপি লাইসেন্সের বার্ষিক ফি বাড়ানোর প্রস্তাব, ইন্টারনেটের দাম কমবে কিভাবে? ইন্টারনেটের দাম কমানোর জন্য যখন বিভিন্নমুখী পরিকল্পনা চলছে,‘কস্ট মডেলিং’-এর জন্য যখন পরামর্শক নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, ঠিক সেই সময়ের মধ্যে নিরবে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো (আইএসপি) লাইসেন্সের দাম তথা ফি বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠিয়েছে। জানা গেছে, টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি লাইসেন্স ফি যা প্রস্তাব করেছে, তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ফি প্রস্তাব করেছে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন আইএসপিএবি! ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লাইসেন্স ফি বাড়লে অবশ্যই ব্যান্ডউইথ বিক্রি করে গ্রাহকের কাছ থেকেই তা আদায় করা হবে। ফলে ইন্টারনেটের দাম যেখানে কমার কথা, সেখানে দাম না কমে বরং দাম আরও বাড়বে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সূত্রে আরও জানা গেছে, যে লাইসেন্স ফি ছিল এক লাখ টাকা, বিটিআরসি সেই ফি বাড়িয়ে প্রস্তাব করেছে ১০ লাখ টাকা। আর এই ফি-ই আইএসপিএবি প্রস্তাব করেছে ৫০ লাখ টাকা!

অন্যদিকে যে লাইসেন্স গ্রহণের ফি ছিল ৫ হাজার টাকা, বিটিআরসি তা প্রস্তাব করেছে ১০ লাখ টাকা। আর আইএসপিএবি প্রস্তাব করেছে ২৫ লাখ টাকা। যদিও আইএসপিএবি বলছে, তাদের প্রস্তাব নতুন লাইসেন্সের ক্ষেত্রে। তাহলে বড় বড় নতুন প্রতিষ্ঠান আসবে, বড় বিনিয়োগও আসবে। সংগঠনটির যুক্তি, লাইসেন্স  ফি কম থাকায় বড় বড় বিনিয়োগ এখাতে আসছে না। ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান একাধিক লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছে। কোনও অপরাধে জড়িয়ে লাইসেন্স হারালে আরেকটি লাইসেন্স নিয়ে নতুন প্রতিষ্ঠান চালু করছে। আইএসপিএবির অবস্থান এর বিরুদ্ধে।   

উল্লেখ্য, আইএসপির লাইসেন্সিং ফি অনুসারে, নেশনওয়াইড আইএসপির বার্ষিক লাইসেন্স ফি এক লাখ টাকা, সেন্ট্রাল জোন ৫০ হাজার ও জোনালের ১০ হাজার টাকা। অন্যদিকে ‘এ’ ক্যাটাগরির ফি ৫ হাজার টাকা, ‘বি’ ক্যাটাগরির ২ হাজার ৫০০ এবং ‘সি’ ক্যাটাগরির লাইসেন্সের জন্য বার্ষিক লাইসেন্স ফি দিতে হয় ৫০০ টাকা।

জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ  বিভাগের যুগ্ম সচিব হুসনুল মাহমুদ খান বলেন, ‘এই ধরনের প্রস্তাব যৌক্তিক হয়নি। এতে করে বড় কোম্পানিগুলো আরও বড় হবে, আর ছোট আইএসপিগুলো টিকতে না পেরে বাজার থেকে চলে যাবে।’ তিনি মনে করেন, এতে করে বাজারে অসাম্য ব্যবস্থা চালু হতে পারে। এই প্রস্তাব ভালো করে যাচাই বাছাই করা প্রয়োজন বলে তিনি জানান।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের উপ-সচিব এম. রায়হান আখতার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই প্রস্তাব এক ধরনের ‘অ্যান্টি ব্যারিয়ার’ তৈরি করবে।’ তিনি বলেন, ‘আইএসপিএবির প্রস্তাবের ফলে ‘এ’ ‘বি’ ‘সি’ ক্যাটাগরির আইএসপি থাকবে না। সব এক হয়ে যাবে।’

তিনি জানান, পাড়া বা মহল্লায় যে ছোট ছোট আইএসপিগুলো সেবা দেয়, সেগুলোর সেবার মান বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ে ভালো। তাদের নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই ভালো সেবা দিতে হয়। অন্যদিকে বড় বড় আইএসপিগুলো আসলে করপোরেট প্রতিষ্ঠানের আইটি ম্যানেজারদের শরণাপন্ন হয়ে ব্যবসা চালিয়ে থাকে। ফলে তাদের বাসাবাড়িতে ভালো সেবা দেওয়ার কোনও মাথা ব্যথা থাকে না। আইটি ম্যানেজারকে ‘ম্যানেজ’ করেই সাধারণত এরা ব্যবসা করে থাকে। ফলে তখন সেবার মান কমে যেতে পারে।

এম. রায়হান আখতার আরও বলেন, ‘আশা করি, দুই পক্ষের প্রস্তাবই বিবেচনায় নিয়ে তা চূড়ান্ত করা হবে।’

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের একটি দায়িত্বশীল সূত্রের আশঙ্কা, মূলত ডিটিএইচ (ডাইরেক্ট টু হোম) ও আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) টিভির মধ্যকার প্রতিযোগিতার কারণেই দাম বাড়ছে আইএসপি লাইসেন্স ও বার্ষিক ফি-এর। সংশ্লিষ্টদের আশঙ্কা, আইপি টিভি ভালো চললে ডিটিএইচ ব্যবসা মার খেতে পারে। এ কারণে লাইসেন্স ও বার্ষিক ফি বাড়িয়ে বিষয়টি প্রকারান্তরে ডিটিএইচকে টিকিয়ে রাখতেই এই উদ্যোগ কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের।

এর আগে ইন্টারনেটের মূল্যসীমা বেঁধে দিতে বিটিআরসিতে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল আইএসপিএবি। ওই প্রস্তাবে ইন্টারনেটের মূল্যসীমা কার্যকর হলে ঢাকায় ইন্টারনেটের দাম না কমলেও গতি বাড়বে। একইসঙ্গে ঢাকার বাইরে গতি বাড়বে তবে কমবে দাম। ঢাকায় বর্তমানের চেয়ে গতি দ্বিগুণের বেশি বাড়তে পারে। আর ঢাকার বাইরে বর্তমানের অর্ধেক দামে মিলতে পারে ইন্টারনেট।

বিটিআরসিতে আইএসপিএবি’র জমা দেওয়া প্রস্তাবনায় এ সংক্রান্ত ব্যাখ্যা দেওয়ার পাশাপাপাশি একইসঙ্গে আইআইজি (ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে) ও এনটিটিএনগুলোর ব্যান্ডউইথ, পরিবহন ও সেবাচার্জে ‘সিলিং’ করারও প্রস্তাব দিয়েছে। এই প্রস্তাবনায় ইন্টারনেটের দাম কমার একটা উপলক্ষ তৈরি হলেও আইএসপিএবিগুলোর দেওয়া অপর একটি প্রস্তাবে লাইসেন্সের বার্ষিক ফি বাড়ানোর প্রস্তাবে শঙ্কা তৈরি করেছে যে, ইন্টারনেটের দাম আদৌ কমানো হবে কিনা।

প্রসঙ্গত, আইএসপি লাইসেন্স ক্যাটাগরিতে ৬ ধরনের লাইসেন্স রয়েছে। এর মধ্যে বিটিআরসির তথ্যমতে, নেশনওয়াইড ১২৯, সেন্ট্রালজোন ৭০ এবং জোনাল ৭৬টি লাইসেন্স রয়েছে।এছাড়া ক্যাটাগরি এ, বি ও সিতে যথাক্রমে ২২৮, ৩১ ‍ও ৯১টি লাইসেন্স রয়েছে। এরমধ্যে এ, বি ও সি ক্যাটাগরির লাইসেন্সে আইএসপিএবি ও সাইবার ক্যাফে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।    

/এইচএএইচ/এপিএইচ/

/আপ-এএ/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দুর্নীতির দায়ে ক্যারিবিয়ান ব্যাটারকে ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা
দুর্নীতির দায়ে ক্যারিবিয়ান ব্যাটারকে ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা
এসএসসি’র ফল প্রকাশের দিন ঘোষণা
এসএসসি’র ফল প্রকাশের দিন ঘোষণা
সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় ৮ সেনা আহত
সিরিয়ায় ইসরায়েলি হামলায় ৮ সেনা আহত
ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র
ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক