X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

পটের বিবি 'ফোয়ারা'

লিনা দিলরুবা শারমিন
০৬ আগস্ট ২০১৬, ১৭:৫০আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০১৬, ১৭:৫৩

পটের বিবির শাড়ি

 

শাড়ি যারা ভালোবাসেন, অনলাইনে কেনাকাটার অভ্যাসও আছে? তাহলে চারকোল ও পটের বিবি নামটা নিশ্চয় আপনার কাছে পরিচিত? বাংলাদেশে অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসার শুরুর দিকের একটি প্রতিষ্ঠান চারকোলঃ পটের বিবি।

এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ফোয়ারা ফেরদৌস। নিজেই ডিজাইনার, নিজেই কাপড় কেনা থেকে সব কাজ করেন। অনলাইনে যদি কেনাকাটায় অভ্যস্ত হয়ে থাকেন তবে পটের বিবির অনেক সুনাম শুনবেন। সবসময় নান্দনিক কিছু দেওয়ার চেষ্টা করেন ফোয়ারা।

খুব অল্পসময়ে অনলাইনে ভালো সারা ফেলে দেওয়া ফোয়ারা জানালেন, “ভালো কাজ করতে গেলে প্রচুর সময় দিতে হয়। অফলাইন ব্যবসায়ের থেকে অনলাইনে আরও বেশি। কাজের বাইরে ছবি তোলা, পেইজের ইনবক্সে আসা প্রশ্নের উত্তর দেওয়া, ডেলিভারি দেওয়া সবকিছুর দিকে ভালোভাবে খেয়াল না রাখতে পারলে সুনাম নষ্ট হবার ভয় আছে। তাই সময়টা দিতে হয় অনেক বেশি।”

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। চাকরি করেছেন প্রায় পাঁচ বছর। খাপ খাওয়াতে পারছিলেন না। এরপর নিজের কাজ করার স্বাধীনতার জন্য ব্যবসায় হাতেখড়ি। ছোটবেলায় ছবি আঁকতেন। চাকরি করার সময়ই ফ্যাব্রিক পেইন্টিং করেছেন। বন্ধুরাও উৎসাহ যুগিয়েছেন সেগুলো বিক্রি করার।

“ফেসবুক গ্রুপ “মেয়ে” থেকে উদ্যোক্তা বন্ধুরা মিলে রাঙতা মেলা করে ব্যবসায়ে হাতেখড়ি হলো আর চারকোল নামের পেইজের জন্ম হলো। এটাই আমার ব্যবসার প্রথম ধাপ বলা চলে। এক সময় শাড়ির নকশায় আগ্রহী হলাম। চারকোলের পাশাপাশি দেশি শাড়ির রঙ বিন্যাস আর বুনন নিয়ে কাজ করা এখন নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে” জানালেন ফোয়ারা।

ফোয়ারা ফেরদৌস

আজকাল অনেকেই ব্যবসার দিকে ঝুঁকছে। নতুনদের জন্য তো বটেই অনেক সময় পুরোনোদের জন্যও পুঁজি একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। কম পুঁজি নিয়ে ব্যবসা করে সফল হওয়া কোনওভাবেই সহজ কোনও চ্যালেঞ্জ না। ফোয়ারা বলেন, ব্যবসা মানেই চ্যালেঞ্জ মনে হয় আমার কাছে। এখানে কম পুঁজি বা বেশি পুঁজি কোনও বড় ব্যাপার মনে হয় না। মাঝে মাঝে বেশি পুঁজিই বরং চ্যালেঞ্জ-এর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আমার কাছে কাজের কোয়ান্টিটি না, বরং কাজ করে নিজের সন্তুষ্টি কতটা পেলাম সেটাই বড় মনে হয়”

কম পুঁজি দিয়ে যখন ব্যবসা শুরু করেছেন তখন যেমন চ্যালেঞ্জ ছিল, এখনো অনেকটা তেমন আছে বলেই জানান ফোয়ারা। তবে পুঁজি বেশি হলে কাজের পরিসর বাড়াতে সুবিধা বলেও তিনি জানান।

দেশি শাড়ি নিয়ে আগ্রহ থেকেই ব্যবসা শুরু চারকোলঃ পটের বিবির। কাজ হয়েছে অনেক। ক্রেতারাও উৎসাহ যুগিয়েছেন।  পটের বিবির কাজের ধারা হচ্ছে এখানে পুরনো কিছু নকশা, কাপড়, বুনন যা অনেক আগে করা হতো, এখন হারিয়ে গেছে, যেতে বসেছে বা তেমন জনপ্রিয় না সেগুলো সবার কাছে তুলে ধরা। তাঁতিদের নকশা করা শাড়ি দিয়ে পটের বিবির যাত্রা শুরু হলেও ধীরে ধীরে ফোয়ারা নিজের পছন্দের নকশা আর রঙ বিন্যাসে কাজ করতে শুরু করেন। এখন পটের বিবির ৮০ ভাগ শাড়িই তৈরি হয়েছে ফোয়ারার নিজস্ব কারিগরের হাতে।

ফোয়ারা জানান, ডিজাইনের ক্ষেত্রে  উদ্দীপনামূলক ব্যাপারগুলোই বেশি থাকে। এর আগে যামিনী রায়, ভ্যান গগের কাজ থেকে অনুপ্রাণিত হয় পোশাকে তাদের ছবি এঁকেছি। শাড়ি নকশার ক্ষেত্রে প্রথমে রঙ আমি নির্বাচন করি। অনেক সময় রাস্তায় চলতে গিয়ে কোনও কিছুর রঙ ভালো লাগলে আমি শাড়ির নকশা করা যায় কিনা তা ভাবতে শুরু করি। সুতা, বুনন, কাপড় সব কিছুতেই আরামের কথা মাথায় রাখি। আর নিজে পরতে ভালো লাগে না এমন কিছু অন্যকে দিতে চাই না। চারকোলে ছোট বাচ্চাদের জামা আর তরুণদের জন্য পোশাক করা হয়। আর শাড়ি করি সব বয়সিদের জন্য। 

যে দেশে নারী উদ্যোক্তা এখনো ঠিক গড়ে ওঠেনি সেখানে ফোয়ারা ফেরদৌস সাহসের পরিচয় দিয়েছেন বলতে হয়। নিজেকে সৌভাগ্যবতী বলছেন এদিকে। কথায় কথায় জানালেন, “নারী বলে আমার তেমন কোনও সমস্যা হয়নি। তাঁতি, দর্জি, ক্রেতা, বন্ধু এবং পরিবার সব কিছুতেই সম্পূর্ণ সহায়তা পেয়েছি। ব্যবসা করার জন্য নারী হিসেবে আলাদা করে কিছু মাথায় রাখার দরকার বোধ করিনি কখনো। ব্যবসা তো মেয়েদের জন্য আলাদা কিছু নয়। বাকিরা যেভাবে করে মেয়েরাও সেভাবে করছে। আমার মনে হয়, ব্যবসা বলতে যা বোঝায় সেখানে নারী পুরুষ একই সমস্যার ভেতর দিয়ে যায়। আর কাজ করার আগ্রহ, নিষ্ঠা, সততা এসবই আসলে ব্যবসায়ের জন্য জরুরি।” 

পটের বিবির পণ্য

নতুন নারী উদ্যোক্তাদের বেশ সাহসই দেন তিনি। বলেন, “আগে মেয়ে হিসেবে কোনো ব্যবসা শুরু করার কথা ভাবতে হতো কারণ পুরুষের তৈরি করা ব্যবসায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সেটা অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ। কারণ নারীকে তখন একাই লড়তে হয়েছে। এখন দিন দিন নারী উদ্যোক্তা বাড়ছে। এটা খুবই আশার কথা।” 

 নিজের মেধার মূল্যায়ন করে শক্ত এটা জায়গা তৈরি করে নেওয়ার জন্য নারী উদ্যোক্তাদের রীতিমতো ধন্যবাদ দেন তিনি। চারপাশের উদ্যোক্তাদের দেখে আরও নারী উদ্যোক্তা তৈরি হবে এটাই তার আশা। এভাবেই ভালো কাজে দেশ ভরে যাবে। শুভ কাজ দিয়েই হোক সকলের মঙ্গল, উন্নত হোক দেশ।

/এফএএন/ 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পিএসজিকে হারিয়ে ফাইনালে ডর্টমুন্ড
চ্যাম্পিয়নস লিগপিএসজিকে হারিয়ে ফাইনালে ডর্টমুন্ড
রাজস্থানকে হারিয়ে প্লে অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো দিল্লি
রাজস্থানকে হারিয়ে প্লে অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো দিল্লি
ঢাকা আসছেন মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু
ঢাকা আসছেন মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
সর্বাধিক পঠিত
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?