X
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

দেড় হাজার টাকা বেতন থেকে দুই হাজার কোটির প্রতিষ্ঠান

সুবর্ণ আসসাইফ
১০ নভেম্বর ২০২১, ১৬:৩৬আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২১, ১৬:৪০
imagedocument

নিরাপদ কর্মপরিবেশে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ও দক্ষ শ্রম শক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অধিক উৎপাদনে দেশীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে উদ্বুদ্ধ করতে গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড প্রবর্তন করা হয়। এ বছর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় প্রদত্ত এ অ্যাওয়ার্ড পেতে যাচ্ছে দেশের পোশাকশিল্পের রপ্তানিমুখী ব্র্যান্ড ‘স্নোটেক্স আউটারওয়্যার লিমিটেড।’

এস এম খালেদ

স্নোটেক্সের যাত্রা, ভবিষ্যত পরিকল্পনা, গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড প্রাপ্তিসহ আরও নানা বিষয় নিয়ে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রতিষ্ঠানের এমডি এস এম খালেদ। পেশায় সাংবাদিক ছিলেন তিনি, কাজ করতেন দেড় হাজার টাকা বেতনে। ১৯৯৮ সালে বন্ধুদের সঙ্গে স্নোটেক্স প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। বর্তমানে তার হাত ধরে স্নোটেক্স ২ হাজার কোটি টাকার প্রতিষ্ঠান।

বাংলা ট্রিবিউন: শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে প্রদত্ত ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড’ পেতে যাচ্ছে স্নোটেক্স। আপনাদের অনুভূতি জানতে চাই।

এস এম খালেদ: এটা আমাদের জন্য অনেক বড় অনুপ্রেরণার, রাষ্ট্র থেকে একটা স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছি। ৭ বছর আগে যখন ফ্যাক্টারি করি, তখন গ্রিন ফ্যাক্টারির জন্য প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে। কারণ সেভাবে কোনও ফ্যাক্টরি ছিলো না, কনসালটেন্ট ছিলো না। কিন্ত আমাদের প্রতিজ্ঞা ছিলো বেস্ট ফ্যাক্টারি হতে হবে। আমরা অ্যাওয়ার্ডটার জন্য অপেক্ষা করছি, এটা আমাদের ভবিষ্যতে আরও ভালো করতে উৎসাহ যোগাবে।

বাংলা ট্রিবিউন: স্নোটেক্সের শুরু কীভাবে? ব্যবসার পরিকল্পনা কি আগে থেকেই ছিলো?

এস এম খালেদ: আমার স্কুলজীবন থেকে সামজিক কাজ, সংগঠন খুব ভালো লাগতো। ছোটবেলার থেকে চিন্তা ছিলো নিজে কিছু করবো। ইচ্ছে ছিলো যেটাই করবো, নিজের জন্য ও সবার জন্য মঙ্গলজনক হোক। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে বন্ধুরা চাকরিতে যোগ দিচ্ছিল, ব্যবসা করছিলো। তখন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে কাজ করতাম। আড়াই হাজার টাকা দিয়ে আমার চলাই কঠিন ছিলো, এই টাকা দিয়ে অন্যদের জন্য কীভাবে করবো! তখনই সিদ্ধান্ত নিই আর্থিকভাবে কিছু শুরু করার। আমি একটি বায়িং হাউজে চাকররি নিই, একটি গার্মেন্টেসে কাজ করি। পরে বন্ধুদের নিয়ে দুইটা ব্যবসা শুরু করি, কিন্তু ব্যর্থ হই। পরে আমরা স্নোটেক্স শুরু করি। স্নোটেক্স শুরু করলেও প্রথম দিকে অর্ডার পাচ্ছিলাম না, অনেক চেষ্টার পর অর্ডার পাই। এভাবেই আমাদের শুরু।

বাংলা ট্রিবিউন: কর্মীবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্নোটেক্স পরিচিত। ১৮ হাজার শ্রমিকের জন্য প্রতিদিনের খাবার, বোনাসসহ বেশ কিছু উদ্যোগ রয়েছে আপনাদের।

এস এম খালেদ: স্কুলজীবন থেকে আমি সামাজিক কাজে যুক্ত ছিলাম। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ৫-৭ বছর আমি প্রচুর সামাজিক কাজে যুক্ত ছিলাম। আমাদের বন্ধুদের পরিকল্পনা ছিল লাইব্রেরি করবো, সমাজের জন্য কাজ করবো। কিন্তু আমরা সেটা তখন করতে পারিনি, বাধ্য হয়ে চাকরিতে ঢুকতে হয়। তারপর ব্যবসা শুরু করি। তখন আমার পরিকল্পনা ছিলো শুধু অর্থ আয়ের জন্য এটা করবো না, এই উদ্যোগ সবার যেন উপকারে আসে। আমরা চেষ্টা করছি আমাদের পরিবারের ১৮ হাজার মানুষকে কীভাবে ভালো রাখা যায়। চিন্তা করলাম, আমরা দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করতে পারি আমাদের কর্মীদের জন্য। কারণ অনেকে দূর থেকে আসে খাবার নিয়ে। সেই খাবার অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। ১ ঘণ্টার টিফিনে কষ্ট করে হেঁটে খেতে যান অনেকে, বিশ্রামের সময় পাওয়া যায় না। খাবারের ব্যবস্থা করে দেখলাম, তার থেকে ৫-১০ মিনিটে ওরা খেয়ে ফেলতে পারে বাকি ৪০-৫০ মিনিট বিশ্রাম করতে পারে। এটা আমাদের জন্যও ভালো ফল বয়ে আনে, আমাদের কাজের গতি বাড়ে। একই চিন্তা থেকে আমরা আমাদের মুনাফার ১৫ শতাংশ বোনাস হিসেবে শেয়ার করি। এতে কর্মীদের কাজের মান ভালো হয়, বায়ারও সন্তুষ্ট থাকে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের পরিবারের সদস্যদের ভালো রাখতে পারলে তারাও আমাদের ভালো রাখবে।

বাংলা ট্রিবিউন: পোশাকশিল্পে করোনার প্রভাব কীভাবে মূল্যায়ন করছেন? ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে কী ধরনের প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে? 

এস এম খালেদ: কোভিডে এমনও সময় ছিলো একেবারেই অর্ডার ছিলো না। আবার অনেক সময় প্রচুর অর্ডার, ১০ ঘণ্টা বেশি খেটেও শিপমেন্ট করা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক অর্ডার বাতিলও হয়েছে। ফলে কোটি কোটি টাকা লোকশান গুণতে হয়েছে। তবে সরকারের সহায়তায় ঐ সময় ব্যবসা চালিয়ে রাখাটা সহজ হয়েছে, যদিও লোনের টাকাটা ফেরত দিতে হবে। সময়টা কারোর জন্যই সহজ ছিলো না। আমরা জানি না কত বছর এভাবে চলবে, অর্ডার আসবে নাকি আসবে না। তবে এখন ভালোভাবেই কাজ চলছে, যদি এভাবে চলতে থাকে আমরা কোভিডের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারব। আমরা আশা করছি অতীতের মতো এমন অনিশ্চিত পরিবেশে আমরা আর পড়বো না।

এস এম খালেদ

বাংলা ট্রিবিউন: ব্যবসায় আসার আগে সাংবাদিকতাও জড়িয়েছেন। কেমন ছিলো সেই অভিজ্ঞতা? 

এস এম খালেদ: সাংবাদিকতা আমি অসম্ভব মিস করি। সাংবাদিকতা এমন একটা জায়গা, একজন পরিপূর্ণ মানুষ হওয়া যায়। আমার সংগঠনের এক বড় ভাই আমাকে সংবাদপত্রে কাজ করার প্রস্তাব দেন। বেতন ছিলো দেড় হাজার টাকা। যদিও টাকাটা না, কাজটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলো আমরা কাছে। এটা আমার জন্য একটা সুযোগ ছিলো। আমার কাজ ছিলো সাক্ষাৎকার নেওয়া। ওই সময়ের অনেক বড় মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। একটা বছর আমার জীবনের জন্য একটা বিশাল ব্যাপার, আমাকে আত্মবিশ্বাস দিয়েছে সাংবাদিকতা।

বাংলা ট্রিবিউন: তরুণদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার প্রবণতা এখন বাড়ছে। নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য আপনার পরামর্শ।

এস এম খালেদ: সবাই ব্যবসা করতে চায় নিজের জন্য। কিন্তু আমি মনে করি ব্যবসা হলো এমন একটা কিছু তৈরি করা, যারা কাজ করবে, যার জন্য কাজ করবো সবাই উপকৃত হবো। শুধু নিজে কীভাবে বেশি টাকা আয় করবো এটা ভাবলে হবে না। অনেকেই কোনও অভিজ্ঞতা ছাড়াই ব্যবসা করতে চায়। আমি ১ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে ব্যবসায় আসি, তারপরও ব্যর্থ হতে হচ্ছিল। এখনও হই তবে কম। ব্যবসায় নতুনদের আর্থিক সীমাবদ্ধতা থাকে, তাই ব্যর্থতা আসলে অভিজ্ঞতার অভাবে সামাল দেওয়া সম্ভব হয় না। ব্যবসায় তাই অভিজ্ঞতা নিয়ে আসা দরকার, ধৈর্য রেখে এগোতে হবে। খুব অল্প সময়ে টাকা উপার্জন করে ফেলার চিন্তা করলে হবে না, লম্বা সময়ের প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে হবে। তাহলে সফলতা আসবে। 

বাংলা ট্রিবিউন: স্নোটেক্স ও সারাকে নিয়ে আপনার প্রত্যাশা?

এস এম খালেদ: আমাদের এমন কোনও স্বপ্ন নেই যে এটা বিলিয়ন ডলার কোম্পানি হবে বা এতজন কাজ করবে। আমরা শুধু চেষ্টা করি প্রতিটা দিন ভালো করার। আমাদের পরিবারের সদস্য ও বায়ারদের ভালো রাখার চেষ্টা করে যাই আমরা। কোভিড ছাড়া গত ২০-২৫ বছরে আমাদের নেগেটিভ গ্রোথ ছিলো না। আশা করছি আমরা যদি সততা ও প্রতিশ্রুতি ধরে রাখতে পারি, তাহলে সামনে আরও ভালো করতে পারবো।

/এনএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দলের সিদ্ধান্ত না মেনে ভোটে আছেন মন্ত্রী-এমপির যেসব স্বজন
উপজেলা নির্বাচনদলের সিদ্ধান্ত না মেনে ভোটে আছেন মন্ত্রী-এমপির যেসব স্বজন
টিভিতে আজকের খেলা (২৪ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (২৪ এপ্রিল, ২০২৪)
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
চেলসিকে গুঁড়িয়ে দিলো আর্সেনাল
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে কাঁদলেন মিতুর মা
সর্বাধিক পঠিত
মিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিমিশা-ডিপজলদের শপথ শেষে রচিত হলো ‘কলঙ্কিত’ অধ্যায়!
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে যা জানালেন কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
জরিপ চলাকালীন জমির মালিকদের জানাতে হবে: ভূমিমন্ত্রী
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে নতুন যা জানালো বাংলাদেশ ব্যাংক