X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

দলে নবজোয়ার চাইলে ভাটার টান কেন সেটা বুঝতে হবে

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
৩১ মে ২০২৩, ১৫:৫৫আপডেট : ৩১ মে ২০২৩, ১৫:৫৫

গত রবিবার গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন গাজীপুর সিটি নির্বাচনে পরাজিত মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খান। তিনি গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতিও। পত্রিকাগুলোতে পরদিন বড় করে ছবি এসেছে আজমত উল্লা তার দলীয় প্রধানের হাতে নিজের লেখা বই তুলে দিচ্ছেন। বেশ বিছু ব্যাখ্যামূলক প্রতিবেদন এসেছে পত্রিকাগুলোতে। প্রায় সবাই বলার চেষ্টা করেছেন যে প্রধানমন্ত্রী গাজীপুরে দলের পরাজয়ে অসন্তুষ্ট। কেউ কেউ এটাও বলেছে যে, নির্বাচনে পরাজয়ের পর গাজীপুর শাখা পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।

হেরেছে বলেই কী এই পুনর্গঠনের উদ্যোগ? না হারলে কী বোঝা যেত না যে, দলে কোন্দল, বিবাদ, বিভক্তি আছে? সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে দলের যারা নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করেছেন তারা সাংগঠনিক শাস্তির মুখে পড়তে পারেন বলেও বলা হচ্ছে। কতজনকে দেওয়া হবে শাস্তি? সমস্যা কি শুধুই গাজীপুরে? বরিশালে কি কোন্দল নেই?

পত্রিকার পাতা খুললেই, টেলিভিশনের পর্দায়ও এসবের খবর। বলা হচ্ছে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার পর দ্বন্দ্বের আগে পরে কিছুটা গুঞ্জন থাকলেও আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটি ঘোষণার পর সেই গুঞ্জন আরও জোরালো হয়।

গত মে দিবসে নৌকার প্রার্থী খোকন সেরনিয়াবাত এবং বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারীদের পৃথক কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নেয়। বরিশাল থেকে নিয়মিতই পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও দলীয় কোন্দলের খবর আসছে।

সিটি নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী না দিলেও গাজীপুরে জয় পায়নি আওয়ামী লীগ। খুলনা ও রাজশাহীতে শক্ত প্রার্থী না থাকায় জয়ের সময় গুনছে দল। সিলেটে বিএনপির প্রার্থী অংশ না নেওয়ার ঘোষণায় আপাতত স্বস্তিতে আছেন দলীয় মেয়র প্রার্থী। বরিশালে নিজ দলের দ্বন্দ্বে চিন্তা তো থাকছেই।

কেন এমন হয়? অনেকদিন ধরেই প্রান্তিক পর্যায়ে অনেক জেলা-উপজেলায় এবং বিভাগে শাসক দলের ভেতর বিবাদ প্রকাশ্য। কোথাও কোথাও বিবাদকে কেন্দ্র করে সহিংসতাও হয়েছে। সারা দেশেই এখন আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ। কোনও জেলা-উপজেলায় আওয়ামী লীগ আর এক আছে বলে মনে হয় না। এক আওয়ামী লীগে কত যে লীগ! উপদলীয় কোন্দলে আওয়ামী লীগ ক্ষত-বিক্ষত। মুখে যদিও বলা হয়, তারা সবাই বঙ্গবন্ধুর সৈনিক, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী কিন্তু বাস্তবে তারা অনুসরণ করেন বিভাজনের আদর্শ।

প্রত্যেকেই নেতা হতে চান এবং এই নেতা কেন্দ্রিক আধিপত্য চর্চা থেকেই পক্ষ ও প্রতিপক্ষ হয়ে সব জনপদে দল এখন বহুধা বিভক্ত।

গাজীপুরের হারকে দলের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা। এই হারের ফলে দলীয় কোন্দলের বিষয়টি নতুন করে ভাবাচ্ছে আওয়ামী লীগকে। এই ভাবনাটা অনেক আগেই আসা উচিত ছিল। এতে করে একদিকে যেমন মানুষ শান্তি পেতো, অন্যদিকে দলের সংহতিও বজায় থাকতো।

ঠিক ঠিক জায়গায় ঠিক ঠিক প্রার্থী দিয়ে, দলীয় কোন্দল থামিয়ে বিপক্ষকে হারানো যায়। কিন্তু নিজের ঘরেই যদি রাজনীতির খেলা থাকে তাহলে সাফল্য আসবে কোথা থেকে? দ্বন্দ্ব নিরসনের দায়িত্ব সাধারণ সম্পাদকের। কিন্তু তাঁর নিজের সংসদীয় এলাকায়ও প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব দেখা গেছে এবং সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। খোদ তাঁর নিজের ভাই একসময় পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলেছিলেন।   

দলের ভেতর কোন্দল সৃষ্টি হয় মূলত আধিপত্য কায়েমের খায়েশ থেকে। বিভিন্ন প্রশ্নে দলীয় বিভাজনের ঊর্ধ্বে উঠে সহযোগিতার পথে, ঐকমত্যের ভিত্তিতে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা থাকে না বলেই তা আরও বাড়ে। আওয়ামী লীগের কলহ-কোন্দল অনেক স্থানেই সংঘাতে রূপ নিচ্ছে। আহত-নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। বিরোধী দল দুর্বল, তাই দলের ভেতর আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যেই বিবাদে জড়াচ্ছেন নেতাকর্মীরা। 

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক দলের প্রতিপক্ষ আরেক দল, তাদের মধ্যে লড়াই, সংঘর্ষ স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু এক দলের ভেতর যখন অনেক দল গড়ে ওঠে তখন পরিস্থিতি বেশি উত্তপ্ত হয়। প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বেগ পেতে হয় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে। সে এক বড় জটিল অংক প্রায় প্রতিটি জনপদে। স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়েছে, কারণ সবাই চায় মার্কার দখল নিতে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামো বরাবরই শক্তিশালী ছিল। দল এখন টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায়। সামনে সংসদ নির্বাচন। অনেকেই বলছেন, বেশি দিন ক্ষমতায় থাকায় দলের ভেতর সংহতির শক্তিতে বেশ ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। কারণ প্রায় সকল স্তরেই নেতা-কর্মীরা ক্ষমতা চর্চা যতটা করেছেন, রাজনৈতিক চর্চা করেননি। এতে করে ভেতর থেকে মেধাশক্তি এবং চিন্তাশক্তির ক্ষয় ঘটছে, ত্যাগী নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে নিষ্ক্রিয় হচ্ছেন বা দল ছাড়ছেন।

যখন পুনর্গঠনের কথা আসে তখন এ কথাগুলো গভীরভাবে দলের অভ্যন্তরে বিশ্লেষিত হওয়া প্রয়োজন। হয়তো দলে অনেকেই এই সত্যটা বুঝতে পারছেন। হয়তো তারা বিপন্নও বোধ করছেন। কিন্তু কোনও উদ্যমী উদ্যোগ চোখে পড়েনি।

গাজীপুর নির্বাচন নিয়েই শুরু হয়েছে দ্বন্দ্ব নিরসনের আলাপটা। প্রশ্ন হলো দলীয় কমিটি গঠন ও পদ-পদবী বণ্টনে কতটা গণতান্ত্রিক পদ্ধতি মেনে চলা হয়? স্থানীয় বা অন্য নির্বাচনে মানুষের মত কতটা প্রাধান্য পায়?  মানুষ কাদের প্রার্থী চাইছেন, দলের কাছে সেটা কতটা গুরুত্ব পায়? দলে নবজোয়ার চাইলে গোষ্ঠী বিভাজনের জেরে দলের তথাকথিত ঐক্যে যে ভাটার টান, ঠারেঠোরে সেটাও মেনে নিতে হবে।

লেখক: সাংবাদিক

 

/এসএএস/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ইসরায়েলের নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নেবে হামাস, আশা যুক্তরাষ্ট্রের
ইসরায়েলের নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নেবে হামাস, আশা যুক্তরাষ্ট্রের
রাজশাহীতে তীব্র গরমে মরছে মুরগি, আতঙ্কে খামারিরা
রাজশাহীতে তীব্র গরমে মরছে মুরগি, আতঙ্কে খামারিরা
সিগারেট বাকি না দেওয়ায় দোকানিকে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ
সিগারেট বাকি না দেওয়ায় দোকানিকে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চার কর্মকর্তা নিহত
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চার কর্মকর্তা নিহত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ