X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্থানীয় নির্বাচন পথ দেখায় বা দেখায় না

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
১৪ জুন ২০২৩, ১৫:৩৪আপডেট : ১৪ জুন ২০২৩, ১৫:৩৬

গাজীপুরের পর বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন। সামগ্রিকভাবে নির্বাচন ভালো হয়েছে, বরিশালের একটি ঘটনায় হাতপাখার মেয়র প্রার্থী আহত হওয়ার ঘটনা ছাড়া নির্বাচন স্বাভাবিক হয়েছে। যেহেতু রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ নেয়নি, তাই চরমমোনাই পীর সাহেবের ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনই হয়ে উঠেছিল আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী।

তিনটি নির্বাচন নিয়েই সন্তুষ্টি আছে কিন্তু একটি প্রশ্ন করা যেতেই পারে যে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের শ্রেষ্ঠ উৎসব নির্বাচনে মানুষ কেন অংশগ্রহণ করতে চাইছেন না? অন্তত নির্বাচন কমিশনের তথ্য তো তা-ই বলছে। গাজীপুরে ৫০ শতাংশ, বরিশালেও তাই এবং খুলনায় ৪৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। এত আয়োজন, এত আশ্বস্ততার পরও ভোট কেন বেশি পড়লো না, সেটা আলোচনার দাবি রাখে।

গণতন্ত্রে একজন মানুষ নানান কারণে ভোট নাও দিতে চাইতে পারেন। কিন্তু ভোটদানের হার ক্রমশ কমে যাওয়া শুভ লক্ষণ নয়। নির্বাচকদের মধ্যে যে একটা অনীহা দেখা যাচ্ছে তার কারণ কী কী এবং ভোট দেওয়ার হার বাড়ানোর জন্য কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, তার উপায় বের করা দরকার। তবে সবাই বলছে যে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়াতেই ভোটার কম এসেছে। জাতীয় নির্বাচনে এই পরিস্থিতি নিশ্চয়ই থাকবে না।  

স্থানীয় নির্বাচন যেহেতু ভালো হচ্ছে এবং বর্তমান নির্বাচন কমিশন আগের কমিশনের চাইতে বাস্তবিক ও সাহসী পদক্ষেপ নিতে পারছে, তাই এই সিটি নির্বাচনগুলো আগামী জাতীয় নির্বাচনের পথ দেখাবে বলে মনে করছে পর্যবেক্ষক মহল।

অনেক দিন ধরেই নির্বাচন কমিশনের স্বশাসন ও স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বারবার এবং তার যথেষ্ট কারণও আছে। কাজী হাবিবুল আওয়াল কমিশনের সেটা জানা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক মহল গরম। এতে ঘি ঢালছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক মহলও।

একটা প্রশ্ন উঠছে যে সবাইকে সন্তুষ্ট করা কি নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব? সেটা সবাই চায়, কিন্তু এটি এক অসম্ভব প্রচেষ্টা। নির্বাচন এলে আমরা বর্ণাঢ্য নির্বাচনি প্রচার প্রত্যাশা করি, কিন্তু গোটা প্রাক -নির্বাচনি প্রক্রিয়া এবং নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতিকে আমাদের রাজনীতিকরা রক্ত রঞ্জিত, উত্তেজনাপূর্ণ এবং বিদ্বেষ-বিষাক্ত করে রেখেছে। নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নেই। ভোট পরিচালনায় যে বিপুল সংখ্যক জনবল দরকার, সে পরিমাণ লোক তার নেই। ফলে তাকে পুরো নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্ভর করতে হয় নির্বাহী বিভাগের ওপর, যা কিনা রাজনৈতিক সরকারের অধীনে পরিচালিত। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্ব এখানে অনেক বেশি।

সিটি নির্বাচন দেখেই বলে দেওয়া যাচ্ছে না যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হয়ে যাবে। কারণ, আন্দোলনে থাকা বিএনপি ও তার জোটসঙ্গীরা বলে দিয়েছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে যাবে না। অন্যদিকে শাসক দলের অবস্থানও পরিষ্কার যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না, নির্বাচন হতে হবে শেখ হাসিনার অধীনেই।

তাই বলা যাচ্ছে না যে ভালো সিটি নির্বাচন সুস্থ জাতীয় নির্বাচনের পথে দেখাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক সংস্থা হলেও তার ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টিতে রাজনৈতিক দলগুলো সিদ্ধহস্ত। তাই আগামী নির্বাচনে সরকারের প্রকার কী হবে সেটি নিয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে সেই চাপ নিয়ে বা প্রতিহত করে কিংবা পাশ কাটিয়ে দেশময় একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সুনিশ্চিত করা নিঃসন্দেহে এক অতি দুরূহ কর্ম। বিশেষত নির্বাচনকে সামনে রেখে যে একটি সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে এতে করে প্রাক-নির্বাচনি সহিংসতা অনিবার্য বলেই মনে হচ্ছে। এছাড়া ভোটগ্রহণের দিন সংঘটিত পরিকল্পিত কিংবা স্বতঃস্ফূর্ত সন্ত্রাসের ওপর যথাসম্ভব লাগাম পরিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াটি নিষ্পন্ন করা কমিশনের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ।

গাজীপুর, বরিশাল বা খুলনা, বিশেষ করে গাজীপুর সিটি নির্বাচন প্রমাণ করেছে যে নিষ্ঠা ও আন্তরিকতা থাকলে রাজনৈতিক দলগুলোর চাপ ও স্থানীয় রাজনীতি অগ্রাহ্য করেও অবাধ নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব। স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও চমৎকার পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছে।

অনেক দিন ধরেই দেশের মানুষের মাঝে, বিশেষ করে তরুণ সমাজের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করার আকুলতা বা তাগিদ আছে। প্রতিটি নির্বাচনেই আমরা দেখি বিপুল সংখ্যায় নারী ভোটার লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন। এগুলো সবই ইতিবাচক দিক এবং নির্বাচনের সর্বাপেক্ষা বড় প্রাপ্তিই হলো জনসাধারণের বিপুল উৎসাহ। সেই উৎসাহ নষ্ট করে রাজনৈতিক সংস্কৃতি।

বিএনপি স্থানীয় সরকার নির্বাচন বর্জন করে চলেছে। তারা এটাও বলেছে যে নির্দলীয় সরকার না হলে সংসদ নির্বাচনও করবে না। এটি একটি বড় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। যদি বিএনপি নেতাদের কথামতো তত্ত্বাবধায়ক সরকার না হয়, এবং সে কারণে যদি বিএনপি অংশ না নেয় সেটি হবে গণতন্ত্রের জন্য বড় হুমকি। কোনও রাজনৈতিক দলের জাতীয় নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হওয়া যায় না। কিন্তু একইসঙ্গে ভাবনাও এটা যে কেন এমন হয়? বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচন কেন স্বস্তি দেয়নি সেটাও ভাবনায় আনা দরকার।

আমরা আশায় থাকি। যাবতীয় বিকৃতি ও স্খলন সত্ত্বেও বাংলাদেশে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা জনচেতনায় বদ্ধমূল হয়ে গেছে। সবাই ভালো নির্বাচন চায়, ভালো সংসদ চায়। এবং এই চাওয়াটাই গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের রক্ষাকবচ।

লেখক: সাংবাদিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ইন্দোনেশিয়ার রুয়াং আগ্নেয়গিরিতে আবারও অগ্ন্যুৎপাত,সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি
ইন্দোনেশিয়ার রুয়াং আগ্নেয়গিরিতে আবারও অগ্ন্যুৎপাত,সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি
ধর্ষণের পর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ, ৩ জন গ্রেফতার
ধর্ষণের পর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ, ৩ জন গ্রেফতার
রাজধানীতে মাদকদ্রব্যসহ গ্রেফতার ২০
রাজধানীতে মাদকদ্রব্যসহ গ্রেফতার ২০
লেভার হ্যাটট্রিকে দুইয়ে ফিরেছে বার্সা
লেভার হ্যাটট্রিকে দুইয়ে ফিরেছে বার্সা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ