X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

এত কম ভোট!

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
১৯ জুলাই ২০২৩, ১৪:৫০আপডেট : ১৯ জুলাই ২০২৩, ১৪:৫০

রাজধানীতে জাতীয় সংসদের ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে অনুমিতভাবেই আওয়ামী লীগের মনোনয়নে ‘নৌকা’ মার্কার প্রার্থী অধ্যাপক এম এ আরাফাত বিজয়ী হয়েছেন। তবে এই নির্বাচন ভোটারদের আকৃষ্ট করতে পারেনি। মাত্র ১১.৫ শতাংশ ভোট পড়েছে এই উপনির্বাচনে।

সারা দিন শান্তিপূর্ণ ভোট হলেও শেষের বেলায় প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলা এখন আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। তবে আলোচনা চলছে ভোটের এই অতি কম হার নিয়েও। প্রশ্ন উঠেছে, ভোটাররা কি তবে ভোটের গণতন্ত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন? নাকি আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে নিয়ে যেতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না অথবা সক্ষম হচ্ছেন না? কারণ, আওয়ামী লীগের নিজস্ব ভোটাররা এলেও এর থেকে ঢের বেশি ভোট পড়তো। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিএনপি নেই বলে কি ভোটারদের এই অনাগ্রহ? বিএনপি নির্বাচনে থাকলে কি ভোটাররা ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতেন? এমন অগণন প্রশ্ন।

একটা কথা বলা হয় যে উপনির্বাচনে এমনিতেও ভোট কম পড়ে। কিন্তু তিন লাখ পঁচিশ হাজার ভোটারের মধ্যে মাত্র ৩৭ হাজার ভোট দিতে এলো কেন সেটা কোনও বিশ্লেষণ দিয়েই জায়েজ করা যাচ্ছে না। একটা বিষয় পরিষ্কার যে বিএনপি এলে ভোটার বেশি আসতো। মানুষ ধরেই নিয়েছে যে নৌকা বিজয়ী হবে, তাই ছুটির দিনটি তারা পরিবারকে দিয়েছে বা বিশ্রাম করেছে। এছাড়া আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মাত্র কয়েক মাসের জন্য এই সংসদ সদস্য নির্বাচনের বিষয়টি খুব আগ্রহ ভরে নেয়নি।

তবে সামগ্রিকভাবে ভোটদানের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমছে বলেই মনে হচ্ছে। সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাসহ স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থীরা, বিশেষ করে কাউন্সিলর পদে যারা নির্বাচন করেন তারা, নিজস্ব ভোটারদের টেনে নির্বাচন কেন্দ্রে আনেন। সেখানেও এখন ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পড়ছে না।  

নির্বাচনগুলোতে ভোটারদের অনাগ্রহ সত্যিকার অর্থে আমাদের নির্বাচনি ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। নির্বাচনে ভোটারদের উপস্থিতির হতাশাব্যঞ্জক এই চিত্র আমাদের গণতন্ত্রকে দুর্বল করে দিচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এ নিয়ে কথা বললেও নির্বাচন কমিশন কতটুকু ভাবছেন সেটা বোঝা যাচ্ছে না। ভোটারদের এই অনাগ্রহের দায় নিতে নির্বাচন কমিশন বেশ কয়েকবারই দায়ী করছে রাজনৈতিক দলগুলোকে। অন্যদিকে শাসক দল আওয়ামী লীগ এ নিয়ে চিন্তিত নয়, কারণ তার প্রার্থীরা জিতেই চলেছেন।

কিন্তু ভাবাটা জরুরি। দলের নেতাদের মধ্যে ভোটকেন্দ্রে ভোটার টানার মতো আলাদা উদ্যোগ না থাকলে দেশের নির্বাচনি ব্যবস্থার ক্ষতি তো হচ্ছেই, রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ নিজের ক্ষতি হচ্ছে, ভোটারদের কাছ থেকে দল বিচ্ছিন্ন হচ্ছে এবং প্রার্থীরা বিতর্কিত হচ্ছেন।

‘নির্বাচক’দের মধ্যে যে একটা অনীহা দেখা যাচ্ছে তার কারণ কী কী এবং ভোট দেওয়ার হার বাড়ানোর জন্য কোন পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তার উপায় বের করার চেষ্টা করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। গণতন্ত্রে একজন মানুষ নানা কারণে ভোট নাও দিতে চাইতে পারেন। কিন্তু তাই বলে কি এমন অনাগ্রহ তৈরি হবে যে মাত্র ১১ শতাংশের ভোটের কিছু অংশ পেয়ে একজন মানুষ আইন প্রণেতা হবেন?

অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে মোট ভোট পড়েছিল ৮৭ শতাংশ। এর আগের সংসদ নির্বাচনে ৭৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ ভোট পড়েছিল। অর্থাৎ ভালো নির্বাচনগুলোতে গড়ে ৭০ শতাংশ ভোট পড়ে। কমবেশি বা একটু এদিক-ওদিক হলেও মোটামুটি দেখা গেছে ভোটদানের হার প্রায় এ রকমই। এর অন্যতম কারণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলে ভোটারদের আগ্রহ বাড়ে।

একজন স্থানীয় সরকার গবেষক আমাকে বলেছেন, শহুরে উচ্চবিত্ত, উচ্চ-মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণি নির্বাচনের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। বিদ্বেষমূলক রাজনৈতিক চর্চা, কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রার্থী ও দলের একচ্ছত্র আধিপত্য, নির্বাচনের মাঠে গোলযোগের আশঙ্কা, নানা প্রকার নেতিবাচক প্রচারে তারা আর আগ্রহী থাকছে না। এদের জন্য কি স্মার্ট বাংলাদেশ আনলাইনে ভোটের ব্যবস্থা করতে পারে? বিষয়টি ভেবে দেখতে পারে কমিশন। রিমোট ভোটিংয়ে প্রযুক্তির সাহায্যে বাড়ি থেকে দূরে থেকেও ভোট দেওয়া যাবে।

অবশ্য আমাদের মধ্যে প্রযুক্তিভীতি এবং বিরোধিতা আছে। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) নিয়ে কম বিতর্ক হয়নি। ইভিএমের একটি ভালো দিক এই যে  ভোটকেন্দ্রে অন্তত ভোটারকে চিহ্নিত করা যায় যিনি ভোট দিতে এলেন তিনি আসল ভোটার কিনা। এবং আমরা জানি এ কথাও বলা হবে যে প্রযুক্তিনির্ভর যন্ত্র দিয়ে নির্বাচন হলে তাতে নির্বাচন কমিশনের কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না, থাকে কিছু প্রযুক্তিবিদের, যারা দূর থেকেও এই যন্ত্রগুলো চালাতে পারবেন। তবু বিষয়টি ভেবে দেখা যেতে পারে।

বলা হচ্ছে, কেবল সাধারণ ভোটাররাই ভোটদানে আগ্রহ হারাচ্ছেন তা নয়, দলের কর্মী সমর্থকরাও ভোট দিতে আসছে কম। তবে কি আওয়ামী লীগই আগ্রহ হারালো নির্বাচনে?

লেখক: সাংবাদিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
গরমে মরে যাচ্ছে শাকসবজি গাছ, উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা চাষিদের
গরমে মরে যাচ্ছে শাকসবজি গাছ, উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা চাষিদের
টিভিতে আজকের খেলা (৩০ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৩০ এপ্রিল, ২০২৪)
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ