X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

মশা প্রতিপালন

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
২৩ আগস্ট ২০২৩, ১৮:০০আপডেট : ২৩ আগস্ট ২০২৩, ১৮:০০

গত ২০ আগস্ট ছিল বিশ্ব মশা দিবস। ১৯৩০ সাল থেকে প্রতিবছর দিনটি পালিত হচ্ছে। ব্রিটিশ চিকিৎসক রোনাল্ড রস ১৮৯৭ সালের ২০ আগস্ট ম্যালেরিয়া রোগের কারণ যে মশা সেটি আবিষ্কার করেন। এই আবিষ্কারের জন্য তিনি পরে চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পান।

এটা কোনও খবর নয়। খবর হলো মশার দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পরিচিতি। মশারা সংখ্যায় বেশি, যদিও আমাদের জনসংখ্যাও কিছু কম নয়। বর্ষা এলেই মশাবাহিত রোগ নিয়ে কথাবার্তা বলে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। গত কয়েক বছর ধরেই মশার কামড়ে সৃষ্ট ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বাড়ছে, এবার সব রেকর্ড ছাড়িয়ে বড় জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। শুধু ঢাকায় নয়, সারা দেশে। আক্রান্তের পাশাপাশি মৃতের সংখ্যাও রেকর্ড ছাড়িয়েছে।

বিশিষ্ট কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার তাঁর এক লেখায় লিখেছেন, উষ্ণ-আর্দ্র আবহাওয়া, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতা ও মানুষের অসচেতনতার কারণে বাংলাদেশ মশার প্রজননের উপযুক্ত ক্ষেত্র হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো এমন আবহাওয়া তো পাশের পশ্চিমবঙ্গেও আছে, সেখানে মশা কমল কীভাবে? ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এলো কী করে?

উত্তরটা সহজ– আমরা মশা মারতে পারি না, লালন করি। সিটি করপোরেশন এবং পৌরসভাগুলোর প্রধান কাজ মশা মারা ও ময়লা পরিষ্কার করা। দুটোতেই ব্যর্থ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীন এই প্রতিষ্ঠানগুলো। শুধু ডেঙ্গুর জন্য দায়ী এডিস মশা নয়, কোনও মশাই নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না এই মন্ত্রণালয়।

ভয়াবহ অবস্থা। ডেঙ্গুর থাবায় এখন মশার বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। কিন্তু মশার বিস্তার কখনোই থামানো যায়নি বা থামানো হয়নি। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসাবাড়িতে দিনের বেলায়ও মশারি টানিয়ে রাখতে হয়। মশার যন্ত্রণা থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে প্রতিবছর এ খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়, কিন্তু কাজের মান বাড়ে না।

মন্ত্রী ও মেয়ররা শুধু কথাই বলেন, মশা মারার কোনও ব্যবস্থা করেন না। মশা মরে না, কারণ তারা যে ওষুধ নিয়ে আসেন সেই ওষুধের মধ্যেও দুর্নীতি হয়, যার কারণে সে ওষুধ দ্বারা মশা নিধন হয় না। সম্প্রতি ঢাকা উত্তর সিটি করপো‌রেশনে সরবরাহ করা মশার লার্ভা নিধনের জৈব কীটনাশক বিটিআই (বাসিলাস থুরিনজেনসিস ইসরায়েলেনসিস) আমদানিতে প্রতারণার বিষয় প্রমাণিত হয়েছে। আর সে জন্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মার্শাল এগ্রোভেট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে ডিএনসিসি। এই কোম্পানি সরবরাহকৃত পাঁচ হাজার কেজি বিটিআই বেস্ট কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লি., সিঙ্গাপুরের উৎপাদিত এবং তাদের কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে মর্মে উল্লেখ করা হলেও পরে প্রমাণিত হয় যে এগুলো নিম্নমানের চীনা ওষুধ। শাস্তি বলতে শুধু এই কোম্পানিকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

কিছু কিছু জায়গায় ফগার মেশিন দিয়ে ধোঁয়া উড়াতে দেখা যায় সিটি করপোরেশনের কর্মীদের। কিন্তু এতে মশা মরে না। অনেক এলাকায় মশক নিধনকারী কর্মীদের দেখা যায় না। অভিযোগ আছে অনেকেই করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট অঞ্চল থেকে ওষুধ নিয়ে বাইরে বিক্রিও করে দেন। আবার অনেক কর্মী কাজ না করে শুধু হাজিরা দিয়ে বেতন-ভাতা উত্তোলন করে নেন। অভিযোগ উঠেছে, প্রতিদিন সকাল-বিকাল দুই বেলা বিষাক্ত কীটনাশক ছিটানোর কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। আবার এ কথাও বলা হয় যে মশা মারার যন্ত্র বেশিরভাগ সময় নষ্ট থাকে।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি মেয়রগণ যতই র‍্যালি করুন, সেলিব্রিটিদের দিয়ে প্রচারাভিযান পরিচালনা করেন না কেন, আসল কাজ মশা নিধন। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া হয়নি কখনও। কাজের কাজ তেমন কিছু হচ্ছে না। হচ্ছে বিক্ষিপ্তভাবে লোক দেখানো অকার্যকর কার্যক্রম। মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে সীমাবদ্ধতা, অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে সারা দেশে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছে, যা লক্ষাধিক মানুষের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়া এবং দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যুর কারণ। তাই মশা দিবসের দুই দিন পর পত্রিকায় শিরোনাম হয় দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে এবারই ডেঙ্গুতে বেশি আক্রান্ত।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে পাশের কলকাতা বড় সাফল্য পেলেও ঢাকা কেন পারছে না, এমন কথা বারবার উঠছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলছে, এডিশ মশা নিধনে মানহীন কীটনাশক ব্যবহার, ডেঙ্গুর প্রকৃত চিত্র চিহ্নিত, নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে সংশ্লিষ্ট দফতর ও বিভাগের মধ্যে সমন্বয়, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ঘাটতি এবং ক্রয় থেকে নিধন পর্যন্ত প্রতিপদে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে মানুষের কাছের জনপ্রতিনিধি কাউন্সিলররা। এদের মাধ্যমেই জনগণকে সম্পৃক্ত করে একটা সামাজিক আন্দোলন তৈরি করা যেত। সেটাও হয়নি।

আরেকটি বিষয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং সিটি করপোরেশনকে মাথায় রাখা দরকার, মশা নিধন কোনও মৌসুমি কাজ নয়। সারা বছরের কাজ। মানুষ কেন সচেতন না, এ কথা বহুবার বলা যাবে। বাস্তবতা হলো মশা মারতে হবে। প্রতিটি ওয়ার্ডে মশাবাহিত রোগ ঠেকাতে সচেতনতামূলক অভিযান সারা বছরই কার্যকর রাখতে হবে।

লেখক: সাংবাদিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
ইন্দোনেশিয়ার রুয়াং আগ্নেয়গিরিতে আবারও অগ্ন্যুৎপাত,সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি
ইন্দোনেশিয়ার রুয়াং আগ্নেয়গিরিতে আবারও অগ্ন্যুৎপাত,সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি
ধর্ষণের পর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ, ৩ জন গ্রেফতার
ধর্ষণের পর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ, ৩ জন গ্রেফতার
রাজধানীতে মাদকদ্রব্যসহ গ্রেফতার ২০
রাজধানীতে মাদকদ্রব্যসহ গ্রেফতার ২০
লেভার হ্যাটট্রিকে দুইয়ে ফিরেছে বার্সা
লেভার হ্যাটট্রিকে দুইয়ে ফিরেছে বার্সা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ