X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

এলিভেটেড পরিবহন ব্যবস্থা

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২:৪৬আপডেট : ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৭:৫৬

শৃঙ্খলা এই নগরীতে আশা করাই ভুল হয়তো। কোনও মহানগরের আসল পরিচয় তার পরিবহন ব্যবস্থায়। তার কারণ নাগরিক জীবনে ব্যস্ততা অত্যন্ত বেশি। যত দিন যাচ্ছে ততই বাড়ছে এই ব্যস্ততা। বাড়ছে মানুষের সময়ের দাম। এমন এক অবস্থায় গন্তব্যে দ্রুত পৌঁছনোটা অত্যন্ত জরুরি। মহানগরীর সরকারি পরিবহন ব্যবস্থাটি সেই কবে উঠে গেছে। এখন আছে বেসরকারি ব্যবস্থার হাতে তুলে দেওয়া এক চরম বিশৃঙ্খলা ব্যবস্থা।

প্রতিদিন রাস্তায় বের হওয়া থেকে শুরু করে ঘরে ফেরা পর্যন্ত একজন নাগরিককে যতটা সময় রাস্তায় কাটাতে হয়, তার প্রায় প্রতিটি মুহূর্তই যানজট আর সড়ক বিশৃঙ্খলায় কাটে।

যানজটের কারণে যে বহুমুখী সমস্যা সৃষ্টি করছে তার প্রতিটি হিসাব করা সম্ভব হয় না। তবে একটি তথ্য হলো যে যানজটের কারণে প্রতিদিন ৫০ লাখ কর্মঘণ্টা অপচয় হচ্ছে। এ কারণে আর্থিক ক্ষতি বছরে ৩৭ হাজার কোটি টাকা বলা হচ্ছে।

ঠিক এমন এক বাস্তবতায় রাজধানীতে দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশের উদ্বোধন হলো গত শনিবার।

এ ধাপে চালু হলো হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকার কাওলা থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার দূরত্বের পথটি। ফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে এর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর ফলে রাজধানীর একটি অংশে যানজট এড়িয়ে চলাচলের পথ উন্মুক্ত হয়েছে। এর আগে চালু হয়েছে মেট্রোরেল। তার আমলেই হয়েছে নতুন সড়ক, প্রশস্ত সড়ক এবং ফ্লাইওভার।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বড় রাজনীতি করতেন বলেই ক্ষুদ্র রাজনীতি থেকে বেরিয়ে বাঙালির মননে স্বাধীন দেশের স্বপ্ন বুনেছিলেন। তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশ বড় উন্নয়ন আর বড় প্রকল্পের বাস্তবায়ন দেখছে। পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প, বড় বড় সব বিদ্যুৎকেন্দ্রের দৃষ্টান্ত চোখের সামনেই।

এত এত সরকারি প্রকল্পের পরও যে জায়গায় বাংলাদেশ একটুও আগায়নি সেটা হলো–সড়কে শৃঙ্খলা। পথে পথে বলি হচ্ছে মানুষ। বলতে গেলে এক প্রকার গণহারে ‘পথ হত্যা’ চলছে দেশে। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হয়।

রাজধানী ঢাকার গতিবেগ এখন ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটারেরও কম। সেই শহরে এখন চালু হলো দ্রুত গতির উড়াল সড়ক। তবে সেখানে মোটরসাইকেল, রিকশা, অটোরিকশা ইত্যাদি বাহনকে চলাচলের সুযোগ থাকছে না। লোকাল বাসেরও কোনও সুযোগ থাকছে না। আর অন্য কোনও পাবলিক বাহনের সুযোগও থাকবে কিনা সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না।

একটা কথা বলা হয়, ঢাকার সড়কে যথেষ্ট বাস নেই। কিন্তু তাই বলে বাস-দুর্ঘটনার কমতিও নেই। শহরজুড়ে বাসের রেষারেষি, দাপাদাপি প্রতি সেকেন্ডের ঘটনা। বাস চলার পথে যেকোনও জায়গাই যাত্রী তোলার অঘোষিত যাত্রী ছাউনি এবং যাত্রী তোলার টক্করে আরোহীদের ওপর শারীরিক নিপীড়ন নিয়মিত ঘটনা। অসংখ্য সব নামের সব পরিবহনের বাস, দেখতে একদম লক্কর-ঝক্কর। দিনের ব্যস্ততম সময়ে জনবহুল রাস্তাতেও ট্রাফিক বিধি মানে না, পথচারীদের মানুষ মনে করে না। সাথে আছে টেম্পু আর হিউম্যান হলারের মতো বাহনও। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগের ফিরিস্তি শেষ হওয়ার নয়। এরা এই শহরে সিটিং সার্ভিস হতে দেয়নি। এরা এখানে উন্নত বিশ্বের আদলে ফ্র্যাঞ্চাইজ সিস্টেম হতে দেয়নি। এরা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত উন্নত বাস সার্ভিস হতে দেয়নি। এরা এই রাজধানীতে কোনও সড়কে শৃঙ্খলা কায়েম করতে দেয়নি। এরা সারা দেশে সংসদে পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হতে দেয়নি। সড়কে নৈরাজ্য করার জন্য এই গণপরিবহনের মালিক-শ্রমিকের রয়েছে এক ভয়ংকর ঐক্য। তাই প্রশ্ন, এমন দেশে বা তার রাজধানীতে কি সড়ক শৃঙ্খলা সম্ভব?

এক কথায় উত্তর হবে ‘না’। সড়ক নৈরাজ্যকারীরা রাজনৈতিকভাবে পৃষ্ঠপোষকতা পায়। ক্ষমতা কেন্দ্রের সাথে এদের নৈকট্য। তাই ট্রাফিক পুলিশের অভিযান, কড়াকড়ি ও জরিমানা (যদি পুলিশের ক্ষমতা থাকে) এদের বেপরোয়া আচরণে রাশ টানতে পারছে না।

যানজট নিরসনে সরকার অনেক উদ্যোগ নিচ্ছে। তবে এগুলো সবই অবকাঠামোগত। নতুন রাস্তা নির্মাণ করা, আগের রাস্তা প্রশস্ত করা, ফ্লাইওভার বানানো, মেট্রোরেল করা এবং সর্বশেষ আমরা পেলাম অত্যাধুনিক এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। এতে অঞ্চলভিত্তিক গতিশীলতা বাড়বে, কিন্তু সামগ্রিকভাবে যানজট কমবে না। এর বড় কারণ রাজনীতি। সড়ক পরিবহন খাতে এক দানবীয় তাদের পেশিশক্তি। এরা এতটাই ক্ষমতাধর যে উচ্চ আদালতের  রায়ের বিরুদ্ধে গিয়ে দেশ অচল করে দেয়। এটিই একমাত্র ব্যবসা যে খাতে নৈরাজ্যের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ সড়ক গণপরিবহনের মালিক, শ্রমিক ও রাজনীতি। এই নৈরাজ্যের পক্ষে অবস্থান নিতে ডান, বাম, অতি ডান ও বাম, ক্ষমতাসীন আর ক্ষমতার বাইরের রাজনীতির কোনও বিরোধ নেই।

চকচকে বাড়িঘর, উজ্জ্বল আলো আর শপিং মল কোনও মহানগরের আসল পরিচয় নয়, সে পরিচয় তার নাগরিক পরিবহন ব্যবস্থায়। একে তো পথে ভালো বাস নেই, যে কয়েকটি দৌড়াচ্ছে সেগুলোও নিয়মভাঙা নিয়মপন্থি, এই অবস্থায় ভুক্তভোগী হচ্ছেন সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে বাসের মতো গণপরিবহন ছাড়া যাদের গতি নেই।

সড়ক পরিবহনের মালিক শ্রমিক নেতারা যা করতে চান সবই পারেন বিনা বাধায়। ক্ষমতার জোরে মালিক-শ্রমিক ঐক্যবদ্ধ হয়ে পুরো সিস্টেমকেই নিজেদের করায়ত্ত করেছে। এ কারণে যানবাহন নিয়ন্ত্রণের যেসব একেবারে মৌলিক পদ্ধতি, সেগুলোই প্রয়োগ করা সম্ভব হচ্ছে না। কোনও আইন বা নীতি বাস্তবায়ন করতে গেলেই পরিবহন ধর্মঘট করে যাত্রীদের জিম্মি করার কৌশল নেয় তারা।

ট্রাফিক পুলিশ, সিগন্যালিং সিস্টেম, জরিমানা ব্যবস্থার অনিয়ম, সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও অসক্রিয়তাও এই সমস্যার বড় অংশ। মাঝে মধ্যে এক-একটি বড় পথ-দুর্ঘটনায় একটু নড়েচড়ে বসা, একটু কড়াকড়ি হয় বটে, তবে আবার ফিরে যাওয়া হয় বেপরোয়া পদ্ধতিতে। সরকার আধুনিক স্থাপনার কথা ভেবেছে এবং আরও ভাববে, কিন্তু একই সাথে এখন দরকার এলিভেটেড পরিবহন ব্যবস্থার।

লেখক: সাংবাদিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
গরমে মরে যাচ্ছে শাকসবজি গাছ, উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা চাষিদের
গরমে মরে যাচ্ছে শাকসবজি গাছ, উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা চাষিদের
টিভিতে আজকের খেলা (৩০ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৩০ এপ্রিল, ২০২৪)
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ