X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার বিপদ

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২:০৯আপডেট : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ২২:০৯

‘বাজারে আলুর কেজি ৫০ টাকা ছুঁয়েছে, যা ১৫ দিন আগেও ছিল ৪০ টাকার নিচে। ঠিক এক বছর আগে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছিল ২৮ টাকা দরে; অর্থাৎ এক বছরে আলুর দাম ৭৮ শতাংশ বেড়েছে’।

এই খবরটি গত ৭ সেপ্টেম্বরের পত্রিকার। এর পরদিনই জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)-এর বরাতে খবর বের হলো, জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থার বৈশ্বিক খাদ্যমূল্যের সূচক গত আগস্টে দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। কারণ, চাল ও চিনির দাম বাড়লেও এর আগের মাসে বেশিরভাগ খাদ্যপণ্যের দাম তুলনামূলক বেশ কমে যাওয়ায় সার্বিক মূল্যসূচক নিম্নমুখী রয়েছে।

সারা বিশ্বে কমছে, বাংলাদেশে কেন কমছে না? আপনি বা আমি প্রশ্ন করতে পারবো, কিন্তু উত্তর আসবে না। একটা প্রবণতা আছে, জিনিসপত্রের দাম বাড়ার জন্য ইউক্রেন যুদ্ধের ওপর সব দায় চাপানোর, যেন ইউক্রেন যুদ্ধের সব দায় কেবল বাংলাদেশেরই।

আলু নিয়েই যদি কথা বলি, তাহলে দেখবো এখানে অর্থনীতির যে আসল কথা– চাহিদা এবং জোগান- সেই সূত্র এ দেশে প্রতিফলিত হয় না। সরকারি তথ্য বলছে, দেশে এ বছর আলুর উৎপাদন গত বছরের চেয়ে বেশি হয়েছে। এমনকি চাহিদার তুলনায়ও অনেক বেশি আলু উৎপাদিত হয়েছে। সে জন্য আলুর দাম বাড়ার কথা নয়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) তথ্য অনুসারে, ২০২১ সালে দেশে আলুর চাহিদা ছিল ৯৫ লাখ ৬৩ হাজার টন। সেই হিসাবে দেশে চাহিদার বিপরীতে ১৬ লাখ টনের মতো উদ্বৃত্ত হওয়ার কথা।

তাহলে কী আমরা বলবো যে অলৌকিক কারণে দাম বাড়ছে? সম্ভবত সেটাই হবে সান্ত্বনা যে দাম বাড়বেই, কারণ আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, উন্নয়ন করছি। কিন্তু উন্নয়ন বা এগিয়ে যাওয়া মানেই কী কম রোজগারে বেশি দামে পণ্য কিনা? পত্রিকা বলছে, কৃষি বিপণন অধিদফতর আলুর মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে বলেছে, একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিমভাবে আলুর দাম বাড়াচ্ছেন। তারা হিমাগার থেকে চাহিদা অনুসারে আলু খালাস করছেন না। এ ছাড়া পরিবহনের সমস্যা, ফেরি ও টোল প্লাজায় আলু বহনকারী গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পার হতে না পারাও দাম বাড়ার কারণ বলে উল্লেখ করে সংস্থাটি।

এখান থেকেই ধারণা পাওয়া যায়– সারা বিশ্বে পণ্যমূল্য কমলেও বাংলাদেশে কেন বাড়ে। দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন এক আতঙ্কের নাম। বিষয়টি সরকারও স্বীকার করছে, কিন্তু কিছু করতে পারছে না। সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) প্রধানমন্ত্রী মূল্যস্ফীতি কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু সেটা কমছে না।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, এটি বড় চ্যালেঞ্জ। তার মতে, মূল্যস্ফীতি জোর করে কমানো যায় না। কার্যকর নীতি নিতে হবে। মানুষ সেই কার্যকর পদক্ষেপটাই দেখতে চায়। যে শ্রীলঙ্কা নিয়ে এত উদ্বেগ ছিল সেখানে মূল্যস্ফীতি কমেছে, যে পাকিস্তান নিয়ে আমরা এত নিন্দাবাক্য করি, সেখানে ডিম আর গরুর মাংসের দাম বাংলাদেশের চেয়ে কম। সমস্যাটা হলো, বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতি দ্রুত বাড়ছে এবং কমার কোনও লক্ষণও নেই।

সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো– এটিকে জনগণের জন্য একটি সমস্যা হিসেবে স্বীকার না করা। আমাদের মন্ত্রী এমপিরা বাংলাদেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা নিয়ে এমন সব আজগুবি গল্প করেন, মনে হবে জিনিসপত্রের দাম যতই বাড়ুক সমস্যা নেই, মানুষ আনন্দে আছে।

কিন্তু মানুষ আনন্দে নেই। সত্যি কথা বলতে কি বাংলাদেশের বাজারে আক্ষরিক অর্থেই আগুন লেগেছে। সেটি মূল্যবৃদ্ধির আগুন। কাঁচামালের আগুন দর ও অপ্রতুলতা উৎপাদন শিল্পকে বিপাকে ফেলেছে। অন্যদিকে বেশ কিছু ক্ষেত্রে উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল বা অন্তর্বর্তী পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি হয়ে থাকে। সেটার মূল্যবৃদ্ধি দেশের বাজারে আগুন লাগিয়েছে। দাম বেড়েছে বিদ্যুৎ আর জ্বালানির। ফলে কলকারখানায় উৎপাদনের খরচ বাড়ছে। ডলারের সংকট আমদানিকৃত পণ্যকে আকাশছোঁয়া করছে। জ্বালানি দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি সামগ্রিক মূল্যস্তরকে ঠেলে তুলেছে, যার কারণে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের।

সব মিলে সমস্যা বেড়েছে। একটা কথা আমরা জানি, বাংলাদেশের মতো দুর্বল শাসন ব্যবস্থায় মূল্যস্ফীতির চাকা একবার গড়াতে শুরু করলে সেটা নিয়ন্ত্রণ করা অতি কঠিন। কিন্তু তবু কিছু পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব। প্রথমেই যেটা দরকার তা হলো জ্বালানি পণ্যের দাম কমানো। কারণ বিশ্ববাজারে এখন সেটার দাম কম। এবং দাম বাড়ানোর সময় সরকার কথা দিয়েছিল দাম কমলে কমবে। আরেকটি হলো ভোগ্যপণ্যের বাজারে একচেটিয়াত্ব কমানো। ডিম হোক বা চাল, ডাল, তেল, চিনি হোক– গুটি কয়েক কোম্পানির হাতে সব নিয়ন্ত্রণ এবং এদের হাতেই ক্ষমতা কাঠামো। যারা ব্যবসা করছে তারাই আবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায়। এর অবসান কী করে হবে সেটা সরকার ভাবুক। কারণ, সরকারের একটি প্রতিযোগিতা কমিশন আছে।

খাদ্যদ্রব্যের দাম কমাতে হবে। ২০০৮ এবং ২০১১ সালে আফ্রিকা ও এশিয়ার ত্রিশটিরও অধিক দেশে খাদ্য-দাঙ্গা সৃষ্টি হয়েছিল। ‘আরব বসন্ত’-এর মতো রাজনৈতিক অভ্যুত্থানেরও অন্যতম প্রত্যক্ষ কারণ ছিল খাদ্যপণ্যের বেলাগাম মূল্যস্ফীতি।

খাদ্যাভ্যাসে প্রোটিন, ভিটামিন ও বিবিধ পুষ্টিগুণসম্পন্ন অণুখাদ্যের মাত্রা কমতে থাকলে তার প্রভাব পড়ে পরিবারের সদস্যদের ওপরে। পুষ্টিকর খাবারের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পরিলক্ষিত হয় ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর। আমরা কী তা ভাবছি?

লেখক: সাংবাদিক

 

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
মাটি কাটার সময় ‘গরমে অসুস্থ হয়ে’ নারী শ্রমিকের মৃত্যু
মাটি কাটার সময় ‘গরমে অসুস্থ হয়ে’ নারী শ্রমিকের মৃত্যু
সাকিবের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সাক্ষাৎ
সাকিবের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সাক্ষাৎ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ