X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

অক্টোবর আন্দোলন

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৯:৪৮আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৯:৪৮

সেপ্টেম্বর গেছে। এখন অক্টোবরকেই বলা হচ্ছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গতিপথ নির্ধারণ করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাস। এ মাসেই বোঝা যাবে বিএনপির দাবি অনুযায়ী নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, নাকি আওয়ামী লীগ তার মতো করে শেখ হাসিনা সরকারের অধীনেই নির্বাচন করে ফেলবে। করে ফেললে কি বিএনপি সেই নির্বাচনে যাবে নাকি যাবে না?

ইউরোপীয় ইউনিয়ন জানিয়ে দিয়েছে সে কোনও পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না। কারণ হিসেবে সংঘাতের কথা উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠাবে কিনা, তা যাচাই করতে একটি প্রতিনিধিদল আসছে অক্টোবরে। দেশটির রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউট (আইআরআই) ও ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ইনস্টিটিউট (এনডিআই) যৌথভাবে স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রাক-নির্বাচন সমীক্ষা মিশন (পিইএএম) পরিচালনা করবে। ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদল এবং তাদের সহায়তাকারীরা আগামী ৭ থেকে ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করবেন। তাদের এই সফরের মাধ্যমে আগামী নির্বাচন প্রশ্নে মার্কিন মনোভাবও স্পষ্ট হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

রাজপথের প্রধান বিরোধী দলসহ ৩০টিরও অধিক দল এখন আন্দোলনে। তারা শেখ হাসিনা সরকারের পতন চায় এবং নির্বাচন চায় নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। আগের রোডম্যাপ অনুযায়ী নির্বাচন হওয়ার কথা ২০২৪ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে।

তফসিল হয়ে গেলে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন দলের নির্বাচনের যে তোড়জোড় শুরু হবে সে পরিস্থিতিতে মাঠের আন্দোলন জমিয়ে তোলা কঠিন হতে পারে। তাই বিএনপির কাছেও অক্টোবর এক গুরুত্বপূর্ণ মাস। দলটির নেতারা বলছেন, অক্টোবরেই আন্দোলনের সফলতা দেখতে চান তারা। এমন চিন্তা থেকে যুগপৎ আন্দোলনকে অক্টোবরের মধ্যেই চূড়ান্ত ধাপে নিতে কৌশল ঠিক করছে দলটি। বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে এমন বার্তা দেওয়া হয়েছে সারা দেশে দলের নেতাকর্মীদের।

বিএনপির চাওয়া পরিষ্কার এবং সেটা হলো সরকার যেন এবার এবার বিনা চ্যালেঞ্জে একতরফা নির্বাচন করতে না পারে। কিন্তু মাঠের আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারকে কতটা টলানো যাবে, সেই সন্দেহও রয়েছে বিএনপির ভেতরে। এবং সে কারণেই দলের অনেক বেশি নির্ভরতা এখন মার্কিন সরকারের ওপর।

বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ক্ষুণ্ন করার জন্য দায়ী বা জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) দেশটির স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ খবর আসার পর থেকেই উদ্বেলিত বিএনপি, ইসলামিক ও বামপন্থি দলগুলো। তারা মনে করছে, এই ভিসা নিষেধাজ্ঞার ভয়ে নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং আমলাতন্ত্র বড় ঝুঁকি নেবে না বিরোধী দলের বিরুদ্ধে।

কিন্তু বিষয়টি কোন পথে যাবে সেটা পরিষ্কার হয়নি এখনও। তবে সংঘাত আর সহিংসতার একটা পথে যে বাংলাদেশ সেটা বোঝা যাচ্ছে। রাজনীতির খোঁজ-খবর যারা রাখেন তারা ভাবছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিতে এ ধরনের বিধিনিষেধ সত্যিই কাজ করবে তো?

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অবাধ, সুষ্ঠু, সত্যিকারের নিরপেক্ষ এবং সর্বোপরি সব দলের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত নির্বাচন। সেটা নিয়ে প্রতি পাঁচ বছর পরপরই সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে দেশে এবং বিদেশিরাও নেমে পড়েন তাদের মতো করে।

অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, বিদেশিদের সহায়তার চাইতে আন্দোলনের গতিবেগ অনেক বেশি কার্যকর রাজনীতির জন্য। ১ সেপ্টেম্বর ছিল বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এই প্রতিষ্ঠার মাসটিকে বিবেচনায় রেখে দলটি সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কেন্দ্রিক কর্মসূচির পরিকল্পনা করে। এরপর সেপ্টেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে এক দফার আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামার কথা জানায়। কিন্তু তেমনভাবে সেটা আলোড়ন তুলতে পারেনি। তাই এখন বলছে অক্টোবরেই যা করার করতে হবে।

গণমিছিল, পদযাত্রা ও সমাবেশের মতো যুগপৎ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে সেপ্টেম্বরে। তাহলে অক্টোবরে কী হবে? প্রায় একইরকম কর্মসূচির কথা বলছে দলটি। সচিবালয়, নির্বাচন কমিশন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ঘিরে অবস্থান ও অবরোধ কর্মসূচির কথাও শোনা যাচ্ছে।

সেই জুলাই মাসেই আমরা জেনেছিলাম চূড়ান্ত আন্দোলন সম্পর্কে। ১২ জুলাই থেকে টানা কিছু কর্মসূচিও পালিত হয়েছে। বেশি কিছু সহিংসতাও হয়েছিল। বলা হচ্ছিল আন্দোলনের মাঠে টানা কর্মসূচি দেওয়ার বিশেষ ক্ষণ চলে এসেছে। সে ক্ষণ তাহলে এখনও চলছে।

এখন অক্টোবর মাসকেই আন্দোলনের আসল মাস বলতে চায় দলটি। দল কিছুটা চাঙা এ কারণে যে দলের কর্মসূচি ও সমাবেশগুলোতে অংশগ্রহণ বাড়ছে। তবে এরা মূলত দলের নেতাকর্মী। সাধারণ মানুষ এখনও বিএনপির আন্দোলনে সরাসরি সেভাবে সম্পৃক্ত হচ্ছে না। এছাড়া মাঠের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ সাংগঠনিকভাবেও পরীক্ষিত শক্তিশালী দল। সরকারের হাতে রয়েছে পুলিশ ও প্রশাসনের পুরো সমর্থন।

বিএনপি আন্দোলনে জিততে চায়। ক্ষমতার বাইরে আছে ১৬ বছর ধরে। তাই সরকার যদি বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন করে ফেলতে পারে তাহলে একেবারে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে দলটি। এবং সেটি মাথায় রেখে অক্টোবরে আন্দোলনের সফলতা চায় বিএনপি।

লেখক: সাংবাদিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
আজকের আবহাওয়া: তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস
সাত দিনে হিট স্ট্রোকে ১০ জনের মৃত্যু: স্বাস্থ্য অধিদফতর
সাত দিনে হিট স্ট্রোকে ১০ জনের মৃত্যু: স্বাস্থ্য অধিদফতর
ইসরায়েলের নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নেবে হামাস, আশা যুক্তরাষ্ট্রের
ইসরায়েলের নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব মেনে নেবে হামাস, আশা যুক্তরাষ্ট্রের
রাজশাহীতে তীব্র গরমে মরছে মুরগি, আতঙ্কে খামারিরা
রাজশাহীতে তীব্র গরমে মরছে মুরগি, আতঙ্কে খামারিরা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ