X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

শনিবারের ভাবনা

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
২৫ অক্টোবর ২০২৩, ১৭:২১আপডেট : ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ১৭:২১

অক্টোবর আন্দোলন বলে বিএনপি ও তার মিত্রদের দিক থেকে যে আওয়াজটা উঠেছিল তার সর্বশেষ প্রদর্শনী হবে ২৮ অক্টোবর, শনিবার। একটা বেশ টান টান উত্তেজনা আছে এই দিনটিকে ঘিরে। সর্বত্রই আলোচনা কী হবে এই দিনে?

গত ১৮ অক্টোবর মির্জা ফখরুল যখন নতুন এই দিনের মহাসমাবেশের ঘোষণা দেন তখন বলেছিলেন এদিন থেকে শুরু হবে তাদের মহাযাত্রা এবং সরকারের পতনযাত্রা। তাই দিনটিকে সবাই সিরিয়াসলি নিয়েছে। মানুষ যেমন করে ভাবছে, তেমনি সরকার এবং শাসক দল আওয়ামী লীগও ব্যাপক প্রস্তুতির কথা জানাচ্ছে, যদিও পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিতে যাচ্ছে না আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বাকি শরিকরা।

বিএনপি নেতারা বলছেন, সরকারের হুঁশিয়ারি, বাধা, পুলিশি ধরপাকড়, মামলা এসব উপেক্ষা করেই বিএনপি সেই কর্মসূচির ব্যাপারে প্রস্তুতি নিচ্ছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে, ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিএনপি ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বসে পড়তে পারে, এমনটা সন্দেহ করছে আওয়ামী লীগ। ভয় আছে যে একবার বসে গেলে বিএনপির নেতাকর্মীরা ঢাকা অচল করে দিয়ে সরকারি স্থাপনা ও গুরুত্বপূর্ণ দফতর ঘেরাও করতে পারে। তাই বিএনপিকে সর্বাত্মকভাবে ঠেকানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ক্ষমতাসীন দল।

দিনটি যে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে সবার সামনে আসছে তার প্রমাণ দিলেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। গত রবিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন রাষ্ট্রদূত। পিটার হাস এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে ২৮ অক্টোবর বিএনপির কর্মসূচির কারণে রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেওয়া হবে কিনা, তা জানতে চেয়েছেন বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন। তবে মার্কিন দূতাবাস এক বিবৃতিতে রাস্তা বন্ধ সংক্রান্ত বিষয়ে কোনও আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছে।

অক্টোবরেই সরকারের পতন- এমন একটা বার্তা এসেছিল বিএনপি থেকে। সে হিসেবে এখন এই অক্টোবরের সর্বশেষ আন্দোলন ২৮ তারিখ। বিএনপিপন্থি প্রবাসী ইউটিউবারদের কেউ কেউ বলছেন, ২৮ তারিখে শুরু হচ্ছে চূড়ান্ত পর্বের আন্দোলন এবং ৩ নভেম্বর সরকারের পতন ঘটবে।

মাস, সপ্তাহ, দিন তারিখ দিয়ে সরকারের পতন ঘটানো বাংলাদেশের ইতিহাসে দেখা যায়নি। এবার তাহলে দেখা যেতে পারে বলে মনে হচ্ছে। সেই আশাতেই হয়তো ৩ নভেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশের ডাক দিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। হয়তো বিএনপি-জামায়াতসহ মিত্রদেরও কর্মসূচি দেখা যেতে পারে এই দিন।

আগামী ২৮ অক্টোবরকে ঘিরে যখন এমনই এক সংশয় আর শঙ্কার পরিবেশ তখন বিএনপি মহাসচিব জানালেন, সেদিন ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ থেকে সড়কে বসে পড়ার মতো কোনও কর্মসূচি থাকছে না। এতে উত্তেজনার পারদ খানিকটা কমেছে বলতে হবে। কিন্তু সংঘাত আর সহিংসতার পথ থেকে সরছে কী দেশ? জনমনের প্রশ্ন এটাই।

মির্জা ফখরুল যে মহাযাত্রার কথা বলেছিলেন তার কোনও স্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। বলেছিলেন এই মহাসমাবেশ থেকে, “আমাদের মহাযাত্রা শুরু হবে। ইনশাআল্লাহ তারপরে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আর থেমে থাকবো না।” এরপর আওয়ামী  থেকেও পাল্টা মহাযাত্রার কথা বলা হলো। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, ২৮ অক্টোবর তারাও সমাবেশ করবেন।

গত বছর ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে এমন একটি অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল। সেই সমাবেশের আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানসহ এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, ‘১০ ডিসেম্বরের পর দেশ চলবে খালেদা জিয়ার কথায়’। আমানের এই বক্তব্য বেশ সাড়া ফেলে, সরকার নড়েচড়ে বসে, দল হিসেবে আওয়ামী লীগ প্রতিক্রিয়া জানায় এবং সংবাদমাধ্যমে বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন আসতে থাকে। তবে নির্ধারিত স্থান নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে না পেরে গোলাপবাগে আরেকটি কেবল সমাবেশই করে বিএনপি।

২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পরিণতি ১০ ডিসেম্বরের মতো হবে কিনা সেটা জানা নেই। তবে বিএনপির সামনে আন্দোলন সফল করা ছাড়া আর কোনও বিকল্প নেই। নির্বাচন কমিশন যেহেতু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দ্বারপ্রান্তে, সেহেতু বিএনপির জন্য এটাই সরকারকে চাপে ফেলার শেষ সুযোগ। কারণ, একবার তফসিল ঘোষিত হয়ে গেলে প্রান্তিক পর্যায়ের সাধারণ মানুষ আর আন্দোলন নিয়ে ভাববে না। তারা ব্যস্ত হয়ে পড়বে প্রার্থীদের পিছনে।

বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান এক টেলিভিশন টকশোতে বলেছেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপির খেলা শেষ। কারণ কোনও প্রকার প্রস্তুতি ছাড়া বিএনপি এই কর্মসূচি দিয়েছে।

তবে এতটা হালকাভাবে দেখা মনে হয় ঠিক হচ্ছে না। বিএনপির অবশ্যই প্রস্তুতি আছে এবং ভেবেচিন্তেই পথে নেমেছে। দেখা যাচ্ছে জামায়াত বিএনপির সাথে সমান্তরালভাবে আন্দোলনে নেমেছে। ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দিলো বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং সেটা তারা করবে সেই শাপলা চত্বরে। আরও বেশ কিছু ইসলামী দলও সুযোগ খুঁজছে পরিস্থিতি সহিংস করে তোলার। তাই সরকারের জন্য ২৮ অক্টোবর এবং সে দিনটির পরের দিনগুলো কঠিন রাজনৈতিক পরীক্ষা।

লেখক: সাংবাদিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
টিভিতে আজকের খেলা (৩০ এপ্রিল, ২০২৪)
টিভিতে আজকের খেলা (৩০ এপ্রিল, ২০২৪)
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
রাজশাহীতে গরমে নাকাল প্রাণিকুল, মারা যাচ্ছে পাখি
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
মাটি কাটার সময় ‘গরমে অসুস্থ হয়ে’ নারী শ্রমিকের মৃত্যু
মাটি কাটার সময় ‘গরমে অসুস্থ হয়ে’ নারী শ্রমিকের মৃত্যু
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ