X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৫ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগ কী করছে, কী করবে?

জোবাইদা নাসরীন
২৬ নভেম্বর ২০২৩, ২১:০২আপডেট : ২৬ নভেম্বর ২০২৩, ২১:০২

নির্বাচন নিয়ে অনেকটাই এগোচ্ছে সরকারি দল আওয়ামী লীগ। অন‍্যদিকে এই নির্বাচনের বিরুদ্ধে দেশে বিরোধী দলের ডাকে চলছে অবরোধ এবং কখনও-সখনও হরতাল। অতি তড়িঘড়ি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করার চেষ্টা করছে। বেশ কয়েকটি চাকরির পরীক্ষাও স্থগিত ঘোষণা করেছে। কেউই ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। কিন্তু ইতোমধ‍্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি হিসেবে প্রার্থী হওয়ার জন‍্য আওয়ামী লীগ ফরম বিক্রি করেছে। ২৬ নভেম্বর (রবিবার) ৩০০ টি আসনে চূড়ান্ত মনোনয়ন তালিকাও তারা প্রকাশ করেছে।

গণমাধ‍্যমে প্রকাশিত সূত্র অনুযায়ী, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে সরাসরি ৩০০টি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন মোট ৩ হাজার ৩৬২ জন। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে (২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত) ৪ হাজার ২৩ জন দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছিল। সে হিসাবে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম আগেরবারের চেয়ে ৬৬১টি কম বিক্রি হয়েছে। এক একটি আসনে গড়ে প্রায় ১১ জন করে ফরম কিনেছিলেন। এমনকি যেখানে বাঘা বাঘা নেতা রয়েছেন এবং যাদের মনোনয়ন অনেকটাই নিশ্চিত, সেখানেও ফরম  তুলেছেন অনেকেই। কারণ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কয়েক দিন আগেই বলেছেন, বর্তমান সংসদ সদস্য অনেকেই এবার মনোনয়ন পাবেন না। কারণ, সবারই পারফরম্যান্স তিনি মূল‍্যায়ন করছেন। তার এই বক্তব‍্য অনেককেই উৎসাহিত করছিল নতুনভাবে। তবে শুধু যে মনোনয়নপত্র কিনেই সম্ভাব‍্য প্রার্থীরা প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে দেখা করছেন, তদবির করছেন চূড়ান্ত মনোনয়ন পাওয়ার লক্ষ‍্যে।
 
এটি কিন্তু একদিকে আওয়ামী লীগের জন‍্য খুব বেশি ভালো সংবাদ নয়। এখন অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন যে নির্বাচন করার অধিকার তো সবারই আছে। নিশ্চয়ই রয়েছে। তবে গত কয়েক বছরে বিভিন্ন নির্বাচনে যেখানে বিরোধী দল প্রায়ই অনুপস্থিত থেকেছে সেখানে আমরা দেখেছি আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল এবং সেখানেও দলীয় প্রার্থীকে বের করতে অনেকটাই হিমশিম খেতে হয়েছে।

দেশে কার্যকর বিরোধী দল না থাকা এবং তাদের কর্মসূচিতে বাধা, হামলা, মামলা করে তাদের রাজপথে না থাকতে দেওয়ার সমস‍্যাই হলো নিজ ঘরে বিরোধী দল তৈরি করা, যা আওয়ামী লীগ কিছুটা করতে সমর্থ হয়েছে। যার কারণে প্রধানমন্ত্রী এবং দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে বারবার বলতে শোনা যায়, দলের মনোনীত প্রার্থীর বিরোধিতা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব‍্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে অতীতের কয়েকটি নির্বাচনে দুই চার জনের বিরুদ্ধে এই ধরনের ব‍্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। তবে পরে তাদের আবার দলে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।

তবে এ কথা অবশ‍্যই বলা যায় যে এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে আওয়ামী লীগের জন‍্য চ‍্যালেঞ্জ একরকম। আবার যদি বিএনপি না আসে তাহলেও বেশ কিছু চ‍্যালেঞ্জ রয়েছে, যা দলকে টপকাতে হবে। এর মধ‍্যে সবচেয়ে বড় চ‍্যালেঞ্জ হবে দলীয় প্রার্থিতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকানো। আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করতে পারেন, বিএনপি নির্বাচনে না এলে বিদ্রোহী প্রার্থী জয়লাভ করলেও সমস‍্যা নেই। কারণ, তারাও দলেরই নেতাকর্মী। কিন্তু সেটির ক্ষেত্রে সংঘাত বা সহিংসতা হবে না এমন কথা বলা যায় না। বরং সেগুলো হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এর পাশাপাশি জোটভুক্ত নির্বাচনে অন‍্যান‍্য দলের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকতে পারে, সেখানেও জোটভুক্ত দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের সমস‍্যা হতে পারে। কেননা, গত কয়েকটি নির্বাচনে কেউই আসলে ছাড় দিতে চাচ্ছেন না। কারণ, সবাই জেনে গেছে বিএনপি নির্বাচনে না এলে আওয়ামী লীগ বা জোটের মনোনয়নই আসল নির্বাচন, এটার মধ‍্য দিয়েই নিশ্চিত হয়ে যায় সংসদ সদস্য হওয়া।

তাই এখন এ সুযোগ কেউই হাতছাড়া করতে চাচ্ছে না। সবাই এখন এমপি হতে চায়।

এখনও ইসলামি দলগুলো আওয়ামী লীগের সঙ্গে যাবে কিনা সেই বিষয়ে খোলাসা করেনি। যদিও কয়েকটি দল ইতোমধ‍্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগ্রহ দেখিয়েছে। সেক্ষেত্রে তারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবেঁধে, নাকি এককভাবে নির্বাচন করবে সেই বিষয়ে এখনও পরিষ্কার করে বলা কঠিন। অন‍্যদিকে কিছু দল সরাসরি বিএনপির সঙ্গে এখন জোটে না থাকলেও তারা বিএনপির অবরোধ-হরতাল কর্মসূচিকে সমর্থন দিচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগ গত দুই বছর ধরে বিএনপি জোটে থাকা ইসলামি দলগুলোকে বিএনপি জোটছুট করতে পেরেছে। জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনহীন হলেও এখন বিএনপির কর্মসূচির সঙ্গেই সমর্থন দিচ্ছে।

বাম দলগুলোর মধ‍্যকার ভাঙন এবং তাদের নির্বাচনি তফসিল প্রত‍্যাখ‍্যানও আওয়ামী লীগের জন‍্য কিছুটা হতাশার। বিশেষ করে বেশ কিছু বাম দল ইতোমধ‍্যে গণতন্ত্র মঞ্চের অংশ হিসেবে আওয়ামী বিরোধী শক্তি হিসেবে বিএনপিকে সমর্থন দিচ্ছে।

আওয়ামী লীগকে এখন ঝুঁকতে হবে জাতীয় পার্টি এবং ছোট ছোট দলগুলোর সঙ্গে। ইতোমধ‍্যে বেশ কয়েকটি দলের আনাগোনা হচ্ছে রাজনৈতিক মাঠে। ছোট ছোট ব‍্যানারসর্বস্ব দলগুলোর রাজনৈতিক গুরুত্ব হঠাৎ বেড়ে গেছে। তাদের কেউ কেউও এখন এমপি হওয়ার দরকষাকষিতে আছেন। আওয়ামী লীগের একজন মন্ত্রীর দাবি, বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ ব‍্যক্ত করেছেন। ইতোমধ‍্যে গঠিত হয়েছে তৃণমূল বিএনপি। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির মধ‍্যে বড় ভাঙন ধরাতে চাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা।

আওয়ামী লীগের জন‍্য সবচেয়ে অস্বস্তির জায়গা আন্তর্জাতিক চাপ। বিরোধী দল বিএনপি অংশগ্রহণ না করলে এই নির্বাচনকে আন্তর্জাতিকভাবে বৈধ, নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু হিসেবে গ্রহণ করানো হবে তাদের জন‍্য সবচেয়ে কঠিন। এই চাপ সামলে নতুন করে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ‍্য করার দেনদরবার কীভাবে করবে আওয়ামী লীগ সেই কৌশল তাদের ঠিক করতে হবে এখনই। যতই তারা নির্বাচনের দিকে এগোবে ততই এই চাপ সামলানোর কৌশল নিয়েই তাদের অগ্রসর হতে হবে।

আরও পরীক্ষা আছে আওয়ামী লীগের। সেটি হলো নির্বাচনের জন‍্য সহিংসতার জায়গা পরিহার করে আস্থা এবং নির্ভয়ে ভোট দেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করা। কারণ, ভোটাররা ভোট দিতে না পারলে সেই নির্বাচন আর যাই হোক গ্রহণযোগ‍্য হবে না কোনোভাবেই। তাই আপাতত নির্বাচন করা আওয়ামী লীগের জন‍্য সহজ মনে হলেও ঘাটে ঘাটে রয়েছে চ‍্যালেঞ্জ। তাই ভেতরে ভেতরে আতঙ্কে আছে আওয়ামী লীগও। শেষ পর্যন্ত কী হয় বলা আসলেই কঠিন।

লেখক: শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ‍্যালয়।

ইমেইল: [email protected]

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
জাল ভোট দিতে গিয়ে পেলেন ৬ মাসের কারাদণ্ড
জাল ভোট দিতে গিয়ে পেলেন ৬ মাসের কারাদণ্ড
কাঁচা আম দিয়ে টক-মিষ্টি ললি বানাবেন যেভাবে
কাঁচা আম দিয়ে টক-মিষ্টি ললি বানাবেন যেভাবে
নিউ ইয়র্কে বন্দুকধারীর গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত
নিউ ইয়র্কে বন্দুকধারীর গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত
উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে বিএনডিপি ডিবেটার হান্ট ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা
উত্তরা ইউনিভার্সিটিতে বিএনডিপি ডিবেটার হান্ট ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ