X
রবিবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ভোটের লাগিয়া

সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা
২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৯:২৯আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৯:৩১

একটি নির্বাচন হবে বাংলাদেশে, সংসদ নির্বাচন– প্রতি পাঁচ বছর পর পর যার জন্য আমাদের অপেক্ষা। কিন্তু অনেক দিন ধরে ভালো ভোট হয় না দেশে। নির্বাচন এলে প্রার্থীরা নানা প্রতিশ্রুতি দেন, দলও দেয়। এখন প্রার্থী বা দলের প্রতিশ্রুতি একেবারেই গৌণ হয়ে পড়েছে। সবার ওপরে একটাই কথা, ভোট ভালো হোক, অনেক ভোটার আসুক, প্রতিদ্বন্দ্বিতা হোক। কারণ, ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি না আসায় ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদে গেছেন আর ২০১৮-তে বিএনপি নির্বাচনে এলেও কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতাই সৃষ্টি করতে পারেনি দলটি, সেটা যে কারণেই হোক।

এবার শাসক দল (যার অধীনে নির্বাচন হচ্ছে) চাচ্ছে না বিএনপি না এলেও বিনা ভোটে কেউ জিতে আসুক। বলছে দরকার হয়, ডামি প্রার্থী থাকুক। এটা পরিষ্কার যে এই ডামি প্রার্থীরা আওয়ামী লীগেরই এবং জিতে গেলে সমস্যা নেই, কারণ তারা একই দলের। বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচনে বেশি ভোটার দেখাতে হবে, সুষ্ঠু এবং অবাধ তো দেখাতে হবেই। তাই এই ‘ডামি লীগে’র ভাবনা। এমন ঘোষণা আসার পর দলের ভেতর হিড়িক পড়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার। এ অবস্থা একেকটি আসনে যে কী পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে তা নিয়ে শঙ্কিত অনেকেই। বিবাদের জর্জরিত আওয়ামী লীগ মনে হচ্ছে সেটা আরও বাড়িয়ে দিলো।  

নির্বাচন কমিশন, সরকার, শাসক দল এবং প্রশাসন সবার ভাবনা বেশি বেশি ভোটার আনা। কারণ, সবার চোখের সামনেই দেখা গেছে– গত পাঁচ বছরে জাতীয় সংসদের উপনির্বাচনগুলোতে ভোটারদের একেবারেই কোনও আগ্রহ ছিল না। এমনি ঢাকা-১৭-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ উপনির্বাচনে ভোট পড়েছিল মাত্র ১১ শতাংশ। এবং মাত্র সাড়ে পাঁচ শতাংশ ভোট পেয়ে একজন এমপি হয়ে গেছেন। শুধু আওয়ামী লীগের ভোটাররা এলেও ভোট পড়তো ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ, অথচ তা হয়নি। তাই এবার বিএনপিকে বাদ দিয়ে কীভাবে বেশি ভোটার আনা যায় সেটাই সরকারের ভাবনা। নির্বাচন কমিশনও মনে করছে সেটাই বড় চ্যালেঞ্জ।

কাজটা যে কঠিন এবং জটিল, সে-কথা সংশ্লিষ্ট সবাই স্বীকার করছেন। বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাবার প্রয়োজন আছে। তাই এবারের কৌশল- দলের মনোনয়ন বঞ্চিতদের উৎসাহিত করা। ভাবনাটা এই যে তারা ভোটার আনতে পারবেন। কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়িয়ে নির্বাচনকে দেশ-বিদেশে গ্রহণযোগ্য করতে চায় সরকার। কিন্তু কাজটা কি এত সহজ? এটাই স্বাভাবিক যে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে না এলে ভোটারদের আগ্রহে ভাটা পড়বে। পাশাপাশি বিরোধী দল শুধু ভোট বর্জনই করছে না, প্রতিহত করার কথাও বলছে, ফলে ভোটের পরিবেশ সহিংস হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এসব আশঙ্কা থেকে জনগণকে মুক্ত করে তাদের ভোটকেন্দ্রমুখী করাটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে কমিশনের জন্য, সরকারের জন্য।

আমাদের নির্বাচন কমিশন মনে করে, কেন্দ্রে ভোটার আনার দায়িত্ব প্রার্থীদের। আর ভোটারদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। কিন্তু বিষয়টি কি এত সরল? একটা বড় দল যদি নির্বাচন না করে, যদি এমনটা মনে হয় যে আরও একটা একতরফা নির্বাচন হচ্ছে এবং যদি নির্বাচন বিরোধীদের সহিংসতা বজায় থাকে, তাহলে ভোটার আসবে কেমন করে?

একটা কথা মনে হয় কেউই মনে রাখছেন না যে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের বিপরীতে স্বতন্ত্রদের উৎসাহিত করা হলে স্থানীয় পর্যায়ে শাসক দলের বিভেদ আরও স্পষ্টতা পাবে। তারা সবাই পেশিশক্তি দেখাতে চাইবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে সত্যিকারের নিরপেক্ষ অবস্থান নেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

আমরা বুঝতে পারছি সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সামনে চ্যালেঞ্জগুলো একই। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের বড় অংশের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা; বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন এড়ানো, ভোটার উপস্থিতি বাড়ানো এবং ভোটের হার বৃদ্ধি করার দিকে এখন সব মনোযোগ। আমলাতন্ত্রের লোকজনও বলছেন যে কোন দল এলো বা না এলো সেটা বড় কথা নয়। ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পেরেছে কিনা সেটাই বড় বিষয়।  

সাধারণ মানুষের মধ্যে ভোটে অংশগ্রহণের উৎসাহ বাড়িয়ে তুলতেই হবে। গণতন্ত্রে সাধারণ মানুষই শেষ কথা বলে। কিন্তু তার জন্য মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে চেষ্টা কতটা আছে? মানুষকে বোঝাতে হবে যে বিদ্যমান বাস্তবতায় সবচেয়ে উজ্জ্বল ও যোগ্য প্রার্থীকে যাতে নির্বাচিত করা যায়, সাধারণ মানুষ সেই চেষ্টাটা করুক।

একটা কথা পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবার অনেক বেশি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, নির্বাচন যেন সুষ্ঠু এবং অবাধ হয়, কোথাও যেন অনিয়ম বড় আকারে না হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভোটবিমুখ হয়ে পড়ছেন নাগরিকরা। বিরোধীদের বর্জনের ফলে একতরফা নির্বাচন, দুর্বল প্রতিদ্বন্দ্বী, সহিংসতা, ভোটের মাঠে পেশিশক্তির প্রভাব বিস্তার ও ফলাফলে আস্থাহীনতাসহ নানা কারণে ভোটে আগ্রহ হারাচ্ছেন ভোটাররা।  

উৎসবমুখর ভোটের জন্য বড় রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ অপরিহার্য। কিন্তু বিএনপি না এলেও সেটা কি করে করা যায় তা এক বড় চ্যালেঞ্জ, কারণ কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী থাকা আবশ্যক। পছন্দের দল এবং শক্ত প্রার্থী থাকলে ভোটাররাও আগ্রহ নিয়ে ভোট দিতে আসেন। সেজন্য ভোটের হার বাড়াতে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতা প্রয়োজন। কিন্তু সেটা এখন আর সম্ভব নয়। তাই আমরা নিশ্চিত নই গণতন্ত্রের অলংকার এই নির্বাচনকে কতটা উদযাপন করবেন মানুষ।

লেখক: সাংবাদিক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
দিনাজপুরে একসঙ্গে ২০ হাজার কণ্ঠে গীতা পাঠ
দিনাজপুরে একসঙ্গে ২০ হাজার কণ্ঠে গীতা পাঠ
জেসি অনভিজ্ঞ বলেই আপত্তি ছিল মোহামেডান-প্রাইম ব্যাংকের
জেসি অনভিজ্ঞ বলেই আপত্তি ছিল মোহামেডান-প্রাইম ব্যাংকের
যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
যাত্রাবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
শেখ জামালের জন্মদিন আজ
শেখ জামালের জন্মদিন আজ
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ