X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

সাড়া নেই বর্জনে

আশরাফ সিদ্দিকী বিটু
০৯ এপ্রিল ২০২৪, ২০:০৫আপডেট : ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ২০:০৫

অনেকের হয়তো স্মরণে আছে, ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া বলেছিল, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে ফেনী পর্যন্ত এলাকা ভারতের দখলে চলে যাবে। আপনারা আর বাংলাদেশের নাগরিক থাকবেন না, ভারতের ‘ক্রীতদাস’ হয়ে যাবেন। বাস্তবতা হলো ফেনী ভারতের হয়নি, আমরাও সার্বভৌমত্ব হারাইনি। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে ভারত থেকে কোনও যৌক্তিক সুবিধা আদায় করতে পারেনি। মুখে ভারতের বিরোধিতা করলেও নিজের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে অবৈধ সেনাশাসক জিয়া ক্ষমতায় থাকতে ১৯৮০ সালে ট্রানজিট চুক্তি করেছিল এবং কলকাতায় গ্যাস দেবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল।

পরে খালেদা জিয়া নিজে ক্ষমতায় থাকতে ভারতে গিয়েছিলেন। তিন দিনের সে সফরে গঙ্গার পানিচুক্তি, পার্বত্য চুক্তি ইত্যাদি কোনও প্রসঙ্গ বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উত্থাপিত হয়নি।

অতীতেও বিএনপি ভারত প্রসঙ্গে বিরূপ মন্তব্য করেছে এবং মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল। এর কারণ বিএনপির নিজেদের ব্যর্থতা, তারা ভারতের কাছ থেকে যৌক্তিক সুবিধা আদায়ে ব্যর্থ হয়েছে। জোট সরকার ক্ষমতায় থাকতে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী দলের জন্য ১০ ট্রাক অস্ত্র বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হলে, তা ধরা পড়ে যায়। তখন কীভাবে এই অস্ত্র বাংলাদেশে প্রবেশ করলো এ নিয়ে জোট সরকার কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি। স্বাভাবিকভাবে এতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছিল কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ছিল নির্বিকার।

বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক আরও নতুন উচ্চতায় নিতে সক্ষম হয়েছে। ফলে, উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায়, স্থলসীমানা চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার অধিকার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে, করোনা অতিমারিতে ভ্যাকসিন দিয়ে ভারত সহযোগিতা করেছে। এসবের বাইরেও নানাভাবে ভারত আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সাহায্য, সহযোগিতা ও সমর্থনের কথা সর্বজনবিদিত। ভারতের সঙ্গে আমাদের শুধু কূটনৈতিক সম্পর্কই নয়, বরং ভারত আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী ও বন্ধু রাষ্ট্র। আমাদের ইতিহাস পাঠ থেকে সহজে জানা যায়, যে কোনও সংকটে আমরা সবসময় ভারতকে পাশে পেয়ে থাকি।

সম্প্রতি বিএনপি ভারতবিরোধিতার নতুন রাজনীতি শুরু করেছে। যার অংশ হিসেবে তাদের দলের এক নেতা দলীয় কার্যালয়ের সামনে ভারতীয় শাল (শীতের চাদর) পুড়িয়েছে এবং ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়েছে। এই পণ্য বর্জনের ডাককে সমর্থন জানিয়েছে নাম-প্যাডসর্বস্ব কয়েকটি দল।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যর্থ হয়ে নিজের দোষ অপরের ঘাড়ে চাপাতে এই পণ্য বর্জনের খেলায় নেমেছে বিএনপি ও কিছু নামসর্বস্ব সমমনা দল। যদিও এই নিয়ে দলের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে। কারণ বিএনপির মইন খান গণতন্ত্রের লড়াইয়ে ভারতের ভূমিকা চেয়েছেন, আবার আরেক নেতা ভারতীয় শাল পোড়াচ্ছেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় এ ইস্যু নিয়ে মতপার্থক্যের ব্যাপারটি গণমাধ্যমেও এসেছে।

বিএনপি ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দিয়ে আবার ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়ে ইফতার পার্টি করেছে, যা বিভিন্ন মহলে সমালোচিত হয়। এসব কর্মকাণ্ড থেকে সহজে অনুমান করা যায়, বিএনপি কখন কী করে বা কী বলে তা বলা মুশকিল। কারণ নেতাদের ওপর নির্দেশ আসে লন্ডন থেকে। বিএনপির অভ্যন্তরে যে মত প্রকাশের সুযোগ কম তা সবার কাছে পরিষ্কার।

নির্বাচনের পর হঠাৎ করে ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাকে বিএনপির নিশ্চয় কোনও দুরভিসন্ধি আছে। তাদের উদ্দেশ্য যদি হয় জনগণকে সঙ্গে পাওয়া বা জনগণের সাড়া পাওয়া; তবে বলতে হয়, বিএনপি নতুন করে আরেক ভুল করছে। কারণ বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় অযৌক্তিক কারণে পণ্য বর্জনের ডাক দিলে কেউ সাড়া দেবে না। আর এমন অহেতুক আহ্বানে সরকার পতনও সম্ভব না।

বাংলাদেশের বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ও ভারত সরকার এ বর্জনের ডাক নিয়ে ন্যূনতম বিচলিত নয় এবং জনগণও এই ডাকে কোনও সাড়া দেয়নি। আজ পর্যন্ত কেউ ভারতীয় পণ্য বর্জন করেনি, বরং আসন্ন ঈদে অনেকে ভারত গেছেন কেনাকাটা করতে। আবার অনেকে চিকিৎসার জন্য গেছেন, দেশের বাজারে ভারতীয় পোশাক-কসমেটিকস ভালোই বিক্রি হচ্ছে এবং দেশের কেউ ভারতীয় টিভি সিরিয়াল, খেলা বা চ্যানেল উপভোগ করা থেকে নিজেদের বিরত রাখেনি।

তবে ধারণা করা যায়, বিএনপি জনগণের সাড়া পাওয়াকে গুরুত্ব না দিয়ে হয়তো অন্য কোনও বিদেশি শক্তিকে পাশে পেতে বা খুশি করতে এমন বর্জনের ডাক দিচ্ছে। যদি কোনও কর্মসূচিতে জনগণের অংশগ্রহণ না থাকে তবে সে কর্মসূচি ব্যর্থ হয়– এবারও তাই হবে।

এটা পরিষ্কার যে ভারতে যদি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকতো তাহলে বিএনপির রাজনীতি বা কর্মসূচি ভিন্ন রকম হতো। স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, অতীতের মতো ধর্মানুভূতিকে বিএনপি কাজে লাগাতে চাইছে।

এর আগেও এ দেশের নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগকে হারাতে স্লোগান দেওয়া হয়েছিল আওয়ামী লীগকে ভোট দিলে মসজিদে উলুধ্বনি হবে।

আমরা জানি, হিন্দু মুসলমানের মধ্যে দ্বন্দ্ব লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ আদায়ের চেষ্টা এই ভূখণ্ডে অনেক আগে থেকে চলমান; নির্বাচন থেকে শুরু করে নানা সময়ে ধর্মীয় ইস্যুকে অপব্যবহার করা হয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় হয়তো ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাক দেওয়া হচ্ছে। এই আধুনিক টেকনোলজির যুগে ধর্মকে ব্যবহার করে হীন রাজনৈতিক কর্মসূচি কোনও দলের কাছ থেকে কাম্য হতে পারে না।

বাংলাদেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক কূটনীতিকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে, নতুন ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে, সেখানে বিনা কারণে পণ্য বর্জনের ডাক দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করার সূক্ষ্ম ও কৌশলী অপচেষ্টা মাত্র। তবে জনগণের কোনও সাড়া নেই। ফলে নতুন করে ব্যর্থতার আরেক উদাহরণ যোগ হবে বিএনপির রাজনীতিতে।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক

/এসএএস/এমওএফ/

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
দুর্নীতির অভিযোগে ইসলামপুর পৌর মেয়র বরখাস্ত
মাটি কাটার সময় ‘গরমে অসুস্থ হয়ে’ নারী শ্রমিকের মৃত্যু
মাটি কাটার সময় ‘গরমে অসুস্থ হয়ে’ নারী শ্রমিকের মৃত্যু
সাকিবের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সাক্ষাৎ
সাকিবের সঙ্গে উপজেলা নির্বাচনের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সাক্ষাৎ
স্বর্ণপামে ৯ বিচারক: সর্বকনিষ্ঠ আদিবাসী লিলি, আছেন বন্ডকন্যাও
কান উৎসব ২০২৪স্বর্ণপামে ৯ বিচারক: সর্বকনিষ্ঠ আদিবাসী লিলি, আছেন বন্ডকন্যাও
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ