X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গি ধরলে নাটক, না ধরলে সরকার ব্যর্থ!

বিভুরঞ্জন সরকার
২৮ জুলাই ২০১৬, ১৫:৫৯আপডেট : ২৮ জুলাই ২০১৬, ১৭:১৩

বিভুরঞ্জন সরকার রাজধানীর কল্যাণপুরে পুলিশের অভিযানে ৯ জঙ্গি নিহত হয়েছে, আহত অবস্থায় গ্রেফতার হয়েছে একজন। জঙ্গি মোকাবিলার ক্ষেত্রে এটা আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বড় সাফল্য। এরা যে বড় ধরনের আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, সেটা বোঝার জন্য মস্ত কোনও গবেষক হওয়ার দরকার হয় না। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো আমাদের দেশে কিছু মানুষ পুলিশের এই সাফল্যকে ভালো চোখে দেখছেন না। যারা এই বিষয়টিকে বাঁকা চোখে দেখছেন, তাদের মধ্যে বিএনপি শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও রয়েছেন। বিএনপি একদিকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার কথা বলছে, অন্যদিকে কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানা নির্মূল নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য  ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ কল্যাণপুরে পুলিশি অভিষানে নিহতরা সত্যিই জঙ্গি কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। বিএনপির আরেক প্রবীণ নেতা  শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন প্রশ্ন তুলেছেন, কেন তাদের হত্যা করা হলো, তাদের গ্রেফতার করা গেল না? স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য এক কদম বাড়িয়ে বলেছেন, সরকারের ব্যর্থতা আড়াল করতেই নাকি জঙ্গি ইস্যু সামনে আনা হচ্ছে। বিএনপি নেতাদের এসব কথা শুনলে তাদের বুদ্ধির সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন না তুলে পারা যায় না। কল্যাণপুরে আশ্রয় নেওয়া জঙ্গিরা যদি গুলশানের মতো কোনও অপারেশন চালাতো, তাহলে নিশ্চয়ই বলা হতো যে সরকার জঙ্গি দমনে ব্যর্থ হচ্ছে। কোনও অঘটন ঘটানোর আগেই সফল অভিযান চালিয়ে কয়েকজন জঙ্গিকে নির্মূল করা এখন প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, তারা আসলে জঙ্গি কিনা অথবা তাদের কেন হত্যা করা হলো? পৃথিবীর আর কোনও দেশে সম্ভবত দ্বৈত মানসিকতার রাজনৈতিক দল খুব বেশি আছে বলে মনে হয় না।
ফ্রান্সের নিস শহরে ট্রাক চালিয়ে ৮৪ জন মানুষকে হত্যা এবং প্রায় ২০০ মানুষকে আহত করার ঘটনায় ট্রাক চালককে হত্যাই করা হয়েছে। এ নিয়ে ফ্রান্সে কেউ প্রশ্ন তুলেছে বলে শোনা যায়নি। জঙ্গিরা হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করলে তাদের হত্যা করা যাবে কিন্তু তার আগে তাদের আদর যত্ন করতে হবে এটাই যদি মানসিকতা হয়, তাহলে জঙ্গিবাদ দমন করা কখনও সম্ভব হবে না।
২৭ জুলাই সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে সঙ্গতভাবেই বলেছেন, আমার প্রশ্ন—বিএনপির নেতাদের এত আহাজারি কেন? জঙ্গিদের জন্য বিএনপি নেতাদের এত দরদ কেন? আর তাদের মনে এত সন্দেহ কেন যে, এরা জঙ্গি কিনা? এটা একটা সন্দেহের ব্যাপার যে তাদের কোথায় ঘা লাগলো কোথায় ব্যথা পেলেন তারা। প্রধানমন্ত্রী এও বলেছেন যে, জঙ্গি আস্তানায় সময়মতো যদি পুলিশ বাহিনী ব্যবস্থা না নিত, তাহলে তারা অনেক বড় অঘটন ঘটাতে পারতো।
দেশে জঙ্গিবাদের মহাবিপদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার প্রেক্ষাপটে জাতীয় ঐক্যের বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ঐক্যের তাগিদটা যেন বিএনপিরই বেশি। তবে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে জঙ্গি ইস্যুতে ঐক্য হওয়ার কোনও সম্ভাবনা আছে কিনা, সে প্রশ্নও উঠছে। এক কথায় এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে ঐক্য হওয়া সম্ভব নয়। তবে ঐক্যের পক্ষের যারা সওয়াল করছেন, তাদের যুক্তি হলো, দেশের অন্তত ৩০ শতাংশ মানুষকে প্রতিনিধিত্ব করছে বিএনপি। এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত না করে অথবা নিউট্রাল রেখে কিভাবে সম্ভব জাতীয় ঐক্য?

বিএনপি দেশের একটি বড় রাজনৈতিক শক্তি নিঃসন্দেহে। কিন্তু দলের  নীতিগত অবস্থান জঙ্গিবাদবিরোধী না হলে এই ইস্যুতে তাদের সঙ্গে ঐক্য হবে কিভাবে? সরকারে এবং বিরোধী দলে থাকতে কোনও সময়েই জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বিএনপির অবস্থান সৎ ও নীতিনিষ্ঠ ছিল কি? জন্মের পর থেকেই বিএনপি ধর্মাশ্রয়ী সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতা করে এসেছে। আমাদের দেশে সন্ত্রাসী রাজনীতির অন্যতম প্রবর্তক দল জামায়াতে ইসলামীকে পুনর্বাসন ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দিয়েছে বিএনপি। জামায়াতের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে সরকার গঠনের পর ২০০১- পরবর্তী সময়ে দেশে বিভিন্ন নামে জঙ্গি সংগঠনগুলো যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল সেটা নিশ্চয়ই আমরা ভুলে যাইনি। ২০১৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত  বিভিন্ন সময় আন্দোলনের নামে দেশে যেসব নাশকতা-অরাজকতা হয়েছে তার মূলেও ছিল বিএনপি -জামায়াত। সে জন্যই বিএনপিকে জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্ট একটি রাজনৈতিক দল হিসেবেই অনেকে মনে করেন। এই অবস্থায় বিএনপি যদি জঙ্গিবাদবিরোধী জাতীয় ঐক্যে সামিল হতে চায় তাহলে তার উদ্দেশ্যের সততা নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক।

বিএনপিকে নিয়ে জঙ্গিবিরোধী জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার কথা যারা বলেন তারা সবাই হয়তো অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এটা বলেন না। তারা হয়তো মনে করেন, অন্তত ৩০ শতাংশ জনসমর্থন যাদের আছে তাদের ঐক্য প্রক্রিয়ার বাইরে রাখলে সেটা জাতীয় ঐক্য হয় কিভাবে? মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের দেশে যেভাবে বৃহত্তর ঐক্য গড়ে উঠেছিল সে রকম একটি ঐক্যের কথাই হয়তো তারা ভাবেন। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক বাস্তবতায় এখন একাত্তরের মতো ঐক্য আর হওয়া সম্ভব নয়, এমনকি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী ইস্যুতেও।

তাছাড়া এটাও মনে রাখা দরকার, জাতীয় ঐক্য মানে কিন্তু এই নয় যে দেশের সব মানুষ কোনও একটি বিষয়ে এক মত পোষণ করবে। দুনিয়ার কোথাও সব মানুষ কোনও সময় কোনও ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে না, একমত হতে পারে না। তবে অধিকাংশ মানুষ একমত হওয়াটাকে আসলে জাতীয় ঐকমত্যের লক্ষণ বা প্রতিফলন হিসেবে ধরা হয়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ও প্রকৃতপক্ষে দেশের সব মানুষ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন না। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তিকে আমরা যতটা খাটো করে দেখি, প্রকৃত অবস্থা সেরকম নয়। ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ একচেটিয়া বিজয় অর্জন করেছিল। তার মানে এই নয় যে দেশে তখন আওয়ামী লীগবিরোধী কোনও মানুষ ছিল না। ৭০ এর নির্বাচনেও কমবেশি ৩০ শতাংশ মানুষ আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেই ভোট দিয়েছিল। বিরোধীরা কোনও আসন পায়নি, কিন্তু ভোট পেয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ায় তারা পক্ষ বদলও করেনি। তাই এটা ধরে নেওয়া ঠিক যে মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ বিরোধিতাকারীদের সংখ্যাও প্রায় ওই রকমই ছিল। অর্থাৎ দেশের বেশিরভাগ মানুষ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল বলেই আমাদের পক্ষে যুদ্ধে জয় সম্ভব হয়েছে। তাই যেকোনও ইস্যুতে ঐক্য বলতে কোনও সময়েই সব মানুষের ঐক্য বোঝায় না।

মুক্তিযুদ্ধের সময়ও বাস্তবে সব রাজনৈতিক দলের কোনও আনুষ্ঠানিক ঐক্য গড়ে ওঠেনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম কমিটি গড়ে তোলার আহবান জানিয়ে ছিলেন। সর্বত্র স্বতঃস্ফূর্তভাবে সংগ্রাম কমিটি গড়ে উঠলেও তাতে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ ছিল না। মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামি ইসলামীসহ ধর্মভিত্তিক পাকিস্তানপন্থী দলগুলো সংগ্রাম কমিটিতে শরিক হয়নি। অথচ সে সময় আওয়ামী লীগের বাইরে এই দলগুলোই ছিল প্রভাবশালী । কিন্তু তাদের বাদ দিয়ে সংগ্রাম কমিটি হওয়াতে কেউ প্রশ্ন তোলেনি, কারণ সেটাই ছিল স্বাভাবিক। বিরুদ্ধবাদীদের সঙ্গে ঐক্য হয়না, ঐক্য হয় সমমনাদের মধ্যে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পরও ন্যাপ, সিপিবিসহ যেসব রাজনৈতিক দল মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল তাদের এক প্ল্যাটফর্মে সমবেত করার উদ্যোগ ছিল না। এমনকী ন্যাপ-সিপিবি-ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েও প্রথম দিকে প্রতিবন্ধকতারই সম্মুখীন হয়েছেন। এক পর্যায়ে ভারত সরকারের সহযোগিতায় ন্যাপ-সিপিবি-ছাত্র ইউনিয়ন আলাদা গেরিলা বাহিনী গড়ে তুলেছিল। মুক্তিযুদ্ধকালে একটি সর্বদলীয় পরামর্শক কমিটি গঠিত হয়েছিল ঠিকই কিন্তু ওই কমিটি না হওয়া পর্যন্ত কেউ জাতীয় ঐক্যের আহবানের জন্য বসছিল না। ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালি জাতির ওপর আক্রমণ শুরু করলে সবাই যার যার অবস্থান থেকে প্রতিরোধ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল যুদ্ধের ময়দানেই কার্যত জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠেছিল।

দেশের সামনে এখন একটি খারাপ সময় উপস্থিত হয়েছে। ধর্মের নামে উগ্রবাদী শক্তি যে জঙ্গি তৎপরতা শুরু করেছে যা এখনই কঠোর হাতে দমন না করলে  আমাদের দেশের ভবিয্যৎ বিপন্ন হয়ে পড়বে। বিশেষ করে গুলশান ও শোলাকিয়ায় ভয়াবহ জঙ্গি আক্রমণের পর এখন ধারণা করা হচ্ছে এমন হামলার ঘটনা আরও ঘটতে পারে। এ ধরনের ঘটনা কেবল দেশের মানুষের নিরাপত্তাসংকট তৈরি করছে তাই নয়, এর ফলে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হওয়ারও আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার লক্ষণ এর মধ্যেই দেখা দিতে শুরু করেছে। গুলশানের রেস্টুরেন্টে বিদেশি নাগরিকদের নির্মমভাবে হত্যা করার ঘটনায় বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পখাত হুমকির মুখে পড়তে পারে। দেশের মানুষের মন থেকে যেমন জঙ্গি হামলার আতঙ্ক দূর করতে হবে, তেমনি দেশের বাইরেও এই আস্থার বার্তা পৌঁছে দিতে হবে যে, ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে কিছু নৃশংস ঘটনা ঘটলেও এসবের পুনরাবৃত্তি রোধে সব ধরনের ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতাসীন সরকার জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার জোর দিয়েই এটা বলেছেন যে, তার সরকারের লক্ষ্য সন্ত্রাসের মূল উৎপাটন করা। সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করা, এরা কোথা থেকে মদদ পায়, কোথা থেকে এদের অর্থ ও অস্ত্র আসে, কারা এদের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দেয় তা খুঁজে বের করতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা তৎপরতা শুরু করেছে। তবে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের মূল-উৎপাটন করতে হলে যে দেশের ব্যাপক জনগোষ্ঠীর সক্রিয় সহযোগিতা লাগবে সেটা স্বীকার করতেই হবে। আর এখানেই আসছে জাতীয় ঐক্যের প্রশ্ন।

বিবদমান রাজনৈতিক দলের মধ্যে না হলেও জনগণের মধ্যে এ বিষয়ে ঐক্য তৈরি হয়েছে বলে মনে হয়। সাধারণ মানুষের মধ্যে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের প্রতি সমর্থন ও সহযোগিতার মনোভাব থাকার কোনও কারণ নেই। ধর্মের নামে, রাজনীতির নামে নিরীহ মানুষ হত্যা করা কোনও সাধারণ নাগরিক সমর্থন করতে পারে না। সেই অর্থে সাধারণ মানুষের মধ্যে জঙ্গিবাদবিরোধী ঐকমত্য রয়েছে। এখন দরকার রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য। যেসব রাজনৈতিক দল জঙ্গিবাদকে দেশের জন্য, মানব সমাজের জন্য বিপদ হিসেবে মনে করে তাদের উচিৎ সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব পরিহার করে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জঙ্গিবিরোধী কর্মসূচি গ্রহণ করা। যেসব তরুণ বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট হচ্ছে তাদের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেওয়া যে কাউকে হত্যা করে কিংবা আত্মঘাতী হয়ে মহৎ কিছু অর্জন করা যায় না। আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্য গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে নানা ধরনের বাস্তব সমস্যা রয়েছে। বিশেষত বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে নানা বিষয়ে যে দূরত্ব রয়েছে তা না কমিয়ে এই দুই দলের পক্ষে রাতারাতি কোনও ইস্যুতে ঐক্যবন্ধ হওয়ার সুযোগ কম। আওয়ামী লীগ যে বিএনপিকে বিশ্বাস করে না, তার একশ একটা কারণ রয়েছে। আবার আওয়ামী লীগের প্রতিও বিএনপির আস্থাহীনতা রয়েছে। এই অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতা এক দিনে তৈরি হয়নি, একদিনে দূরও হবে না।  জঙ্গিবাদ দমনের ইস্যুতে বিএনপি যদি আন্তরিক হয়ে থাকে তাহলে আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক ঐক্যের ডাকের অপেক্ষা না করে তাদের একতরফাভাবেই কিছু ঘোষণা  দিতে হবে, উদ্যোগ নিতে হবে।

কোনও ধরনের তালবাহানা ও কৌশলের আশ্রয় না নিয়ে বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে পরিচিত জামায়াতের ইসলামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। আমাদের দেশে ধর্মভিত্তিক সাম্প্রদায়িক রাজনীতি এবং জঙ্গিবাদের উত্থানের পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে  জামায়াতে ইসলামী। বিএনপিকে এটা স্বীকার করতে হবে, মানতে হবে । 

বিএনপিকে ঘোষণা দিতে হবে যে তারা ভবিয্যতে কখনও কোনোভাবেই কোনও সন্ত্রাসী ও জঙ্গিবাদীকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে না। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় অভিযুক্ত  আব্দুস সালাম পিন্টুসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী ও জঙ্গি হামলায় বিএনপির যে সব নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে তাদের দল থেকে বের করা দেওয়ার ঘোষণাও দিতে হবে। জঙ্গিবাদবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সরকার পতনের আন্দোলনকে একাকার করতে চাইলে বিএনপির জন্য সেটা মোটেই সুখকর হবে না। বিএনপিকে এখন ঠিক করতে হবে তাদের আশু লক্ষ্য কোনটি? তাদের কাছে এখন জঙ্গিবাদ দমন জরুরি নাকি নতুন নির্বাচন বা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করাটা জরুরি। খালেদা জিয়া সহ বিএনপির কোনও কোনও নেতা জঙ্গিবাদ ইস্যুকে তাদের রাজনৈতিক লক্ষ্য হাসিলের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছেন বলে মনে হয়। বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ড. এমাজউদ্দিন আহমদও সাম্প্রতিক এক বক্তৃতায়  বলেছেন, দেশের সংকটকালে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে জাতীয় ঐক্যের ডাক প্রত্যাশিত থাকলেও তিনি এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই তার স্বপথ থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত। 

বিএনপি যদি দ্রুত ক্ষমতার যাওয়ার খোয়াব দেখা অব্যাহত রাখে তাহলে তাদের বৃহত্তর ঐক্যে গড়ার চেষ্টায়ও যেমন সফল হবে না, তেমনি সরকারও তাদের রাজনীতিতে কোনও স্পেস দেবে না। সরকারের টার্গেট এখন কঠোর হাতে জঙ্গিবাদ দমন। দেশের মানুষও এখন সরকারের কাছে সেটাই চায় বলে মনে হয়। মানুষ শান্তি চায়, নিরাপদ জীবন চায়। জঙ্গিদের অপতৎপরতা মানুষের এই চাওয়ার বিপরীত।

লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট

[email protected]

আরও খবর: কল্যাণপুরে জঙ্গিদের হাতের লেখায় জিহাদ

*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।

বাংলা ট্রিবিউনের সর্বশেষ
‘হিট ইমারজেন্সি’ জারির আহ্বান সাইফুল হকের
‘হিট ইমারজেন্সি’ জারির আহ্বান সাইফুল হকের
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
শনিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
শনিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
জলবায়ু অভিযোজনে সহায়তা দ্বিগুণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আহ্বান পরিবেশমন্ত্রীর
জলবায়ু অভিযোজনে সহায়তা দ্বিগুণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আহ্বান পরিবেশমন্ত্রীর
সর্বশেষসর্বাধিক

লাইভ