X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বন্দুকযুদ্ধে নিহত একরাম মাদক ব্যবসায়ী নন: কক্সবাজারের পৌর মেয়র

কক্সবাজার প্রতিনিধি
২৮ মে ২০১৮, ২০:৩০আপডেট : ২৮ মে ২০১৮, ২০:৪৫

একরামুল হক শনিবার (২৭ মে) রাতে র‌্যাবের সঙ্গে কথিক বন্দুকযু্দ্ধে নিহত হয়েছেন কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও পৌর যুবলীগের সাবেক সভাপতি মো. একরামুল হক। র‍্যাব দাবি করেছে, তিনি মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। তবে কক্সবাজারের ভারপ্রাপ্ত পৌর মেয়র মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী দাবি করছেন, একরাম মাদক ব্যবসায়ী নন, নির্দোষ। এই দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর খোলাচিঠি ও স্মারকলিপি পাঠিয়েছেন তিনি।

খোলাচিঠিতে কক্সবাজার জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘প্রশাসনকে ভুল তথ্য দিয়ে টেকনাফ যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও পর পর তিনবার নির্বাচিত কাউন্সিলর একরামকে হত্যা করা হয়েছে।’ তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে আরও লিখেছেন, ‘একরামের মৃত্যু আওয়ামী লীগের ত্যাগী ও বিশ্বস্তদের জন্য অশনি সংকেত। একরামকে হত্যার মধ্য দিয়ে তবে কি টেকনাফকে আওয়ামী লীগ শূন্য করার কাজ শুর হয়ে গেল।’

আওয়ামী লীগের এই নেতা আরও জানান, ‘২০০৮ সালে একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তার সঙ্গে একরামের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ছিল। সেই সময় তার বিরুদ্ধে মাদকের মামলাও হয়েছিল। যদিও মামলাটিতে একরাম নির্দোষ প্রমাণিত হয়। সেই সূত্রে ২০১০ সালে নাম ওঠে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রথম তালিকাতেও। কিন্তু ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তার বদলির পর সেটা সংশোধন হওয়ায় একরামের নাম বাদ পড়ে হালনাগাদ সব তালিকা থেকে।’ একরামের পরিবার টেকনাফ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা ও এখানকার মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকও বলেও জানান তিনি।

নিহত মো. একরামুল হকের ভাই মো. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ভাই কোনোভাবে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নয়। সে এলাকার সাধারণ মানুষের ভালোবাসা নিয়ে ৯ বছর কাউন্সিলর হিসেবে জনপ্রতিনিধিত্ব করেছে। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সংসার জীবনে আমার ভাই একরাম ছিল দরিদ্র। ছেলেমেয়েদের ঠিকমতো লেখাপড়ার খরচ চালাতে পারতো না। বাড়িঘর করতে পারেনি। তার নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। সে কীভাবে ইয়াবা ব্যবসা করতে পারে? আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে এর সঠিক বিচার চাই।’

এদিকে একরাম নিহত হওয়ার পর গণমাধ্যমে পাঠানো র‌্যাবের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তার বাবার নাম ও গ্রামের ঠিকানা নিয়ে তথ্য বিভ্রাট হয়। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে নিহত একরামুল হকের বাড়ি টেকনাফে উপজেলার সদর ইউনিয়নের (৮নং ওয়ার্ড) নাজিরপাড়া গ্রাম লেখা হয়। তবে তার নিজ বাড়ি হচ্ছে টেকনাফ পৌরসভার (৩নং ওয়ার্ড) খায়ুকখালী পাড়ায় (ক্য ক্য পাড়া)। একরামের বাবার নাম মৃত আব্দুস সাত্তার হলেও র‌্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে মোজাহের মিয়া ওরফে আব্দুস সাত্তার লেখা হয়।

রবিবার রাতে একরামুল হকের জানাজায় এমপি আবদুর রহমান বদি বলেন, ‘র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত মো. একরামুল হক কোনও ইয়াবা ব্যবসায়ী ছিলেন না। তিনি ভালো লোক ছিলেন। তিনি বন্দুকযুদ্ধের মতো ভয়ঙ্কর কোনও কাজে অংশ নিতে পারেন না। আজ মাদকের কারণে একটি তাজা প্রাণ ঝরে গেছে।’

টেকনাফ পৌরসভার মেয়র এবং স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির চাচা মো. এসহাকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন কেটে দেন।

টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল বশর বলেন, ‘বন্দুকযুদ্ধে নিহত পৌর কাউন্সিলর একরামুল হক উপজেলা যুবলীগের একজন ত্যাগী নেতা ছিলেন। বেশি টাকার লোভ তার মধ্যে কখনও দেখিনি। গত দুই বছর ধরে তার বাড়ির নির্মাণকাজও শেষ করতে পারেননি। নিজের সন্তানের স্কুলের বেতন দিতেও হিমশিম খেতে হয়েছে তাকে। তিনি ইয়াবা ব্যবসায়ী কিনা তা আমার জানা নেই। কারণ, মাদক নিয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ কোনও দিন কিছু বলেনি।’

এ ব্যাপারে র‌্যাব-৭ কক্সবাজার কার্যালয়ের কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. রুহুল আমিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেখুন, র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত একরামুল হকের পরিচয় উপস্থিত সাধারণ মানুষের জবানবন্দিতে করা। পরে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকা দেখে টেকনাফ থানায় করা র‌্যাবের জিডিতে স্পষ্ট করে সব দেওয়া আছে। একরামুল কমিশনার যে একজন ইয়াবা গডফাদার এতে কোনও সন্দেহ নেই।’

র‍্যাব জানায়, বন্দুকযুদ্ধের পর ঘটনাস্থল থেকে ১০ হাজার পিস ইয়াবা, ১টি বিদেশি পিস্তল, ১টি ওয়ান শুটারগান, ১টি ম্যাগাজিন, ৬ রাউন্ড গুলি, ৫ রাউন্ড খালি খোসা ও ১টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব দাবি করেছে, নিহত একরামুল হক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রাণালয়ের তালিকাভুক্ত ইয়াবা পাচারকারী গডফাদার। ওই দিন একটি সংঘবদ্ধ মাদক ব্যবসায়ীচক্র একটি মোটরসাইকেলে করে বিপুল পরিমাণ মাদক নিয়ে টেকনাফ থেকে মেরিন ড্রাইভ সড়ক হয়ে কক্সবাজারের উদ্দেশে যাচ্ছে এমন গোপন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালান র‌্যাব-৭ সদস্যরা। এ সময় মাদক ব্যবসায়ীরা র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে তাদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ শুরু করে। আত্মরক্ষায় র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। গুলিবিনিময়ের একপর্যায়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পিছু হটে পালিয়ে যায়। এ সময় ঘটনাস্থলে একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিকভাবে আহত ব্যক্তিকে টেকনাফ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরে তার পরিচয় জানা যায়।

র‌্যাব-৭ কোম্পানি কমান্ডার মেজর মো. রুহুল আমিন আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও র‌্যাবের ডিজি স্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন, দেশে মাদক পাচারকারীদের কোনোমতেই ছাড় দেওয়া হবে না। মাদক ব্যবসায়ী যে দলেরই হোক এবং যতই শক্তিশালী হোক না কেন, কারও ছাড় নেই। এরই ধারাবাহিকতায় মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসাবে ওই র‌্যাব সদস্যরা অভিযান চালান।
তিনি জানান, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা মিলে মাদক ব্যবসায়ীদের যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে, এখন ওই তালিকা ধরে অভিযান চলছে। সব তালিকায় একরাম কমিশনারের নাম মোট পাঁচবার এসেছে। আপনারা জানেন এই এলাকায় বড় বড় ইয়াবা ডন রয়েছে। এদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে একটি মামলাও নেই। ঠিক একইভাবে নিহত একরামুল হক কমিশনার একজন প্রভাবশালী কমিশনার ছিলেন। তার প্রভাবটি আসত ইয়াবার টাকা থেকে। এখন যদি কেউ দাবি করেন যে একরাম নির্দোষ তাহলে তো কোনোমতেই মেনে নিতে পারছি না।’

উল্লেখ্য, শনিবার রাত ১টার দিকে টেকনাফের বাহারছড়ার নোয়াখালীয়াপাড়া সংলগ্ন মেরিন ড্রাইভ সড়কে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে একরাম নিহত হন।

আরও পড়ুন- 

টেকনাফে বন্দুকযুদ্ধে ‘মাদক ব্যবসায়ী’ ওয়ার্ড কাউন্সিলর একরাম নিহত

টেকনাফে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত একরামের দাফন সম্পন্ন

/এফএস/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘হিট ইমারজেন্সি’ জারির আহ্বান সাইফুল হকের
‘হিট ইমারজেন্সি’ জারির আহ্বান সাইফুল হকের
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
শনিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
শনিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
জলবায়ু অভিযোজনে সহায়তা দ্বিগুণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আহ্বান পরিবেশমন্ত্রীর
জলবায়ু অভিযোজনে সহায়তা দ্বিগুণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আহ্বান পরিবেশমন্ত্রীর
সর্বাধিক পঠিত
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী