X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রিয় দশ

রেজা রাজা
০৪ মার্চ ২০২৪, ১৭:২৪আপডেট : ০৪ মার্চ ২০২৪, ১৭:২৪

নস্টালজিক বিভাস

গাঢ় প্রগাঢ়–
তোমার গলার স্বর বেজে ওঠে কালিক ভাষায়
আমি উর্ধাকাশে তাকালে ঝরে পড়ে
নিষ্ঠ পেন্ডুলামের নির্মোহ দোল।

আর আমার রেটিনার ঝুলকালি
হঠাৎ সরে গেলে–
বেরিয়ে পড়ে আশ্চর্য প্রত্ন অক্ষরের
ধূসর প্রান্ত রেখার দীর্ঘশ্বাস।

হেলে পড়া বয়সী দীর্ঘ ছায়ার ম্লান মুখ
আমার হাতের নীল রেখার সাথে ত্রস্ত সন্ত্রস্ত
বাঁশির সুর তোলে অনুক্ষণ
দুঃসাহসে আমিও তবে বাজাই হ্যামেলিনের বাঁশি।

পূর্ণিমার চাঁদের ফরসা স্তন থেকে ঝরে
স্মৃতির দুধ– স্তব্ধ রাতের রেখায়।
নিপুণ তুলির অশ্রু ও দিঘল কালো
চোখের ঘুম হরিণীর শব্দে।

পরাহত, সুদূর পরাহত সময়ের
বিচিত্র গ্রন্থি ঠা-ঠা শব্দের কোলাহলের
ঝুল বারান্দায় আঁকে গনগনে তাতানো
মুখের রোদ।

নিশ্বাস, নির্মেদ স্তব্ধ হয়–
বন্দি মীন প্রাণ
ত্রস্ত হয় জীবন সংশয়ে।
তাল তাল মাংসের বন্যায় ঢেকে যায়
রূপশালি রমণী দেহের আশ্চর্য লাবণ্য;
মেদমত্ত এবডোমেনে ঢাকা পড়ে
তাঁর একদা উত্তুঙ্গ যৌবনের
অরণ্যানী ঘেরা উড্ডীন গাণ্ডিব
দুই যৌবন নিরানন্দ থাকে
অর্থহীন আলিঙ্গনে।

অথচ তোমার উন্নত নাসিকাগ্রে কুড়ি
বছরের স্বর্ণালি স্বেদবিন্দু
আমাকে দেয় মুক্তার জৌলুস জ্ঞান
নিজের অলীক এন্টেনায় ধরা দেয়
আশ্চর্য সময়ের গূঢ় পদাবলি।

অথচ ঘাতক সময় পরিয়ে দেয়
যুথবদ্ধ শিকলের দুরূহ বন্ধন
গুমড়ে মরা পরাণ পাখির নিগূঢ়
যাতনার গ্রন্থি হারায় প্রাণিত উচ্ছ্বাস।

হয়ত তুমি অলীক চৌহদ্দির বৃত্তে রয়েছ বন্দি
প্রাচীর বেষ্টিত বাগানে কুড়িয়ে নিচ্ছ ফুল
আনমনে পড়ে নিচ্ছ জমে যাওয়া
স্মৃতিক্লিষ্ট কথার ফুলঝুরি
হয়ত তোমার কপোলের আশ্চর্য তিল
উঁকি দিয়ে দেখছে তোমার বিগত দিনের
প্রণয় পাখির আশ্চর্য উড়াল
হয়ত জাস্ট হয়ত তুমি সহসা নস্টালজিক।


অনুভূতি, অদ্ভুত অনুভূতি

আমার ভেতর জন্ম নেয় এক বোধ
অনেক বোধ–
অনুভূতির চাপ চাপ রক্ত মাড়ানো
উদ্বায়ী, নিরাকার অথচ সাকার পাবার দুর্মর ইচ্ছেগুলির দিগন্তজোড়া রংধনু।

তোমার কলবের খামচে ধরা
প্রণয়জর্জর অস্ফুট ধ্বনিরাও
গুঞ্জন তোলে আমার নিদারুণ স্তব্ধ মিনারের সুনিবিড় সুনশান রাত্রির দ্রাঘিমায়।


কিছু ছবি, কিছু কথা

চকচকে ধারালো এক ছুরি
ফলায় গেঁথে নিচ্ছে অনিন্দ্য সুন্দর আপেল রং সকাল
সাঁই সাঁই ছুটে চলেছে মহল্লার কোলাহলে
ছাদ থেকে কে একজন হাঁক দেয়–
এই জঘন্য শেয়ালের দল, ছেড়ে দে অচল মানুষের হাত
কানের পাশ দিয়ে কজন কাঙাল অলস ভেসে যায়
ভাপ ওঠা ভাতের গন্ধ শুঁকে শুঁকে।

তুফান মেইল ধোঁয়া উড়িয়ে ছুটে চলে যায়
বুকের পাঁজরে নিদারুণ শ্বাসকষ্ট
একমাত্র নিজ ছায়া সঙ্গী থাকে– প্রভুভক্ত প্রাণি
লেজকাটা শেয়ালের দল চলে যায় মাংস, মজ্জা খেয়ে।


নিহিত ভাবনা

জীবন এক আশ্চর্য মিথ–
এবসার্ডকে ধরতে মহাকালের পাতায় আঁকা সহস্র মুণ্ডু
পুড়ে পুড়ে খাক হয় হাইড্রোকার্বন।

চাই নতুন ক্রমশ– 
নতুন সন্ধানের অলীক এ-জীবন চ্যাপ্টা হয় ঘসেটি বেগমের শিলপাটায়
তথাপি অটল থাকে ফুঁড়ে ওঠা মূলনীতির অদ্রিশিখর।

যদি নাজিল হয় অলৌকিক পয়ার–
ভ্রূক্ষেপ নেই কোনো–
হতে পারে উত্তম, অথবা অধম
দিগন্তজোড়া ভালোবাসার অসীম টংকার অথবা শূন্যতা কখনও।


চিন্তা-ভালুক

এলোমেলো ভাবনার ভালুক
পাটক্ষেতে নিড়ানি দিতে দিতে
রংপুরের বাস ধরে বিকেল তিনটায়!
অতঃপর খোঁচা দিয়ে খচখচিয়ে উঠে
সেলাই কলের বাহারি জোছনা
আলোর কাস্তে কাটে
কিং কোবরার ফণার ফোয়ারা
গোটা পাঁচেক নক্ষত্র বিকট হাই তোলে
বাদামি নৌকার সমীকরণে
ঘাস ফড়িং, চিন্তার বেণি–
হর্নবিল সন্ধ্যার ভ্যালিতে ঢালে অনন্ত কুয়াশা
করোটি জমিনে বাজে কেবল–
ঝিকঝিক পমপম ঝিকঝিক পমপম!


আইতে চাই নাই

জবর আরামের ওম ছাইড়া
আইতে চাইনাই–
জোর কইরা হান্দাইয়া দেওয়া হইছে
এই বিরাট গনগনে মাইটা চুলার আগুনে
বহুত চিক্কুর দিলেও রেহাই মিলেনাই
ভয়ংকর ঈগলের আড্ডি ভাঙা কঠিন থাবা থাইকা।
বহুত বাতচিত, হুতার পাছা দিয়া হুতা দেওয়ন দেইখ্যা
বহুত ঠাপাঠাপি দেইখ্যা–
বালে বালে গিট্টু দেওয়া পুলিটিস দেইখ্যা
নিজেই নিজেরে বনবাসে পাঠাইছি আগাগোড়া
এমুন কইরা নিজেরে বনবাসে পাঠানোর কামডা পিথিমীর ব্যক্কের সেরা
হামুকের লাহান নিজের খোলসের ভিতরে বন্দী থাকন বহুত সৈন্দজ্জ।

আইবার কাল থাইকাই আছিল যাইবার তোড়জোড়
তবু কথার মইধ্যে কথা হইলো চাঁন মিয়া–
যাইবারকালে পিছন ফিররা তাকাইলেই–
কই জানি একটা কড়া মোচড় লাগে,
ভিতরে ভিতরে কই জানি একটা প্যাথেটিক টান লাগে।


পতিত প্রণয়

পতিত প্রণয় এক শুষ্ক কাঠ
ভীষণ কালের কুঠার
সজোরে হামলে পড়ে চেলা কাঠে
আশ্চর্য সিসিম ফাঁক–
ফালা ফালা কাব্য দেহ গড়ে– 
নিদারুণ কোপাকুপি খেলা
দুই খণ্ড, দুই ভাগ–
গড়িয়ে গড়িয়ে দুটি নদী হয়ে যায়–
পাটুরিয়া দৌলতদিয়ার জলের শরীরে
যেমন ভাগ হয় পদ্মা যমুনা;
নিরুত্তাপ সময় প্রবাহ–
দুজনে আর কথা হয়না!


সীমাহীন গহিন ভিতর

আসলে শূন্যে আছি সীমাহীন শূন্যে ভাসি
নিরাকার চয়ন শিখে–
এই আমি বেলুন বেশে উড়ছি অপার দূর আকাশে। 

নিজের ভেতর কত্তো বড় সমুদ্র এক অপার ধূধূ
ছবি আর বিম্বধারী ফুল ফলাদির বাগান শুধু
খাবিখাই চিত্র ভাসে ছবি আঁকে নয়ন জলে
জলছবি অশ্রু ফ্যালে গন্ডদেশে বুকের তলে।


বিবিধ জটিলতা

কী যে বলতে চায় তা জানে না–
অথবা জানে–
পইড়া কান্দে সাইপাড়ার শুকনা তালাবে–
মাথার উপরে বাতাস কাটে–
বাজপাখির উড়াল–
আপ সাইড ডাউনে চিৎকার হইয়া থাকে–
একটি দূরাগত শব্দের মশকরা।

কেমনে কমু?
কেমনে কমু?
এইডাই ব্যাক্কের চাইতে–
বড় সমস্যা।
মনের দ্বিধা–
নাইল সুতার গিট্টু হইয়া–
বহু প্যাঁচ কম্বিনেশন মারে
খলখল কইরা হাইসা দেয় বাদামি শেয়াল।

খুব ছ্যাড়াব্যাড়া অবস্থা–
দৌড়ের উপরে থাকে–
ব্যাবাক আউলাঝাউলা লাগে–
জবর হাঁপাইতে থাকে পাগলা মন।


রাত্রির মায়া হরিণ

রাত্রি এক নিবিড় নৈঃশব্দ্যের প্রাণ–
স্তব্ধ শীতল–
শায়িত
অথচ তাও–
যেন মহাকালের নির্মোহ প্রবাহ। 

মাতাল চোখে আঁকা
ধ্রুব নক্ষত্রের চিত্রল ক্যানভাস।

এদিকে পাঁড় মাতালের পায়ে পায়ে গড়ায়
নিদ্রিত নাগরিক রাজপথ–
দুলে ওঠে রাত্রির মায়াবী পল্লব।

নিমগ্ন নৈঃশব্দ্যের চূড়ায়
খসে পড়ে–
খসে পড়ে অজস্র নক্ষত্রের 
গভীর গোপন বেদনার গান–
থমকে দাঁড়ায় নির্মোহ প্রয়াস।

ঘুমিয়ে যাওয়া পাখি প্রাণ
স্বপ্ন দেখে–
গলিত স্বপ্নের
ছায়া দেখে যায়।

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
প্রিয় দশ
দোআঁশে স্বভাব জানি
প্রিয় দশ
সর্বশেষ খবর
বিকল্প অর্থনীতি ও গ্রাম্য কায়কারবার
উপন্যাসবিকল্প অর্থনীতি ও গ্রাম্য কায়কারবার
বিপুল পরিমাণ নকল জুস জব্দ, কারখানার মালিকের কারাদণ্ড
বিপুল পরিমাণ নকল জুস জব্দ, কারখানার মালিকের কারাদণ্ড
লিগের মাঝপথে গোপনে কানাডায় কেন বাংলাদেশি ফুটবলার!
লিগের মাঝপথে গোপনে কানাডায় কেন বাংলাদেশি ফুটবলার!
বাঁচতে হলে জানতে হবে
বাঁচতে হলে জানতে হবে
সর্বাধিক পঠিত
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
দক্ষিণে ‘ডায়াবেটিক ধানের’ প্রথম চাষেই বাম্পার ফলন, বীজ পাবেন কই?
তাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
প্রাক-প্রাথমিক বন্ধই থাকছেতাপপ্রবাহে যেভাবে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া পেলো হামাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগ ছাড়া কোথাও বৃষ্টির আভাস নেই
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু
বিক্রি না করে মজুত, গুদামে পচে যাচ্ছে আলু