X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গুচ্ছগ্রাম যেখানে তুচ্ছ

ওমর ফারুক
০৭ জুন ২০১৬, ১৬:৫৫আপডেট : ০৭ জুন ২০১৬, ১৯:১৯

গুচ্ছগ্রাম সংলগ্ন মেঘনায় অবাধে চলছে বালু উত্তোলন

ভূমিহীনদের পুনর্বাসন করতে আশির দশকে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার মেঘনার চরের নুনেরটেকে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘গুচ্ছগ্রাম’। পুনর্বাসিত ২৭টি পরিবার এখানে সুখেশান্তিতে বসবাস করে আসছিল। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে ভাল নেই তারা। বালু দস্যুদের ড্রেজার সন্ত্রাসে সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে গ্রামের সামনের বিশাল ফসলি জমি। গ্রামের মানুষ সারাক্ষণ থাকেন নদী ভাঙনের আশঙ্কায়। তাদের অভিযোগ, বালুদস্যুদের কারণে একদিন হয়ত গুচ্ছগ্রামটি বিলীন হয়ে যাবে।

সোনারগাঁও উপজেলার বৈদ্যরবাজার থেকে ট্রলারযোগে প্রায় আধঘণ্টা গেলে গুচ্ছগ্রামটির অবস্থান। গ্রামটি পড়েছে উপজেলার বারদী ইউনিয়নে। গুচ্ছগ্রামের পাশে রয়েছে নূনেরটেক ও টেকপাড়া নামের গ্রাম। মূল জনপদ থেকে বিচ্ছিন্ন এসব গ্রামে যাতায়াতে নৌপথই একমাত্র ভরসা। গুচ্ছগ্রামে বর্তমানে জনসংখ্যা তিন শতাধিক।

গত মাসে সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গুচ্ছগ্রামের পূর্বপাশে মেঘনা নদীজুড়ে ছড়িয়ে আছে অন্তত বিশটি ড্রেজার মেশিন। ড্রেজার মেশিনঘরের গায়ে পরিচালনাকারী কোম্পানির নাম লেখা ছিল- সোনার মদিনা, মাহিম ড্রেজার, বিসমিল্লাহ এন্টারপ্রাইজ, আসিফ ড্রেজার, শাহপরাণ ড্রেজিং প্রকল্প ইত্যাদি। এসব মেশিন দিয়ে সারাক্ষণ নদীর তলদেশ থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। ট্রলারে করে এ বালু নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শহর এলাকায়। আসিফ ড্রেজারের কর্মী জানান, জনৈক মোহাম্মদ আলীর অধীনে তারা নদীর তলদেশে ড্রেজিং করছেন। এ জন্য সরকারের অনুমোদন রয়েছে।

গুচ্ছগ্রাম

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এক বছর আগেও গুচ্ছগ্রামের দক্ষিণ পাশে বিশাল সবুজ চত্বর ছিল। অনেকে এ জমিতে চাষাবাদ করতেন। কিন্তু ড্রেজার দিয়ে বালু কেটে নেওয়ায় ওই ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। এখন বাকি আছে শুধু গ্রামটি। তারা বলেন, বালু সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে পারে না। কথা বললেই মিথ্যা মামলা দিয়ে কাউকে জেলে, কাউকে গ্রামছাড়া করা হয়েছে।

গুচ্ছগ্রামের ভেতরে রয়েছে একমাত্র স্কুল ‘মায়াদ্বীপ জেলে শিশু পাঠশালা’। গ্রামের মাঝখানে ২০১২ সালে আর্সেনিকমুক্ত গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয় ইন্টিগ্রেটেড কমিউনিটি বেইজড আর্সেনিক মিটিগেশন প্রজেক্ট, বাংলাদেশের মাধ্যমে। সংস্কার না হওয়ায় সেটি আর আগের মত কাজ করছে না। এ কারণে পানি উত্তোলন করতেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বাসিন্দাদের।

বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপকালে কেউ নাম প্রকাশ করে কিছু বলতে রাজি হননি। বালুদস্যুদের নাম কেউ ভয়েও বলতে চান না। সবার মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। তবে নৌকার মাঝি আবু বকর বলেন, শুধু এই গুচ্ছগ্রাম বা নুনেরটেকই নয়, নদীর পূর্বপ্রান্তে কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার রামপ্রসাদের চর, বড়ইকান্দির চর, মহিষার চরও ড্রেজার সন্ত্রাসের শিকার। যেখানে-সেখানে নদীর তলদেশ কাটায় এসব গ্রামের জমিও বিলীন হয়ে গেছে।

ভূমিহীনদের পুনর্বাসন করতে ‘গুচ্ছগ্রাম (সিভিআরপি)’ নামে সরকারের একটি প্রকল্প রয়েছে। সম্প্রতি এই প্রকল্পের প্রথম পর্ব সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে দ্বিতীয় পর্ব। এই দ্বিতীয় পর্বের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সরকারের যুগ্মসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা মো. মাহবুব-উল-আলম। বৃহস্পতিবার তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, সোনারগাঁওয়ের গুচ্ছগ্রামটির সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে। জবাবে তিনি বলেন, এটা অনেক আগের প্রকল্প। এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে এটা বলতে পারি যে, গুচ্ছগ্রাম স্থাপনের পর আমরা সেগুলোকে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করি। এরপর থেকে স্থানীয় প্রশাসনই গুচ্ছগ্রামের দেখাশোনা করে।

বালু উত্তোলনের কারণে ভাঙনের কবলে গুচ্ছগ্রাম

প্রকল্প পরিচালকের সঙ্গে কথা বলার পর এ প্রতিবেদক যোগাযোগ করেন সোনারগাঁও উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু নাসের ভূঁইঞার সঙ্গে। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, মেঘনার চরে আসলে ওটা গুচ্ছগ্রাম না। কারণ গুচ্ছগ্রামে যেসব জিনিস থাকার কথা সেখানে তা নেই। এরশাদ আমলে ২৭টি পরিবারকে সেখানে সেটেলার হিসেবে জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। এ কারণে গ্রামটাকে অনেকে এরশাদনগরও বলে থাকেন। সরকারি কাগজপত্রে এটা নুনেরটেক হিসেবে চিহ্নিত।

আবু নাসের ভূঁইঞা বলেন, নুনেরটেকের পাশে কিছু এলাকায় চর জেগেছিল, এটাই কাটা হয়েছে। এই চর কেটে বালু সরানো হয়েছে নদীর নাব্যতা রক্ষায়। এ জন্য আমরা নির্ধারিত শর্তে চর কাটার অনুমোদন দিয়ে থাকি। তিনি বলেন, কেউ শর্ত ভঙ্গ করে বালি কাটছে এমন অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নিই। এ ছাড়া নিয়মিত মোবাইল কোর্টও পরিচালনা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে অবৈধভাবে বালু কাটার দায়ে কয়েক জনকে কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি জরিমানাও করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের জন্য ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন নোয়াখালী জেলার (বর্তমানে লক্ষ্মীপুর) রামগতি থানার ‘পোড়াগাছা গুচ্ছগ্রাম’ উদ্বোধন করেন। এ গুচ্ছগ্রামে তখন ১৪৭০টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়। খাস জমি ব্যবহার করে ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের এটাই ছিল প্রথম প্রচেষ্টা।এরপর লক্ষ্য বাস্তবায়নে সরকার গুচ্ছগ্রামের পাশাপাশি আদর্শগ্রাম প্রকল্পও গ্রহণ করে।

আরও পড়ুন:
ঝিনাইদহে পুরোহিত হত্যাকাণ্ড: হত্যার আগে মোটরসাইকেলে ঘুরঘুর করছিলেন তিন যুবক

জামায়াতের লোগো পরিবর্তন: ‘আক্বিমুদ্দিন’-এর বদলে লাল সবুজ

তনুর ডিএনএ প্রতিবেদন হস্তান্তর

ওএফ/ এপিএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
পরিবারের অভাব দূর করতে সিঙ্গাপুরে গিয়ে লাশ হয়ে ফিরলেন রাকিব
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
কেমন চলছে ভারতের লোকসভার দ্বিতীয় দফার ভোট?
সাফের আগে চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে সাবিনাদের ম্যাচ
সাফের আগে চাইনিজ তাইপের বিপক্ষে সাবিনাদের ম্যাচ
কানের ধ্রুপদি বিভাগে শ্যাম বেনেগালের ‘মন্থন’
কানের ধ্রুপদি বিভাগে শ্যাম বেনেগালের ‘মন্থন’
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ