X
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

দুঃস্বপ্নের রাত, মমতার ইতিকথা

সালমান তারেক শাকিল
৩০ জুন ২০১৭, ১৯:৪৯আপডেট : ০১ জুলাই ২০১৭, ১৭:১৩

রিপোর্টার্স ডায়েরি কৈশোরে একবার আব্বা বেত দিয়ে মারার পর আমাদের গ্রামের বাড়ির গোরস্থান মাইল্লাডোবায় সারারাত কবরের পাশে শুয়েছিলাম। ওই শীতের রাতে বাড়ি ফিরিনি। এমনকি আম্মা খুব চিন্তা বা কান্নাকাটি করছেন ভেবেও বাড়ি যাইনি। রাগে-অভিমানে সারারাত নিজের সঙ্গে কথা বলে খড়ের গাদায় কাটিয়ে দিয়েছিলাম।

ওই ঘটনা মধ্যযৌবনে এসেও ধাক্কা দিয়ে গেছে মাঝে মধ্যে এই ভেবে, কী সাহসের কাজটাই না করেছিলাম! এরপর বহু বছর পর খানিকটা ভয় পেলাম। যখন কর্মজীবনের কৈশোর পার করছি, গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার রাতে। তখন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের মৃত্যু আর রাতভর অস্ত্র-গোলাবারুদের গন্ধ আর থমথমে পরিবেশ দেখে কিছুটা ভড়কে গিয়েছিলাম।বাংলাদেশের ইতিহাসে এটাই ছিল সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক জঙ্গি হামলা। ধর্মের বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে একদল তরুণকে বিপথগামী করে কেড়ে নেওয়া হয় দেশি-বিদেশি ২০ জনের প্রাণ। অত্যন্ত নৃশংসভাবে নিহত মানুষগুলোর কথা ভেবে এখনও আঁতকে উঠি।

১ জুলাই ২০১৬, শুক্রবার। নিত্যদিনের মতো হাতিরঝিলের পশ্চিম মোড়ে আড্ডা দিচ্ছিলাম সংবাদ-সহকর্মী ও বন্ধুদের সঙ্গে। রাত পৌনে ১০টার দিকে বন্ধু-সাংবাদিক মুনিফ আম্মারকে ফোন করে তার খালামনি সাফিনা রহমান বললেন, ‘গুলশানের দিকে আসিস না, গোলাগুলি হচ্ছে।’ মুনিফের মুখে একথা শুনে ‘ঈদের আগে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ ভেবে আড্ডায় মনোযোগ দিলাম। এভাবে আরও প্রায় মিনিট পনেরো কেটে গেল আড্ডাতেই।

তখনকার বাংলামেইলের (বর্তমানে বাংলা ট্রিবিউনের রিপোর্টার) ক্রাইম রিপোর্টার রাফসান জানিকে বললাম, ‘খোঁজ নাও, তুমি তো মিয়া ক্রাইম রিপোর্টার!’ দুয়েকটা অনলাইনে নজর যেতেই ঘটনার তীব্রতার আঁচ লাগলো মনে। সহকর্মী-বন্ধুদের মধ্যে মুনিফ আর অনুজ রাফসানকে সঙ্গে নিয়ে পৃথক মোটরসাইকেলে চড়ে ছুটলাম গুলশান-২ নম্বরের উদ্দেশ্যে।

গুলশানের শুটিং ক্লাব মোড়ে আসতেই পুলিশের বাধা। কারণ ততক্ষণে গুলশানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। সাংবাদিক পরিচয় জেনে ছাড়লেন তারা। রুদ্ধশ্বাসে মোটরসাইকেল নিয়ে ছুটলাম। ঘড়িতে সম্ভবত তখন রাত সোয়া ১১টা। ৭৯ নম্বর সড়কের প্রবেশমুখের একপাশে মোটরসাইকেল রাখতেই চোখে পড়লো আইজিপি শহীদুল হক কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলছেন। কান পেতে তার কথা শুনলাম— ‘ভয় পাবেন না, আমাদের বাহিনী কাজে নেমেছে।’

আশেপাশে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা। কারণ তাদের সন্তানরা হলি আর্টিজানের ভেতরে। আতংক-দুশ্চিন্তায় তাদের চোখে-মুখে ভয় আর কান্না। নিজের নাম না জানিয়ে এক বাবা জানালেন, তার মেয়েও ভেতরে আছে। কিছুক্ষণ আগে সন্তানের সঙ্গে তার কথা হয়েছে।

তখনও কিন্তু ঘটনার ভয়াবহতা সম্পর্কে খুব একটা বুঝে উঠতে পারিনি। ধীরে ধীরে ভেতরের দিকে এগোতে থাকি। থমথমে পরিবেশ এবং পুলিশ-র্যা ব ও সাদা পোশাকে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েক হাজার সদস্যের উপস্থিতি ও তাদের তৎপরতা দেখে বুঝতে অসুবিধা হলো না, ঘটনা অনেক বড়।

অভিভাবকের বক্তব্য নিয়ে অফিসে ফোনে দুই টুকরো তথ্য দিয়ে গুলশানকে ঘিরে সবার উদ্বিগ্নতার খবর ব্রেক করি, সঙ্গে দিলাম ছবি। মুনিফ আম্মার ও রাফসানের সহযোগিতায় অফিসে নিয়মিত বিরতিতে খবর পাঠাতে থাকি। এর মধ্যে একে-একে কথা হতে থাকে দর্শনার্থী, গোয়েন্দা ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য, এলাকাবাসী এবং অত্যুৎসাহী মানুষের সঙ্গে। তাদের বক্তব্য নিয়ে দেরি না করে পাঠিয়েছি বাংলা ট্রিবিউন অফিসে।

একসময় ৭৯ নম্বর সড়ক দিয়ে প্রবেশ করে ডানে ৮১ ও ৮২ নম্বর সরু সড়ক রেখে একেবারে মোড়ের কাছাকাছি যাই। গোয়েন্দারা তখন ধারণা করছিলেন, এই বেকারির বেশিরভাগ গ্রাহক বিদেশি। সবুজ উঠোন আর পরিচ্ছন্ন খাবারের জন্য গুলশান-বারিধারা লেকপাড় ঘেঁষে দ্বিতল হলি আর্টিজান বেকারি উচ্চবিত্ত ও বিদেশিদের মধ্যে জনপ্রিয়। একথা শুনে বুঝলাম এই রেস্তোরাঁ কেন জঙ্গিদের লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠলো!

সালমান তারেক শাকিল সময় যায়। রাত সাড়ে ১১টার মধ্যে ৭৯ নম্বর সড়কের মোড়ে নিরাপত্তাবাহিনীর ব্যারিকেড তৈরি হয়। ক্যামেরা নিয়ে সংবাদকর্মীদের ৮২ নম্বর সড়কের একটু সামনে দাঁড়াতে দিলেও ঘটনাস্থল এই পথের মাথায়। বিএনপি বিটে কাজ করার সুবাদে গুলশান-২-এর ৭৯ নম্বর সড়কে বহুবার যেতে হলেও এর শেষ প্রান্তে হলি আর্টিজান বেকারি বা লেকভিউ হাসপাতালে কখনও যাওয়া হয়নি। এ কারণে সুনির্দিষ্টভাবে লক্ষ্যস্থল চিহ্নিত করতে অনেকটা বেগ পেতে হয়েছে।
প্রায় ১২ থেকে ১৫ ফুট ৭৯ নম্বর সড়কের দু’পাশে ইট-পাথরের অট্টালিকা, সবুজ গাছগাছালি ঘেরা বাসভবন, একাধিক দূতাবাস। রাস্তার ওপর দিয়ে দু’পাশের বিভিন্ন প্রজাতির গাছের ডালপালা ছড়িয়ে আছে। ৭৯ নম্বর সড়কটি দুই ভাগ বলা চলে। পশ্চিম দিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বাসভবন বাঁয়ে রেখে কয়েকটি দূতাবাস পেরিয়ে ইরান দূতাবাস ঘেঁষে একটি মোড়। আর পূর্বদিকে ৩০০-৪০০ গজ এগিয়ে গেলে হলি আর্টিজান বেকারি। সড়কটির পূর্ব অংশের সব ভবনই বহুতল, কোনোটি সাদা কাচঘেরা। কোনোটি আবার লাল-সাদা রঙা ইট-পাথরের তৈরি।
রাত পৌনে ১২টার দিকে কানে কানে ছড়িয়ে পড়ে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন নিহত হয়েছেন। ৭৯ নম্বর সড়ক ছেড়ে সহকর্মী মুনিফকে নিয়ে দেই ছুট ইউনাইটেড হাসপাতালের দিকে। ততক্ষণে ৭০ ও ৭১ নম্বর সড়ক এবং ইরান দূতাবাসের সামনের সড়কসহ হাসপাতালটির সামনের সড়কগুলো আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য আর সংবাদকর্মীদের ভরে গেছে। পাশাপাশি উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা সন্তানদের সন্ধানে মরিয়া হয়ে পায়চারি করছেন।
এরই মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে জঙ্গিরা টিভি ও অনলাইন পত্রিকা ফলো করতে পারে। তাই রাত ১১টার দিকে র্যা বের ডিজি বেনজীর আহমেদ টেলিভিশনে লাইভ না দেখাতে অনুরোধ করেন। এসব শঙ্কা ও ঘটনাকে সামনে রেখে অভিভাবকদের মুখেও কুলুপ। সংবাদকর্মী মনে করলেই শুনি তাদের ফিসফাস; চোখে কান্নার জল, মুখে নিশ্চুপ আর্তনাদ। পুরুষ অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন পায়চারি আর ক্ষণে-ক্ষণে খোঁজ,‘কী খবর। অ্যাকশনে কি যাবেন? কী অবস্থা?’ দুয়েকজন নারী অভিভাবকদের আশ্বস্ত করছেন, ‘কথা হয়েছে, ও তো ভেতর থেকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়েছে, ভালো আছে।’
হাসপাতালের সামনে থাকা আইজিপির প্রটোকলে থাকা এএসআই ইসমাইল আমাকে জানান, ‘রাত সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে বনানী থানার ওসি সালাহউদ্দিন ইউনাইটেডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার লাশ ওই চিকিৎসালয়ের জরুরি বিভাগের পাশে সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। এসি রবিউল ইসলামের লাশও একই হাসপাতালে আছে। রাত সাড়ে ১২টার কিছুক্ষণ আগে এনএসআইয়ের এক কর্মকর্তা জানান, রাত ১২টার পর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডিবির এসি রবিউল করিম মারা যান।

এই খবর দুটো অফিসে দিয়ে ভেতরে-ভেতরে নিজের সঙ্গে বোঝাপড়া শুরু হয়, কী ভয়াবহ ঘটনার সামনেই না দাঁড়িয়ে আছি! কিছুটা কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে হেড অব নিউজ (তখনকার সিএনই) হারুন উর রশীদ ভাইকে ফোন করে ঘটনা খুলে বললাম। প্রকাশ করলাম নিজের অসহায়ত্ব— ভাই, এমন ঘটনা! আর পারবো না। আরও প্রতিবেদক লাগবে। তার নির্দেশে আজিমপুরে থাকা সহকর্মী রশীদ আল রুহানীকে ফোনে বললাম, দ্রুত আসো। ওদিকে হারুন ভাইও ফোনে গুলশানে আসার নির্দেশ দেওয়ার প্রায় আধঘণ্টার মধ্যে রুহানী গুলশান-২-এ আসে। ঘড়ির কাঁটা রাত ১টার ঘর ছাড়িয়ে গেছে ততক্ষণে। পেটে ক্ষুধার চোট টের পাই। প্রাথমিক খবরগুলো দেওয়ার পর ক্ষুধা আরও বাড়তে থাকে।

ইতোমধ্যেই সহকর্মী মুনিফ আম্মারের খালার ফোন, ‘বাবা তুই দ্রুত বাসায় চলে আয়। ডিউটি করা লাগবে না।’ ঘটনার ভয়াবহতায় মুনিফ রাজি হয় না, কিন্তু ক্ষুধার কাছে হেরে যাই আমরা। কিছু ভাবার সময় নেইনি। মুনিফ আমাকে নিয়ে রওনা হলো রোটারি বাংলাদেশের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাফিনা রহমানের ৮৫ নম্বর সড়কের ফ্ল্যাটের দিকে। মিনিট তিনেকের মধ্যেই তার খালার বাসায় পৌঁছে গেলাম। বাসার বারান্দায় দাঁড়িয়ে অপেক্ষারত পঞ্চাশোর্ধ্ব সাফিনা রহমান তাড়া দিলেন দু’জনকেই, ‘আয় বাবা, আয়।’ দোতলা সিঁড়ি বেয়ে উঠতে না উঠতেই, দু’পা এগিয়ে আমাদের ভেতরে নিয়ে গেলেন তিনি।

ফ্ল্যাটে ঢুকেই চার্জ ফুরিয়ে আসা মোবাইল চার্জে দিলাম। ফ্রেশ হয়ে কয়েক পদের রান্না গোগ্রাসে গিললাম দু’জনই। পাশে বসে সাফিনা রহমান পাতে তুলে দিচ্ছেন। পাশাপাশি কাজের বুয়াকে নির্দেশ দিয়ে যাচ্ছেন, ‘বোতলে পানি ভরো। ব্যাগে বিস্কুট, কলা, পিঠা, যা যা আছে ভরো।’ আমি বিস্ময়ে এক মায়ের তীব্র মমত্ববোধ দেখছিলাম। মনে হচ্ছিল, আমার মা থাকলেও তাই করতেন। খাবার খাওয়ার সময় তিনি মনে করিয়ে দিলেন, ‘বউকে ফোন করেছিস? জানা, তুই ভালো আছিস। আহারে মেয়েটা কেমন আছে!’ আমার সব আবেগ যেন তার কথায় ঢেউ খেলছিল। বাইরে থাকা রাফসানসহ অন্যান্য সহকর্মীদের ক্ষুধার্ত অবয়ব চোখে ভাসতেই মনে হচ্ছিল, কত না খুশি হবে খাবারগুলো পেলে।

আমি নিশ্চিত ছিলাম, বহু-বহু প্রতিবেদক খাবারের দোকান না থাকায় ক্ষুধার যন্ত্রণায় ভুগছেন আর পানির তৃষ্ণায় তারা ইতোমধ্যে পিপাসার্ত। মিনিট পনেরোর মধ্যেই বেরিয়ে পড়লাম সাফিনা রহমানের বাসা থেকে। পেছনে ফেলে এলাম মাতৃসম ভালোবাসা আর স্নেহাশিষ আদর। বারবার মুনিফকে তিনি ডেকে বলছিলেন, ‘না গেলে হয় না!’ মুনিফ নিরুত্তর থাকেন, আমার মুখেও উত্তর নেই। মাথা নিচু করে আবার খবরের সন্ধানে ইউনাইটেড হাসপাতালে যেতে বেরিয়ে পড়লাম। ওই রাতে হাসপাতালের সামনে থাকা বেশ কয়েকজন প্রতিবেদক ও গোয়েন্দারা খাবার গ্রহণ করেন এবং পানির পিপাসা মেটান। কিন্তু কেউই জানেননি রোটারিয়ান সাফিনা রহমানের কত আর্তি ছিল তাদের কথা ভেবে।

এরই মধ্যে বাংলা ট্রিবিউনের সহকর্মী আমানুর রহমান রনি ততক্ষণে স্পটে। এলেন আমাদের চিফ ফটোগ্রাফার নাসিরুল ইসলাম। রনিকে ৭৯ নম্বরের দিকে থাকতে বললাম। আমি বেছে নিলাম হাসপাতালের সামনের সড়ক। ধীরে ধীরে রাত বাড়ে, সরকারের সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আসে। রাত ৩টায় বলা হচ্ছিল, অভিযান শুরু হবে। সড়ক থেকে সংবাদকর্মীদের সরিয়ে দেওয়া হয়। এরপর কিছুটা ধীরগতি। ভোর ৪টার দিকে শোনা যায়, অভিযান শুরু হবে।

সরাসরি নিজের চোখে অভিযান দেখবো, এই ভেবে ইরান দূতাবাসের সামনে গোয়েন্দাদের সঙ্গে গা মিলিয়ে দিলাম। পরিস্থিতি থমথমে। পুলিশের গুলশান জোনের ডিসি মুশতাক আহমদ তাড়া দিচ্ছিলেন হ্যান্ডমাইকে, ‘অনুগ্রহ করে সড়ক থেকে সরে দাঁড়ান।’ সাহস নিয়ে তার অনুরোধ না শুনে ইরান দূতাবাসের উত্তর দিকে দাঁড়িয়ে রইলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরো সড়ক শূন্য হয়ে গেল। শুধু বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের আনাগোনা আর হাতে-হাতে পিস্তল, পিঠে-হাতে রাইফেল। নিরাপত্তাবাহিনীর কঠোর ও সক্রিয় তদারকি এবং থমথমে পরিস্থিতিতে ভড়কে যাই। ভয় এতটাই যে, অফিসে থাকা হারুন ভাইকে কল করি। তিনি বললেন, ‘সরে যাও। নিজের জীবনের ঝুঁকি নিও না।’ তার নির্দেশের পর ভয় আরও আঁকড়ে ধরে। এবার ইরান দূতাবাসের পাড় ঘেঁষে ডাস্টবিনের কোল ধরে ৭৯ নম্বর সড়কের পশ্চিম দিকে ঝুঁকে কিছুটা আর্তচিৎকার করবো; এমন সময় মুনিফকে দেখে আশ্বস্ত হই। নিরাপদে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে গা মিশিয়ে দিই। তবে ভয়ের ছাপ তখনও মনে রয়ে গেছে।

ঘটনার আকস্মিকতা ও ভয়াবহতা টের পেয়ে সত্যিই ভয় হয়েছিল। আশঙ্কা কাজ করছিল রাষ্ট্রের কথা ভেবে, বিদেশিদের দূরাবস্থা জেনে, রাজনৈতিক সম্ভাব্য পরিস্থিতি এমনকি দেশের ভবিষ্যৎ নিয়েও। যদিও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার অনেকটাই শক্ত হাতে জঙ্গিবাদ মোকাবিলা করেছে আমাদের আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সাহসিকতায়। এজন্য তাদের অভিনন্দন।

এভাবে কাটলো ভোররাত। ৮২ নম্বর সড়ক দিয়ে ঘুরে ফের ইরান দূতাবাসের দক্ষিণ-পূর্বদিকে এগিয়ে যাই। শুরু হয় ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। পূব আকাশে সূর্য দেখা যায় না। সারারাত দাঁড়িয়ে থাকায় দু’পায়ে তীব্রভাবে ব্যথা অনুভূত হয়। স্পটে আসতে থাকেন বাংলা ট্রিবিউনের ক্রাইম ও অন্যান্য টিমের সদস্যরা। সহকর্মীদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে রওনা দেই বনশ্রীর বাসার দিকে। পেছনে বসলেন আরেক অনলাইন পত্রিকার সংবাদকর্মী শামীম ভাই। 

ফিরতে ফিরতে অফিসে আপডেট জানাচ্ছি, ডেস্কের এক সহকর্মী জানালেন, ১ জুলাই বিকাল থেকে দায়িত্বরতরা অনেকেই এখনও অফিসে আছেন। রিমঝিম বৃষ্টির মধ্যে ক্লান্ত শরীর নিয়ে মোটরসাইকেল চালাতে চালাতে ভাবছিলাম, বাকি সহকর্মীদের চেয়ে অনেক কম কাজ করেই ক্লান্ত হয়ে গেলাম! টানা ১৬-১৭ ঘণ্টা অফিসে দায়িত্বরত সহকর্মীদের জন্য সহানুভূতি হচ্ছিল।

সব মিলিয়ে ২০১৬ সালের ১ জুলাই সারাদেশের মতো আমাদের সংবাদকর্মীদের জন্যও ছিল একটি দুঃস্বপ্নের রাত। যদিও সাংবাদিকতা জীবনের স্বল্প সময়ে এত বড় একটি ঘটনা কাভার করার অভিজ্ঞতাও জুটে গেল।

আরও পড়ুন-
হলি আর্টিজান এখন

অবিন্তা নেই, বেঁচে আছে তার স্বপ্ন

তুমি কোথায়, ‍গুলশানে জঙ্গি হামলা!

দুর্বিসহ স্মৃতি নিয়ে বেঁচে আছেন তারা

এসি রবিউলের সন্তানদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

/জেএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মেধাবী দুই বোনের স্বপ্ন পূরণে ‘বাধা’ আর্থিক সংকট
মেধাবী দুই বোনের স্বপ্ন পূরণে ‘বাধা’ আর্থিক সংকট
জুভেন্টাসকে শিরোপা জিতিয়েও যে কারণে চাকরি হারালেন অ্যালেগ্রি 
জুভেন্টাসকে শিরোপা জিতিয়েও যে কারণে চাকরি হারালেন অ্যালেগ্রি 
‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে খাদ্যে ফরমালিন মেশানো বন্ধ হতো’
‘দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে খাদ্যে ফরমালিন মেশানো বন্ধ হতো’
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকরা কেন ঢুকবেন, প্রশ্ন ওবায়দুল কাদেরের
বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকরা কেন ঢুকবেন, প্রশ্ন ওবায়দুল কাদেরের
সর্বাধিক পঠিত
অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ইসির
অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ইসির
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
ইসরায়েলগামী অস্ত্রের জাহাজ নোঙর করতে দেয়নি স্পেন
ইসরায়েলগামী অস্ত্রের জাহাজ নোঙর করতে দেয়নি স্পেন
দাম কমেছে সবজি-মাংসের, তবু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক
দাম কমেছে সবজি-মাংসের, তবু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির