লেখক এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে হত্যার উদ্দেশ্যেই হামলা করা হয়েছিল বলে জানিয়েছে র্যাব। তাদের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হামলাকারী ফয়জুর হাসান ওরফে ফয়জুল ওরফে শফিকুর দাবি করেছে, সে একাই এই হামলা চালিয়েছে। র্যাব বলছে, ফয়জুল জঙ্গিবাদী ধারণায় উদ্বুদ্ধ। সে কারণে জাফর ইকবালকে ‘ইসলামের শত্রু’ মনে করেই হত্যা করতে চেয়েছিল।
শনিবার (৩ মার্চ) বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে শাবি ক্যাম্পাসে এক অনুষ্ঠান চলাকালে জাফর ইকবালকে পেছন থেকে মাথায় ছুরিকাঘাত করে ফয়জুর। এ সময় হাতেনাতে আটক করা হয় তাকে। তাকে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশে হস্তান্তর করেছে র্যাব। জাফর ইকবালকে হত্যাচেষ্টায় দায়ের করা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
র্যাব-৯ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলী হায়দার আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে বলেছে, হত্যার উদ্দেশ্যেই জাফর ইকবালকে হামলা করেছিল। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী এ হামলাটি হয়েছে।’
শনিবার রাতেই জানা যায়, হামলাকারী ফয়জুরের বাবার নাম মাওলানা আতিকুর রহমান। ১৫ বছর ধরে তারা শাবির পাশে টুকেরবাজার ইউনিয়নের শেখেরপাড়ায় বসবাস করে আসছে। তবে ফয়জুলের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার জগদল ইউনিয়নে।
ফয়জুরের সঙ্গে হামলার পরিকল্পনায় বা সহযোগিতায় আরও কেউ জড়িত ছিল কিনা, জানতে চাইলে আলী হায়দার আজাদ বলেন, ‘তার কাছ থেকে আমরা বেশকিছু তথ্য পেয়েছি। তবে সে একাই হামলা করেছিল বলে দাবি করেছে।’ কী কারণে জাফর ইকবালের ওপর হামলা—এমন প্রশ্নে র্যাবকে ফয়জুর বলেছে, ‘জাফর ইকবাল ইসলামের শত্রু, তাই তাকে মেরেছি।’
ফয়জুল জঙ্গিবাদী ধারণায় উদ্বুদ্ধ মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, ‘অন্য কোনও যোগাযোগের কথা স্বীকার না করায় তার আদর্শিক পরিচয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সে দাবি করেছে, বিভিন্ন বইপত্র পড়ে এবং ইউটিউবে অনেক প্রোগ্রাম দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছে।’ জিজ্ঞাসাবাদে ফয়জুল বেশ কিছু বিভ্রান্তিকর তথ্য দেয় বলেও জানান আলী হায়দার।
এর আগে, রবিবার (৪ মার্চ) দুপুর ৩টায় র্যাব-৯ সদর দফতরে প্রেস ব্রিফিংয়ে আলী হায়দার আজাদ জানান, জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারী ফয়জুর জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী বলে প্রাথমিকভাবে তারা ধারণা করছেন। তিনি বলেন, ‘ফয়জুরের কাছ থেকে র্যাব বিভিন্ন ধরনের তথ্য পেয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে র্যাবের একটি দল কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে র্যাব তিন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এ ধরনের হামলা কেউ একা করতে পারে না। তার সঙ্গে আরও কেউ ছিল বলে আমরা ধারণা করছি। তবে জিজ্ঞাসাবাদে ফয়জুর র্যাবকে জানায়— সে একাই এ হামলা চালিয়েছে।’
ব্রিফিংয়ে র্যাব-৯ অধিনায়ক আরও বলেন, ‘ফয়জুর মাদ্রাসায় দাখিল পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। এরপর সে আর পড়েনি। বিভিন্ন সময়ে সে বিভিন্ন স্থানে কাজ করেছে। তার সঙ্গে আর কারা জড়িত, সেগুলো তদন্ত করে দেখছে র্যাব। হামলার ঘটনার মূল বিষয়টি দেখবে পুলিশ। আর পুলিশের পাশাপাশি আলোচিত এ ঘটনার ছায়াতদন্ত করবে র্যাব।’
উল্লেখ্য, শনিবার বিকালে ড. জাফর ইকবালকে ছুরিকাঘাত করা হলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে সিলেটের ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা ফয়জুরকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। পরে র্যাবের হেফাজতে তাকেও চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরে জাফর ইকবালকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঢাকা নিয়ে আসা হয়। রাত রাত ১১টা ৫৮ মিনিটে তাকে ভর্তি করা হয় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ)। রবিবার সকালে জাফর ইকবালের চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান কনসালট্যান্ট সার্জন বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের মেজর জেনারেল মুন্সি মুজিবর রহমান এক ব্রিফিংয়ে জানান, জাফর ইকবালের শরীরে একাধিক আঘাত থাকলেও তা গুরুতর নয়। তবে সম্পূর্ণ সুস্থ হতে কয়েকদিন সময় লাগবে। তার মানসিক অবস্থাও ভালো।
আরও পড়ুন-
ফয়জুল জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী: র্যাব
হামলাকারী ফয়জুলের মা-বাবা আটক
ফয়জুলকে পুলিশে হস্তান্তর, ওসমানীতে ভর্তি
জাফর ইকবালের ওপর হামলা: ‘লোন উলফ’ না ‘টার্গেটেড’?
জাফর ইকবালকে আগেও অনুসরণ করেছিল হামলাকারী ফয়জুল
জাফর ইকবালের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা দুই পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার