শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবি) অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে আগে বেশ কয়েকবার অনুসরণ করেছিল হামলাকারী ফয়জুর হাসান ওরফে ফয়জুল ওরফে শফিকুর। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আশপাশ এলাকায় সুবিধাজনক স্থান খুঁজতে জাফর ইকবালের পিছু নেয় সে। এরই ধারাবাহিকতায় গত শনিবার (৩ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠান চলাকালে জাফর ইকবালকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালায় ফয়জুল। বর্তমানে তিনি ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে তিনি শঙ্কামুক্ত।
ড. জাফর ইকবালকে অনুসরণ করার বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন সিলেট র্যাব-৯ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আলী হায়দার আজাদ। তিনি বলেন, ‘ফয়জুল গতকাল হামলার আগে ড. জাফর ইকবালকে বেশ কয়েকবার অনুসরণ করেছিল। তবে কোন কোন স্থানে অনুসরণ করেছিল তা স্পষ্টভাবে বলছে না সে। তদন্তের আরও অগ্রগতি হলে বিস্তারিত জানা যাবে।’
ফয়জুল জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী বলে জানিয়েছে র্যাব-৯। এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, ফয়জুল জঙ্গিবাদে বিশ্বাসী। তার কাছ থেকে র্যাব বিভিন্ন ধরনের তথ্য পেয়েছে। সেই তথ্যের ভিত্তিতে র্যাবের একটি দল কাজ করে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে র্যাব তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এ ধরনের হামলা কেউ একা করতে পারে না। তার সঙ্গে আরও কেউ ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে ফয়জুল র্যাবকে জানায়—সে একাই এ হামলা চালিয়েছে।
এর আগে শনিবার রাতে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ফয়জুল র্যাবকে জানায়, ‘জাফর ইকবাল ইসলামের শত্রু, তাই তাকে মেরেছি’।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণত, এ ধরনের হামলার আগে টার্গেট ব্যক্তিকে নিয়মিত অনুসরণ করা হয়। তিনি কখন কোথায় যান এবং কোথায় থাকেন, তার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে হামলাকারীরা। একইভাবে ড. জাফর ইকবালকেও অনুসরণ করা হয়েছিল।
শনিবার বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে শাবি ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠান চলাকালে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে পেছন থেকে মাথায় ছুরিকাঘাত করে ফয়জুল। এরপর জাফর ইকবালকে সিলেটের ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। আর ছাত্ররা ফয়জুলকে আটকে মারধর করে। পরে তাকে র্যাব হেফাজতে নেওয়া হয়। আজ তাকে পুলিশের কাছে হস্তান্তরের পর চিকিৎসার জন্য ওসমানী মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়।
জাফর ইকবালকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর রাতেই ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। রাত ১১টা ৫৮ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা তাকে। রবিবার সকালে জাফর ইকবালের চিকিৎসায় গঠিত মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান কনসালটেন্ট সার্জন বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের মেজর জেনারেল মুন্সি মুজিবর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, জাফর ইকবালের মাথায় চারটি, পিঠে একটি, বাম হাতে একটি আঘাত লেগেছে। তবে তা গুরুতর নয়। চামড়ার ওপরে আঘাত লেগেছে। এরপরও তার সম্পূর্ণ সুস্থ হতে কয়েকদিন সময় লাগবে। তার মানসিক অবস্থাও ভালো।
রবিবার দুপুরে জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনায় শাবির রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হোসেন জালালাবাদ থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় ফয়জুলকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।