X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

যেভাবে পিলখানা হত্যা মামলার শুরু ও শেষ

জামাল উদ্দিন
২৭ নভেম্বর ২০১৭, ১৯:৩৮আপডেট : ২৮ নভেম্বর ২০১৭, ১৭:৪০

 

পিলখানা হত্যাকাণ্ড দু’দিন ধরে পিলখানায় নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায় বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) সদস্যরা। ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি অগ্নিসংযোগ, লাশগুমের চেষ্টা, লুটপাট ও নারী নির্যাতনসহ সব ধরনের অপরাধের সঙ্গেই জড়িত ছিল বিডিআরের এই বিপথগামী সদস্যরা। দু’দিনে বিপথগামী বিডিআর সদস্যদের হাতে তৎকালীন বিডিআর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। এছাড়া বেসামরিক ও বিডিআর সদস্যসহ নিহত হন আরও ১৭ জন। এই ১৭ জনের মধ্যে ডিজির স্ত্রীসহ সাতজন বেসামরিক ব্যক্তি, নয়জন বিডিআর সদস্য ও একজন সেনা সদস্য রয়েছেন।

ঘটনার পর বিস্ফোরকসহ অসংখ্য আলামত সংগ্রহ করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। একদিন পর থানায় ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানার তখনকার ওসি নবজ্যোতি খিসা বাদী হয়ে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে ডিএডি তৌহিদসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত কয়েক হাজার বিডিআর সদস্যের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে মামলাটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তর করা হয়।

পিলখানা হত্যাযজ্ঞ মামলার পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাংলাদেশ তথা পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি আসামির মামলা হচ্ছে পিলখানা হত্যা মামলা। এ মামলার প্রক্রিয়া মানে মহাযজ্ঞ। তবে একজন আসামির হত্যা মামলাটি যে প্রক্রিয়ায় শুরু ও শেষ হয় এই মামলাটিও একই প্রক্রিয়াতেই শুরু ও শেষ হয়েছে। তবে এখানে অনেক মানুষ ও আলামত জড়িত রয়েছে। সেজন্য এ মামলাটি নিয়ে আমরা যারা সংশ্লিষ্ট ছিলাম সবাই সতর্ক ছিলাম, যেন  কোনও নির্দোষ সাজা না পায়। আবার কোনও অপরাধী যেন ছাড়া না পায়।

অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, ‘পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মামলাটির তদন্ত কাজ শুরু করে ২০০৯ সালের ১ মার্চ। সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আবদুল কাহার আকন্দ এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। তদন্ত কাজে তাকে সহযোগিতা করেছেন সিআইডিসহ পুলিশের বিভিন্ন সংস্থার প্রায় ২০০ কর্মকর্তা ও সদস্য।’ তিনি বলেন, ‘এ মামলায় প্রায় আড়াই হাজার বিডিআর সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তদন্ত শেষে সাড়ে ৮শ’ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়।’

সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় চার কিলোমিটার বিস্তৃত পিলখানার ভেতরে ৫৮টি ও বাইরে চারটি ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করেছিলেন তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। বিদ্রোহীরা বিভিন্ন ধরনের আড়াই হাজার অস্ত্রের ব্যবহার করেছিল। যার মধ্যে স্মল আর্মস পিস্তল ও রিভলবার ছাড়াও রাইফেল, এসএমজি ও এলএমজির মতো ভারী আর্মস ছিল। আলামত সংগহ করা হয় ৫ হাজার ৯৬৪টি। দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১০ সালের ১২ জুলাই পিলখানা হত্যা মামলায় ৮২৪ জনকে অভিযুক্ত করে হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দু’টি অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় সিআইডি। ২০১১ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি আরও ২৬ জনকে অভিযুক্ত করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। পরে রাজধানীর বকশীবাজারে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিশেষ এজলাস তৈরি করা হয়। ওই বিশেষ এজলাসে ২০১১ সালের ৫ জানুয়ারি দু’টি মামলারই বিচারকাজ শুরু করা হয় একসঙ্গে। এ মামলায় ৬৭৩ জনের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়। ২২ জন ম্যাজিস্ট্রেট এসব স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করেছিলেন।

২০১১ সালের ১০ আগস্ট ৮৫০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। ২০১১ সালের ২৪ আগস্ট সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু করা হয়। ৬৫৪ জন সাক্ষীর মধ্যে পাঁচশ’র কিছু বেশি সাক্ষ্য নিয়ে ২০১৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণ সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এরপর যুক্তিতর্ক ও আত্মপক্ষ সমর্থনসহ বিচারিক সব প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লেগে যায় প্রায় দুই বছর। পুলিশ, সামরিক বাহিনী ও রাজনীতিবিদদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সাক্ষী ছিলেন, পুলিশের তখনকার আইজি নূর মোহাম্মদ, র‌্যাবের তখনকার ডিজি হাসান মাহমুদ খন্দকার, বিমান বাহিনীর প্রধান শাহ্ মো. জিয়াউর রহমান, নৌবাহিনীর প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল মো. জহির উদ্দিন আহম্মেদ, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমানে খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক হুইপ ও  বর্তমানে পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও শেখ ফজলে নূর তাপসহ আরও অনেকে।

২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর পিলখানা হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করেন তৃতীয় অতিরিক্ত ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক আখতারুজ্জামান।  রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন ও ২৬২ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। বেকসুর খালাস দেওয়া হয় ২৭১ জনকে। আসামিদের মধ্যে বিডিআর সদস্য রয়েছেন ৭৮২ জন। বেসামরিক ব্যক্তি ২৩ জন। পলাতক ২০ জন। বিচার চলাকালে মারা গেছেন চার জন। জামিনে ছিলেন ১৩ জন।

বিচারিক আদালতের রায়ের পর কিছু আসামি নিয়মিত আপিল, কিছু আসামি জেল আপিল ও সরকারের পক্ষ থেকেও একটি আপিল করা হয় উচ্চ আদালতে। ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি এসব আপিলের শুনানি শুরু হয়। 

সোমবার (২৭ নভেম্বর) এই আপিল মামলার রায় ঘোষণা করেন বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ। বেঞ্চের অন্য দুই বিচারপতি হলেন মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার। আপিলের রায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া যাবজ্জীবন দেওয়া হয়েছে ১৮৫ জনকে। আর ১৯৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। খালাস দেওয়া হয়েছে ৪৯ জনকে।

 

/জেইউ/এমএনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কাপ্তাই হ্রদে পানি স্বল্পতায় কমেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন
কাপ্তাই হ্রদে পানি স্বল্পতায় কমেছে বিদ্যুৎ উৎপাদন
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
মৌলভীবাজারে ৬ জনের মৃত্যুর ঘটনা মর্মান্তিক: মানবাধিকার কমিশন
মৌলভীবাজারে ৬ জনের মৃত্যুর ঘটনা মর্মান্তিক: মানবাধিকার কমিশন
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি