X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

যে কারণে দূষিত ঢাকার বাতাস

উদিসা ইসলাম
০৬ মার্চ ২০১৯, ২৩:২১আপডেট : ০৭ মার্চ ২০১৯, ১৩:৪৯

রাজধানীতে বায়ুদূষণের যত কারণ

গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশ হওয়ায় বাংলাদেশের বাতাসে শুষ্ক সময়ে ধূলাবালির পরিমাণ এমনিতেই বেশি। তারপরেও নানা কারণে রাজধানীর বাতাসে ঘটছে ভয়াবহ বায়ুদূষণ। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী,বিশ্বের দূষিত রাজধানী শহর হিসেবে ঢাকার অবস্থান দ্বিতীয়। এই বায়ু দূষণের জন্য নানা ধরনের উন্নয়ন কাজ যতটা না দায়ী তারচেয়ে বেশি দায় নগরীর চারপাশে ছড়িয়ে থাকা ইটভাটাগুলোর। রাজধানীর চারপাশে গড়ে ওঠা কমপক্ষে পাঁচ হাজার মানহীন ইট ভাটা থেকে নির্গত ধোয়ার  বায়ুদূষণের কারণে দূষিত হচ্ছে রাজধানীর বাতাস। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,শুষ্ক মওসুমে ঢাকার বায়ু দূষণের জন্য এসব ইটভাটা দায়ী ৫৮ ভাগ। তবে পরিবেশ বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ইটভাটার বায়ু দূষণের পরিমাণ আরও বেশি।

 

মঙ্গলবার (৫ মার্চ) আইকিউএয়ার, এয়ারভিজুয়াল ও গ্রিনপিস নামের তিনটি সংস্থা যৌথভাবে গবেষণা করে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বাংলাদেশকে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বায়ু দূষণকারী দেশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তালিকায় সবচেয়ে দূষিত ৩০ শহরের মধ্যে ঢাকার অবস্থান ১৭তম। কোনও নির্দিষ্ট স্থানের বায়ুমণ্ডলে পিএমটুপয়েন্টফাইভ নামে পরিচিত দূষণকণার উপস্থিতির পরিমাণের সাপেক্ষে এই দূষণ পরিমাপ করা হয়েছে।

এদিকে আজ  বুধবার (৬ মার্চ) হেলথ অ্যালার্ট জারি করার সুপারিশ করেছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বায়ু দূষণের মাত্রা ৩০০ এর বেশি হলে সেটা ‍বিপজ্জনক। আমরা দেখেছি ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ শহরে এই মাত্রা ৪০০ এর ওপরে উঠেছিল। এই মাত্রা জনস্বাস্থ্যের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এটা হলে জনগোষ্ঠী কোনও না কোনও ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিশেষ করে শিশুদের ওপর এর প্রভাব সব থেকে বেশি পড়ে। এজন্য আমরা মাত্রা ৩০০ এর বেশি হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যেন হেলথ এমার্জেন্সি জারি করে সে সুপারিশ করেছি।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকা জেলাসহ সারা দেশে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে মানহীন ইটভাটা। ছাড়পত্রহীন এসব ইটভাটা মানছে না আবাসিক এলাকা, মানছে না কৃষি জমি। নরওয়েভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান NILU(নিলু)-র সহযোগিতায় পরিবেশ অধিদফতরের গবেষণা বলছে ,ঢাকা শহরে বায়ু দূষণের জন্য ইটভাটা দায়ী ৫৮ শতাংশ, রোড ডাস্ট ও সয়েল ডাস্ট ১৮ শতাংশ, যানবাহন ১০ শতাংশ, বায়োমাস পোড়ানো ৮ শতাংশ এবং অন্যান্য উৎস ৬ শতাংশ দায়ী।

অপরিকল্পিত ও মানহীন ইটভাটার কারণে ঢাকার বায়ু দূষিত হয় বলে মনে করেন ইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সহিদ আকতার হুসাইন। তিনি জানান,কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, পিএসসি, পার্টিকুলেট ম্যাটার ধূলিকণাসহ আমাদের এখানে দূষণের ছয় সাতটা উপাদান আছে। আমাদের দেশে দূষণের মূল কারণ পার্টিকুলেট ম্যাটার পিএম ১০ ও পিএম ২.৫।

তিনি বলেন, ঢাকায় বর্ষাকালে বায়ুদূষণ থাকে না। শীতে পার্টিকুলেট ম্যাটার ফাইন কণা যেটাকে আমরা ধুলাবালি বলি, সেটাই বায়ুদূষণের প্রধান কারণ। আর প্রধান দোষ হলো ইটভাটার। জ্বালানির কারণে ধোঁয়ার সঙ্গে যে কণা বেরুচ্ছে সেটা এতো ফাইন যে ফুসফুসে মিশে যায়, এতো ফাইন যে রক্তেও মিশে যেতে পারে। এর মাত্রা পিএম ২.৫।

এছাড়াও নির্মাণের ক্ষেত্রে নিয়ম কানুন না থাকা এবং সিমেন্ট ফ্যাক্টরিকে দায়ী করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ এখনও সিরিয়াস পরিস্থিতিতে যায়নি। তাই সময় থাকতে এ ব্যাপারে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে।’

ইটভাটার ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে রাজধানীর বাতাস

ইটখোলা যদি নতুন নিয়ম, আইন মেনে চলে তাহলে দূষণ কম হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বাসাবাড়ি বানানোর সময় কিছু নিয়ম মানার কথা। কিন্তু মানা হয় না। এগুলোকে বলা হয় স্থানীয় দূষণ। এছাড়াও পাশের দেশে কোনও দূষণ হলে বাতাসের সঙ্গে ভেসে এসে সেগুলোও আমাদের এখানে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ধূলিকণার সঙ্গে জীবাণু, হেভি মেটাল আছে কিনা সেদিকেও গবেষণায় যাওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। তিনি জানান, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল ও  রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে গবেষণার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ‍আমির হোসেন ভূঁইয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ ও শিল্পায়নের কারণে বায়ু দূষিত হচ্ছে। রাজধানীতে প্রচুর  নির্মাণের কাজ হচ্ছে যা ধুলা তৈরি করছে। অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণকাজ, আবাসিক এলাকায় শিল্প কারখানা, ইটভাটা থেকে শুরু করে কোনটাই নিয়ম মেনে করা হয় না। ঢাকা শহরের চারপাশ ঘিরে কমপক্ষে ৫ হাজার ইটভাটা আছে সেগুলো থেকে কার্বন নিঃসরিত হওয়ায় বায়ু দূষিত হচ্ছে। বাতাসে যে পরিমাণ সালফার ডাই অক্সাইড থাকে তা পানিতে মিশে চোখে জ্বালাপোড়া করায়। এতে ফুসফুসে প্রদাহ থেকে শুরু করে অনেক ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দেয়। এসব থেকে উদ্ধার পেতে করণীয় কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে কাজের জন্য যে আইন ও নিয়ম আছে সেগুলো মেনে চলার কোনও বিকল্প নেই।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এর বক্ষব্যাধি বিভাগের সভাপতি ডা. এ কে এম মোশাররফ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাতাসে যে ধূলিকণা আছে তার মধ্যে পিএম ৫ এর নীচে যেসব উপাদান সেগুলোই সবচেয়ে ক্ষতিকর। কেবল ঢাকা দূষিত হচ্ছে তা নয়, তবে দূষণ ঠেকাতে যে নিয়ম আইন আছে সেগুলো না মানার কারণে ঢাকার দূষণ দৃশ্যমান হচ্ছে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলমান প্রক্রিয়া, সেটি তো বন্ধ করা যাবে না। কিন্তু সেখান থেকে যেন ধূলিকণা ছড়িয়ে পড়ে মানুষের ফুসফুস ও রক্তপ্রবাহের ওপর প্রভাব না ফেলে সেই সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।

 

/ইউআই/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
অজানা তথ্য সামনে আনলেন পরিণীতি
অজানা তথ্য সামনে আনলেন পরিণীতি
আ. লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা সোমবার
আ. লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা সোমবার
লেবু খেলে মিলবে এই ৫ উপকারিতা
লেবু খেলে মিলবে এই ৫ উপকারিতা
বিএনপি নেতা ফালুর বিরুদ্ধে আরও একজনের সাক্ষ্য
বিএনপি নেতা ফালুর বিরুদ্ধে আরও একজনের সাক্ষ্য
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি