ডিনামাইট দিয়ে বড়-বড় পাহাড় ভাঙা হয়। ইদানিং ভাঙা হচ্ছে সভ্যতা। ক’দিন আগেই বালশামিন মন্দিরের ভেতরে প্রচুর ডিনামাইট বিস্ফোরক জমা করা হয়েছিল। পরবর্তীতে মন্দিরের ভগ্নদশার কিছু চিত্র প্রকাশিত হয়। আমরা জানতে পারি দু’হাজার বছরের ঐতিহ্য, সেখানকার পুরাতত্ত্ব বিভাগের প্রধানের মতোই শেষ করে দেওয়া হয়েছে। যে মন্দির রোমান সম্প্রদায় ঝড় ও বৃষ্টির দেবতাকে উৎসর্গ করে গড়েছিল সে মন্দির আইএস যত্ন করে রেখে দেবে এই আশা করি কী করে!
সালটা ২০০১, মার্চের ঘটনা। আফগানিস্তানের সব মূর্তি সাত দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন তালেবান নেতা। ইউনিসেফ এবং ইউনেস্কো প্রধানের লিখিত আবেদন সরাসরি নাকোচ করে দেওয়া হয়। এই ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রক্ষা পায়নি পৃথিবীর সর্বোচ্চ বৌদ্ধ-মূর্তিটি, যার অবস্থান আফগানিস্তানের ঐতিহ্যবাহী এলাকা বামিয়ানে। দালাইলামা এক শোক বার্তা দিয়েছিলেন। তৎকালীন জাতিসংঘ সচিব কফি আনান সাহেবও এর তীব্র নিন্দা জানান। কিন্তু এই সব বার্তা-নিন্দায় কোনও সংগঠনেরই কিছু যায় আসে না। প্রযুক্তির বলে যা কিছু স্মৃতি রয়ে যায় তা কেবল ল্যাপটপের স্ক্রিন বা প্রিন্ট মিডিয়ায়।
একটি দেশের প্রাচীন ভাস্কর্য তথা পুরাকীর্তি সে দেশের ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর সঙ্গে জাতির অতীত ধর্ম-শিল্প-সমাজ-সংস্কৃতি জড়িত। কোনও দেশের প্রাচীনকীর্তি শুধু সে দেশ বা জাতিরই একচ্ছত্র সম্পত্তি নয়, বরং তা মূলত সারা বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ।
বালশামিন মন্দিরটি ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ বা বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ছিল। আমাদের বাংলাদেশ ও উপমহাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ওপর প্রাচীন ও মধ্যযুগের আফগান প্রভাব অপরিসীম। কাবুল, গজনি, কান্দাহর, জালালাবাদ, হিন্দুকুশ পর্বত ইত্যাদি এলাকায় প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের সাংস্কৃতিক মিলনধারার যে মিথস্ক্রিয়া ঘটেছে সে আলো থেকে আমরাও আলোকিত হয়েছি। গ্রহণ, বর্জন ও সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে আমাদের সংস্কৃতিতে নতুন ধারা সংযোজিত হয়েছে। সে ধারায় এখন নতুন করে মিশে যাচ্ছে উগ্রপন্থি উন্মাদনায়। ধ্বংস হচ্ছে ঐতিহ্য- স্বারক আর অজানাকে আরও একটু জানে নেওয়ার সুযোগ।
কোনও জিনিস ভালো কি মন্দ তা সম্পূর্ণ নির্ভর করে সেই জিনিসের ব্যবহারের ওপর। একটা অস্ত্র দিয়ে ডাকাতি বা খুন করা যায়, সেই অস্ত্র দিয়েই মুক্তিযুদ্ধ করা যায়, খুনীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করে অসহায়কে রক্ষা করা যায়।
লেখক: প্রডিউসার এবং আরজে সিটিএফএম ৯৬
*** প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব। বাংলা ট্রিবিউন-এর সম্পাদকীয় নীতি/মতের সঙ্গে লেখকের মতামতের অমিল থাকতেই পারে। তাই এখানে প্রকাশিত লেখার জন্য বাংলা ট্রিবিউন কর্তৃপক্ষ লেখকের কলামের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে আইনগত বা অন্য কোনও ধরনের কোনও দায় নেবে না।