চট্টগ্রামের সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলার তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন চেয়েছেন হাইকোর্ট। সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে লিখিত আকারে ওই প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
এ মামলার আসামি ওয়াসিমের জামিন শুনানিকলে বুধবার (২ ডিসেম্বর) বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শংকর প্রসাদ দে। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
পরে সারওয়ার হোসেন বাপ্পী সাংবাদিকদের জানান, ওয়াসিমের জামিন শুনানিকালে গত ২৩ নভেম্বর মামলার সিডিসহ (কেস ডকেট) তদন্ত কর্মকর্তাকে আজ হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সে অনুসারে এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা হাজির হয়ে আদালতকে জানিয়েছেন- তিনি কিছুদিন আগে তদন্তভার পেয়েছেন।
এরপর আদালত আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে মামলার তদন্তের অগ্রগতি লিখিত প্রতিবেদন আকারে দাখিলের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে আসামি ওয়াসিমের জামিন আবেদন আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মুলতবির আদেশ দেন।
এর আগে ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে নগরের ও আর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে গুলি ও ছুরিকাঘাতে নিহত হন তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এই মামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে আবু নসুর গুন্নু, শাহ জামান ওরফে রবিন, সাইদুল আলম শিকদার ওরফে সাক্কু ওরফে শাহজাহান, মো. আনোয়ার ও মোতালেব মিয়া প্রকাশ ওয়াসিম নামে কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ।
এই হত্যায় অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে আটক হন এহেতাশামুল হক ভোলা ও তার সহযোগী মো. মনির। তাদের কাছ থেকে পয়েন্ট ৩২ বোরের একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয় যেটি মিতু হত্যায় ব্যবহৃত হয়েছে বলে পুলিশ দাবি করেছিল।
গ্রেফতার আনোয়ার ও মোতালেব মিতু হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। তাদের স্বীকারোক্তিতে মিতু হত্যার পরিকল্পনাকারী হিসেবে নাম আসে বাবুল আক্তারের সোর্স হিসেবে পরিচিত মো. মূছার।
মিতুর বাবা পুলিশের সাবেক পরিদর্শক মোশারফ হোসেন মিতু হত্যায় বাবুল আক্তারকে দায়ী করেন। তিনি তদন্ত কর্মকর্তাকে অভিযোগের সাপেক্ষে বেশ কিছু ক্লু দেন বলে জানান মোশারফ হোসেন।
২০১৭ সালের ২৪ জুন রাতে ঢাকার বনশ্রীর শ্বশুরবাড়ি থেকে বাবুল আক্তারকে ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে প্রায় ১৪ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তিনি স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন।
চাঞ্চল্যকর এই মামলার কোনু কূল কিনারা করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত আদালতের নির্দেশে মামলাটির তদন্তভার গত জানুয়ারিতে চলে যায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে।
এদিকে মামলাটি তদন্তাধীন থাকাবস্থায় প্রায় সাড়ে চার বছর আগে কারাবন্দি রাঙ্গুনিয়া উপজেলার দক্ষিণ রাজানগর এলাকার আবদুন নবীর ছেলে আসামি মোতালেব মিয়া প্রকাশ ওয়াসিম হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন জানান।
আরও পড়ুন-
খুনিদের ভাড়া করে পুলিশের সোর্স মুছা, তার গুলিতেই মিতু খুন
পুলিশের সঙ্গে সমঝোতার কথা ভিত্তিহীন: বাবুল আক্তার
আসামি ধরতে না পারায় শেষ হচ্ছে না আলোচিত হত্যা মামলাগুলোর তদন্ত