X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মেয়র প্রার্থীকে ঘিরে আবারও খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগে টানাপড়েন!

জসিম উদ্দিন মজুমদার, খাগড়াছড়ি
২৮ ডিসেম্বর ২০২০, ০১:১০আপডেট : ২৮ ডিসেম্বর ২০২০, ০২:০০

পৌরসভা নির্বাচন

খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীকে ঘিরে আবারও জেলা আওয়ামী লীগে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। বর্তমান পৌর মেয়র নৌকা প্রতীকের প্রত্যাশী থাকলেও শেষ পর্যন্ত দলীয় সমর্থন পাননি। তবে গত দুই মেয়াদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে জয়লাভ করায় এবারও দলীয় বিদ্রোহী হিসেবে তার স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়াটা অনেকটাই নিশ্চিত। ফলে তাকে নির্বাচন থেকে ফেরাতে একদিকে দলীয় গঠনতন্ত্র দেখিয়ে পরিপন্থী সিদ্ধান্ত না নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন দলীয় নেতারা; অন্যদিকে, তার অনুসারীদের ওপর বাড়ানো হচ্ছে দলীয় চাপ। আর এতে দলের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ছেন। কারণ, দলের সমর্থন না পেলেও বর্তমান মেয়রের শুভাকাঙ্ক্ষী হিতৈষীর সংখ্যা দলের ভেতর কোনও অংশেই কম নয়।  

জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, পৌরমেয়র রফিকুল আলম দলেরই লোক। তবে ২০১০ সালে মেয়র পদে তার প্রথম নির্বাচনের সময় দলীয় প্রতীকের প্রচলন না থাকলেও সেবারও দলের মনোনীত প্রার্থীকে হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়ী হন রফিকুল। এরপর ২০১৫ সালে প্রতীকের প্রচলন হলেও সেবারও মনোনয়ন না পেয়ে দলীয় প্রার্থীকে হারিয়ে জয়ী হন তিনি। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে এবার তৃতীয়বারের মতো ভোটের মাঠে নেমেছেন বর্তমান মেয়র। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য।

তবে তার ২০১৫ সালের নির্বাচনের ঘটনায় আওয়ামী লীগে শক্ত মেরুকরণ ঘটে। এসময় জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা দু’ভাগে ভাগ হয়ে অন্তর্কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে। তখন দু’পক্ষের হামলা-পাল্টা হামলায় ৩৬টি মামলা হয়। যাতে কয়েকশত নেতা-কর্মীকে কারাগারে যেতে হয়। কেন্দ্রীয় নেতাদের হস্তক্ষেপে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ বিভক্তি কমে আসে। উভয়পক্ষের আপসে ৩০টির মতো মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। বাকি মামলাগুলোও নিষ্পত্তির দিকে ছিল। কিন্তু, মেয়র পদে প্রার্থী ঠিক করা নিয়ে দলে আবারও বিভক্তি দেখা দিয়েছে। জেলা থেকে তিন জনের তালিকা পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রে। তিন জনের তালিকায় শীর্ষে ছিলেন বর্তমান মেয়র রফিকুল আলম। তিনি বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য। দ্বিতীয় স্থানে নাম ছিল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরীর আর তৃতীয় স্থানে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পার্থ ত্রিপুরা জুয়েলের নাম।

বর্তমান মেয়র রফিকুল ইসলাম

তবে কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড গত ১৯ ডিসেম্বর মেয়র পদে প্রার্থী হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরীর নাম ঘোষণা করেন। দলীয় ঘোষণায় ক্ষুব্ধ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে নির্বাচনের ঘোষণা দেন বর্তমান মেয়র রফিকুল আলম। এমনকি বিদ্রোহী প্রার্থীর পদ থেকে সরে না গেলে গঠনতন্ত্র মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিঁয়ারিকেও আমলে নিচ্ছেন না তিনি।

মেয়রপন্থী হিসেবে পরিচিত সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ উদ্দিন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা নুরুন্নবী, আবুল কালাম আজাদ, দেলোয়ার হোসেন টিটু বলেন, জনগণ রফিকুল আলমকে পুনরায় মেয়র পদে চায়। বিগত ১০ বছরের ধারাবাহিক উন্নয়নে প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে খাগড়াছড়ি দেশের সব পৌরসভার মধ্যে শীর্ষে থাকবে উল্লেখ করে তারা বলেন, কেন্দ্রের যাচাই-বাছাই না করে মেয়র পদে প্রার্থী নির্বাচন করা ঠিক হয়নি। এলাকার গণমানুষের মতামতের ভিত্তিতে এবং উন্নয়নের স্বার্থে তারা রফিকুল আলমকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান।

খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি রণ বিক্রম ত্রিপুরা বলেন, আওয়ামী লীগে দ্বিধা-বিভক্তি নেই। রফিকুল আলম আগে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ছিল না, বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত কমিটির সদস্য। তিনি দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেও তাকে মনে রাখতে হবে এখন আর আগের দিন নেই। আওয়ামী লীগ এখন আগের চেয়েও শক্তিশালী। গঠনতন্ত্র মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দল থেকে মনোনীত মেয়র প্রার্থী নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা মেয়র প্রার্থী ঠিক করেছেন। দলের মধ্যে একাধিক প্রার্থী থাকতেই পারে, তবে প্রত্যাহারের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। প্রত্যাহারের দিন শেষে কেউ যদি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে থাকেন-তবে তাকেই সেই দায়িত্ব বহন করতে হবে।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্মলেন্দু চৌধুরী

খাগড়াছড়ি পৌর নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী রফিকুল আলম বলেন, তিনি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়েছিলেন, তবে জনগণের দাবির বাস্তবায়ন না হওয়ায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

তবে নিজেকে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী মানতে নারাজ তিনি। বিদ্রোহী প্রার্থী নন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিগত দুটি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে জয়লাভ করেছি। সে হিসেবে এবারও নির্বাচন করবো এটাই তো স্বাভাবিক। দলীয় প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চেয়েছিলাম। এটা জন দাবি ছিল। কিন্তু দল দেয়নি। দল দলের মতো ভেবেছে, তবে জনগণের দাবি আছে আমার ওপর। তাই নির্বাচনের সিদ্ধান্ত বদলাবে না। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করবো এবং ইনশাআল্লাহ জয় লাভ করবো।

তিনি বলেন, জনগণ যদি তাদের প্রত্যাশা পূরণের জন্য আমাকে চায়, তাহলে আমার নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার রাস্তা নেই।

খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার রাজু আহমেদ বলেন নির্বাচনি আচরণবিধি আছে। প্রত্যেক প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় অঙ্গীকারনামা দিয়েছেন। তারা আচরণবিধি মেনে চলবেন-এটাই আশা করে নির্বাচন কমিশন। আর কেউ যদি আচরণবিধি ভঙ্গ করে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা