X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

মুজিববাদের পক্ষে রায় দেওয়ার আহ্বান

উদিসা ইসলাম
২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৮:০০আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২১, ০৮:০০

(বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে বঙ্গবন্ধুর সরকারি কর্মকাণ্ড ও তার শাসনামল নিয়ে মুজিববর্ষ উপলক্ষে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে বাংলা ট্রিবিউন। আজ পড়ুন ১৯৭৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারির ঘটনা।)

আওয়ামী লীগ নির্বাচনকে মুজিববাদের ওপর একটি গণভোট বলে অভিহিত করেছে। দলের নির্বাচনি ইশতেহারে যে চারটি স্তম্ভে মৌলিক কাঠামো প্রতিষ্ঠিত, তার সাপেক্ষে ম্যান্ডেটদানের জন্য বাংলার মানুষের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা—এই চারটি মৌলিক আদর্শকে মিলিতভাবে মুজিববাদ আখ্যায়িত করে ইশতেহারে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের সংবিধানে জাতীয় মূল আদর্শ হিসেবে এগুলো স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান এক সাংবাদিক সম্মেলনে দলের নির্বাচনি ইশতেহার প্রকাশ করেন। ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির আহ্বায়ক শেখ ফজলুল হক মনিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। আওয়ামী লীগের এই নির্বাচনি ইশতেহারে দেশের কল্যাণে ব্যাপকভিত্তিক কর্মসূচি গ্রহণের কথা ঘোষণা করা হয়।

তবে এ প্রসঙ্গে জিল্লুর রহমান সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন যে, একটি সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত জাতি এবং একটি বিধ্বস্ত সমাজের পুনর্গঠন, ব্যাপক ও বিস্তৃত কর্মসূচি সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তাই নির্বাচনি ইশতেহারের প্রস্তাবিত রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর একটি রেখাচিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। দলীয় ঘোষণাপত্রে আওয়ামী লীগের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বক্তব্য রয়েছে বলে উল্লেখ করে জিল্লুর রহমান নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণাপত্রের নিরিখে বিবেচনা করার আহ্বান জানান।

জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ অতীতে যেসব ওয়াদা করেছিল, তার সবগুলোই পালন করেছে। এ প্রসঙ্গে ইশতেহারে দেশের যে পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণ করেছে, তা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করে বলা হয়—স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের মহাসংকট সমগ্র বিশ্বকে এতটা উদ্বেগাকুল করে তুলেছিল যে, পৃথিবীর প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন, বাংলাদেশের ৫০ লাখ লোক অনাহারে মারা যাবে। কিন্তু আমাদের একজন মানুষও অনাহারে মরেনি। জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের মতে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার পৃথিবীর বৃহত্তম কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে এবং বাঙালি জাতির মুখ উজ্জ্বল করেছে।’

 

দৈনিক বাংলা, ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৩ বাংলার মানুষ যেকোনও ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা রক্ষা করবে

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই দিনে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা করেন যে, ‘বাংলাদেশ টিকে থাকার জন্যে জন্মেছে এবং মানব ইতিহাসে সর্বশেষ দিন পর্যন্ত বাংলাদেশ তার জাতির জন্যে আপন মর্যাদায় পৃথিবীর মানচিত্রে সগৌরবে বিরাজ করবে।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘যে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ৩০ লাখ মানুষ তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, সেই প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতাকে বাংলার মানুষ যেকোনও ত্যাগ, এমনকি রক্তের বিনিময়ে রক্ষা করবে।’ তিনি বলেন, তাঁর জীবনের একমাত্র কামনা— বাংলাদেশের জনগণকে সুখী ও সমৃদ্ধশালী দেখা। তিনি বলেন, ‘আমি দেখতে চাই, বাংলার মানুষ অন্ন বস্ত্রে সচ্ছল হয়েছে, সুখী হয়েছে। বিশ্বসভায় আপন গৌরব ও মর্যাদার সঙ্গে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’ বঙ্গবন্ধু বলেন, সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র ১০ মাস পরে তিনি জাতিকে সংবিধান দিয়েছেন এবং জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা গঠিত শাসনতন্ত্র, জনগণের অধিকারের এক পবিত্র দলিল সংবিধান অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটাধিকারের ভিত্তিতে দেশে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তা হবে অবাধ ও নিরপেক্ষ। যারা দক্ষতার সঙ্গে দেশের শাসনকার্য পরিচালনা করতে পারবেন, এমন শক্তি নির্বাচিত করার জন্য তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।

বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টকে তার নিজের ঘরের আগুন নেভানোর পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘আটক বাঙালিদের স্বদেশে ফিরে আসতে দিন। বাংলাদেশের মাটিতে যে নৃশংসতম অপরাধ করা হয়েছে, পাকিস্তানকে নিজের দেশেই তার মাশুল দিতে হবে।’

সাতক্ষীরায় জনসভায় বঙ্গবন্ধু

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাতক্ষীরায় অনুষ্ঠিত জনসভায় বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে সুখী-সম্পদশালী, অন্ন-বস্ত্রে সচ্ছল ও মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে দেখতে চাওয়া তাঁর জীবনের লক্ষ্য। বঙ্গবন্ধু সেখানে শহরের উপকণ্ঠে ধানক্ষেতে বিশাল এক জনসভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন। এত বড় বিশাল জনসভা এর আগে কখনও অনুষ্ঠিত হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ত্রাণমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

বাগেরহাটের জনসভায় বঙ্গবন্ধু

স্থানীয় স্টেডিয়াম ময়দানে অনুষ্ঠিত সর্ববৃহৎ জনসভায় ভাষণদানকালে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘অর্থনৈতিক মুক্তিলাভের উদ্দেশ্যে জনগণকে অবশ্যই কঠোর পরিশ্রম করে উৎপাদন বাড়াতে হবে। রক্তের বিনিময়ে রাজনৈতিক স্বাধীনতা পেয়েছি। কঠোর পরিশ্রম দিয়ে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করতে হবে।’

নির্বাচন হবেই এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পছন্দ মতো লোককে ভোট দেওয়ার অধিকার জনগণের রয়েছে।’ জনগণকে উদ্দেশ করে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘কতগুলো নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে আগামী পাঁচ বছর দেশ শাসন করার জন্য একটি শক্তিশালী সরকারের প্রয়োজন রয়েছে।’

/এপিএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ভূমিহীনমুক্ত হচ্ছে সাতক্ষীরার ৬ উপজেলা, প্রস্তুত ৩৬৪টি ঘর
‘প্রধানমন্ত্রীর উপহার বেঁচে থাকার সাহস জুগিয়েছে’
রাহমানের কণ্ঠে ‘জয় বাংলা’, ভিডিও করলেন মুগ্ধ প্রধানমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে 'দেরি করে আসায়' ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
কুষ্টিয়ায় ৩ হাজার গাছ কাটার সিদ্ধান্ত স্থগিত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
ট্রাকের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
শেষ দিকে বৃথা গেলো চেষ্টা, ৪ রানে হেরেছে পাকিস্তান 
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা