মিয়ানমারে ২৮ ফেব্রুয়ারির বিক্ষোভে সরকারি বাহিনীর গুলিতে অন্তত ১৮ জন নিহতের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ এদিনের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের নির্বিচারে গ্রেফতার এবং তাদের ওপর প্রাণঘাতী শক্তির ব্যবহার গ্রহণযোগ্য নয়। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সম্মিলিতভাবে বর্মি সেনাবাহিনীকে একটি স্পষ্ট বার্তা দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। নির্বাচনের মাধ্যমে মিয়ানমারের জনগণের যে ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে তার প্রতি সম্মান দেখাতে হবে এবং দমনপীড়ন বন্ধ করতে হবে।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল জানিয়েছেন, এ ঘটনায় শিগগিরই ব্যবস্থা নেবে ইইউ। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘সামরিক কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে নাগরিকদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। জনগণকে তাদের মত প্রকাশ এবং সমাবেশের স্বাধীনতার অধিকার দিতে হবে।’
বর্মি নিরাপত্তা বাহিনী বার্মার জনগণের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য সহিংসতা চালিয়েছে উল্লেখ করে এর নিন্দা জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দফতরের একজন মুখপাত্র মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রতি সহিংসতা থামানো এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আহ্বান জানিয়েছেন। যুক্তরাজ্য কর্তৃক এরইমধ্যে অভ্যুত্থানের নেতাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টিও মনে করিয়ে দেন তিনি।
তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বর্মি কর্তৃপক্ষের প্রতি দেশটিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা এবং শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানানো হয়েছে।
১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই নিয়মিত বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হচ্ছে নিরাপত্তা বাহিনী। তবে ২৮ ফেব্রুয়ারি রবিবার বিক্ষোভকারীদের ওপর চূড়ান্ত রকমের সহিংস ভূমিকায় দেখা গেছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের। এদিন পুলিশের গুলিতে অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছে। অভ্যুত্থানের পর এটিই একদিনে সর্বোচ্চ প্রাণহানির ঘটনা।
ইয়াঙ্গুন, দাওয়েই ও মান্দালয় শহরে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভ দমনে সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয়।
বিক্ষোভ দমনে শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) থেকে বড় ধরনের ধরপাকড় অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। বহু বিক্ষোভকারীকে আটক করা হচ্ছে। বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতেও গুলিবর্ষণ করা হচ্ছে। আন্দোলনকারীদের একজন অ্যামি কিয়াও। পেশায় শিক্ষক কিয়াও জানান, বিক্ষোভে নামামাত্র কোনও কথাবার্তা ছাড়াও গুলি চালাতে শুরু করে পুলিশ।
রবিবার দেশটির প্রধান শহর ইয়াঙ্গুনে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। স্টান গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে লোকজনকে ছত্রভঙ্গ করতে ব্যর্থ হয়ে একপর্যায়ে তাদের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির প্রথম ক্যাথলিক কার্ডিনাল চার্লস মাউং বো টুইটারে লিখেছেন, মিয়ানমার যুদ্ধক্ষেত্রের মতো হয়ে গেছে। সূত্র: আল জাজিরা, রয়টার্স।