ঢাকা থেকে ভারতের জলপাইগুড়ি রুটে চলাচলের জন্য সম্প্রীতি এক্সপ্রেস ট্রেনে স্টপেজের দাবিতে সৈয়দপুরে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। রবিবার (১৪ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত প্রথমে সৈয়দপুর প্রেসক্লাব ও পরে শহরের শহীদ ডা. জিকরুল হক সড়কে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। আমরা সৈয়দপুরবাসীর আয়োজনে এতে অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, সামাজিক রাজনৈতিক ও সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ।
বক্তারা বলেন, নীলফামারীর চিলাহাটি স্টেশন থেকে ভারতের হলদীবাড়ি স্টেশন পর্যন্ত রেলপথ রুটি ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর থেকে বন্ধ ছিল। ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে বাংলাদেশ ও ভারত সরকার দীর্ঘদিন পর এই রুটে আগামী ২৬ মার্চ থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের জন্য সম্প্রীতি এক্সপ্রেস নামে একটি ট্রেন নির্ধারণ করেছে। কিন্তু, এই ট্রেনে দেশের সর্ববৃহৎ রেলওয়ে কারখানা সমৃদ্ধ রেলওয়ে শহর খ্যাত সৈয়দপুরে কোনও স্টপেজ রাখা হয়নি। আমাদের প্রচেষ্টায় ৫৫ বছরের বন্ধ রুটে ট্রেন চলাচল করবে অথচ আমরাই সে ট্রেনে চড়ে ভারতের দার্জিলিং যাওয়ার সুযোগ পাবো না তা মেনে নেওয়া যায় না। এটা আমাদের প্রতি চরম বৈষম্য বলেই মনে করি আমরা। অথচ সৈয়দপুরে রয়েছে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর।
উত্তরাঞ্চলের সৈয়দপুর শহর দেশের অষ্টম বাণিজ্যিক শহর হওয়ায় এখানকার ব্যবসায়ীরা আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। এ কারণে ভারতের সঙ্গে তাদের ব্যাপক ব্যবসায় সম্পৃক্ততা রয়েছে। ফলে প্রতিনিয়তই এই ব্যবসায়ীদের ভারতে যাতায়াত করতে হয়। এছাড়া ব্রিটিশ আমলে সৈয়দপুর, রংপুর ও ভারতে জলপাইগুড়ি পশ্চিমবঙ্গের এ অঞ্চলটি একই এলাকাভুক্ত থাকায় আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে উভয় এলাকার মানুষের মাঝে। দেশ বিভাগের পর কেউ কেউ এদেশে আসলেও অনেকের স্থায়ী আবাস এখনও সেখানেই রয়েছে। একারণেও এ অঞ্চলের অসংখ্য মানুষ প্রায়ই ভারতে যাতায়াত করেন। চিলাহাটি-হলদিবাড়ি রুট বন্ধ হওয়ার আগে তারা এপথেই চলাচল করতেন। এখন তারা হিলি স্থলবন্দর বা বেনাপোল বন্দর ব্যবহার করেন। এমতাবস্থায় সৈয়দপুরের গুরুত্ব অনুধাবন করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ রুটটি চালুর উদ্যোগ নিয়েছেন। তাই এই রুটে চলাচলকারী ট্রেনের সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তি সৈয়দপুরবাসীর একান্ত অধিকার। এজন্য প্রয়োজনীয় সকল ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য রেলপথমন্ত্রীসহ রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
তারা আরও বলেন, আগামী ২০ মার্চের মধ্যে এ দাবি বাস্তবায়ন করা না হলে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি গোচর করতে প্রয়োজনীয় সকল উদ্যোগ গ্রহণ করবে সৈয়দপুরবাসী। তাতেও কাজ না হলে সম্প্রীতি এক্সপ্রেস উদ্বোধনের দিন সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনে রেললাইনে শুয়ে অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেওয়া হবে।
বক্তাদের অনেকে বলেন, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী সৈয়দপুরের নিরীহ হিন্দু ও মাড়োয়ারি জনগোষ্ঠীর ৪৪৮ জন যাত্রীকে নিয়ে একটি ট্রেন যোগে ভারতে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে সৈয়দপুর স্টেশন থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে গিয়ে গোলাহাট নামক স্থানে থামিয়ে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে সকলকে হত্যা করা হয়। এ নির্মম ইতিহাসের মর্মান্তিক স্মৃতিবহ এ রুটে দীর্ঘদিন পর চলাচলকারী ট্রেনে সৈয়দপুরবাসীকে সুযোগ না দেওয়া সত্যই দুঃখজনক। আমরা আশা করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৈয়দপুরবাসীর দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ পূর্বক এখানে ইমিগ্রেশনের ব্যবস্থা করে বিরতি দিয়ে উত্তরাঞ্চলের রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম জেলার ভারত ভ্রমণকারী ও ব্যবসায়ীদের যাতায়াত সুগম করতে সার্বিক পদক্ষেপ নেবেন।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন নীলফামারী চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক ও বিএনপি নেতা মতিয়ার রহমান দুলু, সৈয়দপুর উপজেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ও ইকু গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ সিদ্দিকুল আলম, ওয়ার্কার্স পার্টির উপজেলা সভাপতি কমরেড রুহুল আলম, জাসদ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান, কামারপুকুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা রইচ উদ্দিন জোতদার মতি, নাট্য সংগঠক যুদ্ধাহত আতাউর রহমান ময়না, নিরাপদ সড়ক চাই সৈয়দপুর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনির, নওশাদ আনসারী, আলমগীর হোসেন, কাকন প্রমুখ।
