স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে নীলফামারীর ডিমলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ১৯ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার কবর চিহ্নিত করে পাকাকরণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কবরগুলো জাতীয় পতাকার রঙে সংরক্ষণ করে তাদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। একইসঙ্গে দুই শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে দুটি সড়কের নামকরণ ও ফলক উন্মোচনও করা হয়েছে।
যাদের কবর সংরক্ষণ করা হয়েছে তাদের মধ্যে কয়েকজন মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হন। বাকিরা দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিভিন্ন সময় মৃত্যুবরণ করেছেন। প্রয়াত এসব মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে তাৎক্ষণিক ছামান আলী, নাছিমুদ্দিন, আব্দুস ছালাম, উমর আলী, আব্দুল গফুর, আব্দুল বারী, মজিবর রহমান ও আবু সাইদের নাম জানা গেছে।
ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে তাদের কবর চিহ্নিত করে কবরগুলো পাকা করার কাজটি স্বেচ্ছায় করেছেন ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ মো. আব্দুল লতিফ খান। এ কাজে তার ব্যয় হয়েছে ১ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৪ টাকা।
গত মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) সকালে কবর পরিদর্শনসহ আনুষ্ঠানিকভাবে ফিতা কেটে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারী ও মজিবুর রহমানের নামে দুটি রাস্তার নামকরণ করে ফলক উন্মোচন করা হয়।
এ সময় বীরমুক্তিযোদ্ধা কোরবান আলী বলেন, আমরা দেশের জন্যে যুদ্ধ করেছি। দেশের স্বাধীনতা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে ছিনিয়ে এনেছি। কিন্তু, আমাদের এলাকার শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ও স্মৃতিচিহ্ন দিন দিন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছিল। এ বিষয়ে আমরা আমাদের এলাকার চেয়ারম্যানকে জানালে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে তাদের কবরগুলো চিহ্নিত করে সংরক্ষনণে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
শহীদ বীরমুক্তিযোদ্ধা মমিন উল্ল্যাহর ছেলে সহিদুল ইসলাম (৪৬) বলেন, আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর দীর্ঘদিন ধরে তার কবরটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে ছিল। সামর্থ্যের অভাবে আমরাও কবরটি সংরক্ষণ করতে পারিনি। এ অবস্থায় চেয়ারম্যানের কাছে কবরটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি আবেদন করি। এরপর তিনি আমার বাবার কবরটির চার দেয়াল পাকা করে দেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ছামান আলীর স্ত্রী হালিমা বেগম (৬৯) বলেন, আমার স্বামী ১৯৯৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন। স্বামীর কবর প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। আমি চেয়ারম্যানকে ধন্যবাদ জানাই আমার স্বামীসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধার কবর চিহ্নিত করে সংরক্ষণ করার জন্য।
জানতে চাইলে পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. আব্দুল লতিফ খান বলেন, নিজের জীবন বাজি রেখে দেশের ভূখণ্ডকে রক্ষা করার জন্য যারা যুদ্ধ করেছেন সেই সমস্ত সূর্য সন্তানের কবর অরক্ষিত অবস্থায় থাক এটা কখনোই কাম্য হতে পারে না। তাই শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের কবর সংরক্ষণ করা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
তিনি বলেন, ডিমলা সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় এখানে যুদ্ধের সময় আনেক মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এসব কবর চিহ্নিত না থাকায় অরক্ষিত ছিল। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আমার এলাকার শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবর সংরক্ষণ, নামকরণ ও চিহ্নিত করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ উদ্দিনসহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ এবং এর অন্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা।