X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষায় আছে বড় তিন অর্জন: রাশেদা কে চৌধুরী

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
২৬ মার্চ ২০২১, ০২:১৫আপডেট : ২৬ মার্চ ২০২১, ০২:১৫

‘শিক্ষার উন্নয়নে আত্মতুষ্টি নয়, আত্মবিশ্বাসকে গুরুত্ব দিতে হবে। গুণগত শিক্ষায় বিনিয়োগ বাড়িয়ে বৈষম্য কমাতে হবে। নেতিবাচক সমালোচনা কমিয়ে, কী করে সামনে এগুনো যায় সেদিকে উৎসাহ বাড়াতে হবে।’ বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী।

স্বাধীনতার ৫০ বছরে মোটাদাগে তিনটি অর্জনকে বড় করে দেখছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এ উপদেষ্টা ও শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী। তিনটি বড় অর্জনের পাশাপাশি পঞ্চাশ বছরে আরও যা করা যেত সেদিকে নজর দিতে হবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

বাংলা ট্রিবিউন: তিনটি বড় অর্জন কী কী?

রাশেদা কে চৌধুরী: একটি হচ্ছে সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে শিক্ষার চাহিদা তৈরি। এটা এখন কেউ অস্বীকার করবে না যে শিক্ষার দরকার নেই। গ্রামের একজন ভূমিহীন বা দিনমজুরকে জিজ্ঞেস করুন, তিনিও বলবেন-সন্তানদের লেখাপড়া করাতে হবে।

দ্বিতীয় অর্জন হলো-দরিদ্র, স্বল্পোন্নত দেশ হয়েও বাংলাদেশ এখন শিক্ষায় লৈঙ্গিক সমতা অর্জন করতে পেরেছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে ছেলে ও মেয়ের সংখ্যা এখন বলতে গেলে সমান। এটি ঈর্ষণীয় সাফল্য। বহু দেশ এখনও এমনটা পারেনি।

তৃতীয়টি হচ্ছে-শিক্ষায় মেয়েদের এগিয়ে যাওয়ায় নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে। এখানে অনেকগুলো ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। শিক্ষায় নারীদের অংশগ্রহণের কারণে দেশে মাতৃমৃত্যুর হারও কমেছে। টিকাদানেও সাফল্য অর্জন করেছে। গড় আয়ু বেড়েছে। শিক্ষায় দৃষ্টি দেওয়ার ফলে মানব সক্ষমতা বিনির্মাণ হয়েছে। এর ফল আমরা রেমিট্যান্সসহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও দেখতে পাচ্ছি।

বাংলা ট্রিবিউন: আর কী বলার মতো অর্জন চোখে পড়ছে আপনার?

রাশেদা কে চৌধুরী: অবৈতনিক শিক্ষার কথা বলবো। উপবৃত্তি, প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সব শিক্ষার্থীর হাতে বছরের প্রথম দিনে বিনামূল্যে বই পৌঁছে দেওয়াটা তো তাক লাগানো অর্জন।

নব্বইয়ের দশক থেকে শিক্ষায় মনোযোগ দেওয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর কিছু স্বপ্ন ছিল, কিন্তু বাস্তবে তিনি তা দেখে যেতে পারেননি। নানা ঘাত-প্রতিঘাতে আমরা তা করতে পারিনি। নব্বইয়ের দশক থেকে শিক্ষায় নজর দেওয়ার কারণে আমরা আজকের ফলাফলটা পেয়েছি। 

বাংলা ট্রিবিউন: আরও যা করা যেতো?

রাশেদা কে চৌধুরী: প্রথমত ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন বাস্তবায়ন করতে পারিনি। রাজনৈতিক উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে চলে গেছে অনেক বছর। শিক্ষায় অনেকটা লক্ষ্যহীনভাবে চলতে হয়েছে আমাদের। ফলে যেটা হয়েছে-সংবিধানে একমুখী শিক্ষার কথা যেটা বলা হয়েছে, তা থেকে আমরা অনেক দূরে সরে গেছি।

কয়েক দশকে আমাদের শিক্ষা তিন ধারায় বিভক্ত হয়েছে-ধর্মীয় ধারা, মূল ধারা ও ইংরেজি মাধ্যম। অনেক উপধারাও রয়েছে। এতসব ধারার কারণে শিক্ষায় বৈষম্য বেড়েছে। ক্রমাগত পণ্য হয়ে গেছে। এগুলো ঠেকাতে পারতাম যদি ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন বাস্তবায়ন করতে পারতাম।

শুরুতে লাগাম টানা হয়নি। এখন আর সম্ভব হবে না। পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ফ্রিডম অব চয়েজের জন্য মানুষকে তো জোর করে বলা যাবে না যে মূলধারা ছাড়া অন্য মাধ্যমে পড়াতে পারবেন না।

আরেকটি জায়গায় আমরা ভালো করতে পারতাম। সেটি হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশকে বিশ্বে উদাহরণ হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু সেটি থমকে রয়েছে সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ কম বলে। প্রাথমিকে শিক্ষকদের নারীকোটা পূরণ হয়ে গেলেও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় নারীরা নেই। হাতে গোনা কয়েকজন নারী উপাচার্য হয়েছেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের জায়গায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।

শিক্ষার মান বড়াতে তিনটি উপাদান প্রয়োজন-শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের মান, শিক্ষকের মান ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা। গ্রামাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শিক্ষক এবং শহরের মূলধারার মধ্যে বৈষম্য আছে ঢের। রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বাড়াতে পারতাম আমরা। এখন পর্যন্ত শিক্ষায় আমাদের বিনিয়োগ জাতীয় আয়ের মাত্র ২ দশমিক ৪ শতাংশ।

অনেক মেগা প্রকল্প করেছি। সেই তুলনায় শিক্ষায় কিছুই করিনি। এখনও নন-এমপিও শিক্ষক নিয়োগে পুরোপুরি ক্ষমতা পরিচালনা কমিটির হাতে। সেখানে নিয়োগ বাণিজ্য হচ্ছে। এসব জায়গায় ভালো কিছু করতে পারতাম।

বাংলা ট্রিবিউন: সামনে কী কী করার আছে?   

রাশেদা কে চৌধুরী: নতুন করে ২৬ হাজারের বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করা হয়েছে। প্রায় তিন হাজারের বেশি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত হয়েছে। এগুলো আমাদের অর্জন। কিন্তু এটাই শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে যথেষ্ট নয়। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে শিক্ষকের মানোন্নয়নে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতায় বিনিয়োগ করতে হবে।

উপবৃত্তি ছাড়াও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিল সারাদেশে চালু করা দরকার। ২০১০ সালের শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করতে পারলে, স্থায়ী শিক্ষা কমিশন ও শিক্ষা আইন করা গেলে আমরা আরও এগিয়ে যেতাম। একিভূত শিক্ষা ব্যবস্থা করা যেত। সব ধারার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মৌলিক বিষয়গুলো এখনও পুরো বাস্তবায়ন করতে পারিনি। স্থায়ী কমিশন করলে শিক্ষকদের বেতন-ভাতার ব্যবস্থা তারাই করতে পারতো। সরকারকে আমলাদের ওপর নির্ভর করতে হতো না। রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রকাশ আমরা দেখছি। সেই হিসেবে বাস্তবায়ন দেখছি না।

 

 

/এসএমএ/এফএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ককে দল থেকে বহিষ্কার
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
সড়কে প্রাণ গেলো মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলের
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি বিশ্ব দরবারে উপস্থাপন করতে চান রাশেদুল মাজিদ
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
আগুন নেভাতে ‘দেরি করে আসায়’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা, দুই কর্মী আহত
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা