X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাইব্যুনালে হেফাজতের বিচার দাবি শেখ সেলিমের

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৩ এপ্রিল ২০২১, ১৯:১২আপডেট : ০৩ এপ্রিল ২০২১, ১৯:১৮

বিএনপি-জামাত-হেফাজতকে ইসলাম বিরোধী আখ্যায়িত করে আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেছেন, হেফাজতে ইসলাম শুধু নামেই। এরা ইসলাম বিরোধী, জঙ্গি, স্বাধীনতা বিরোধী। এরা রাষ্ট্রের শত্রু, দেশের শত্রু। এদের কোন ছাড় দেয়া যাবে না। দরকার হলে ট্রাইব্যুনাল করে অবিলম্বে তাদের বিচার করতে হবে।

শেখ সেলিম এ সময় ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছিল সেটার দ্রুত তদন্ত শেষে বিচারের আওতায় আনার দাবি তোলেন।

শনিবার (৩ এপ্রিল) জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দেয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শেখ সেলিম এসময়ে হেফাজত ও বিএনপি-জামাতের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আরও কঠোর হওয়ার অনুরোধ করেন।

তিনি বলেন, জন্মশতবার্ষিকী আর সুবর্ণজয়ন্তীর জন্য অনেক কিছু আমরা সহ্য করে গেছি। আর কোন কিছু সহ্য করা হবে না। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনাকে আরও কঠোর হতে হবে। আপনার পেছনে ১৪ কোটি মানুষ আছে। এই অপশক্তিকে ছাড় দেয়া যাবে না।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য শেখ সেলিম বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, মানবতার ধর্ম। ইসলাম ধ্বংস করে না, সৃষ্টি করে। কোন সন্ত্রাসী জঙ্গিরা ইসলামকে হেফাজত করতে পারে না। ইসলাম হেফাজত করবে আল্লাহ।

যারা বাংলাদেশকে স্বীকার করে না তাদের বাংলাদেশে থাকার কোন অধিকার নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা বিশ্ববাসীর কাছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে। দেশের অর্জন ও স্বাধীনতার গৌরবকে নস্যাৎ করার চেষ্টা করছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দরকার হলে ট্রাইব্যুনাল করে অবিলম্বে তাদের বিচার করতে হবে। হেফাজতের জঙ্গিরা যেসব মাদ্রাসা থেকে রাস্তায় বের হয়ে মানুষকে হত্যা করে, মানুষের বাড়িঘর ও স্থাপনায় আক্রমণ করে ও পুড়িয়ে দেয়, সেইসব মাদ্রাসা বন্ধ করে দিতে হবে। ইসলাম কখনও সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দিতে পারে না।

তিনি বলেন, সরকার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে ১০ দিনের যে অনুষ্ঠান করেছে তাতে ২৭টি দেশের প্রধান ও ১২টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান ভিডিওবার্তা পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এই অনুষ্ঠান ও ভিতিওবার্তায় বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পেয়েছে।

একাত্তরের পরাজিত স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি সহিংস ঘটনা ঘটিয়েছে অভিযোগ করে শেখ সেলিম বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে মেনে নিতে পারেনি; সেই শক্তি আমাদের সুন্দর অনুষ্ঠানটিতে কলঙ্কিত করার জন্য চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে এমন সহিংসতা করেছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও ২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বিএনপি-জামাত ও স্বাধীনতা বিরোধী হেফাজতে ইসলাম হাটহাজারীতে তাণ্ডব চালায়। তারা থানায় পুলিশের ওপর আক্রমণ করে। পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়। এমনকি তারা ১০ জন পুলিশকে বোমা মেরে আহত করে। পুলিশের গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। হেফাজতের সমর্থনে বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় বিএনপি। ভূমি অফিস ও বিভিন্ন স্থাপনা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রতি যাদের বিন্দুমাত্র বিশ্বাস রয়েছে তারা কোনদিন এই জঘন্য কাজ করতে পারে না। তাদের এই বাংলাদেশে থাকারও কোন অধিকার নেই। তারা ২৭ মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন, রেললাইনে আগুন দেয়। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সংগীত একাডেমি, এসপি অফিস ও থানায় আগুন দেয়। বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল পর্যন্ত তারা ভাঙচুর করে এবং আগুন দেয়ার চেষ্টা করে। তারা প্রেসক্লাবে আগুন দিয়ে সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন জামিলসহ ১১ জন সাংবাদিককে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের বাড়িতে আগুন দেয় এবং পবিত্র কুরআন শরীফ পুড়িয়ে দেয়।

এছাড়া সিলেট, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী বাইতুল মোকাররম, বসুন্ধরা এবং ৩০০ ফিট রাস্তার বিভিন্ন স্থানের স্থাপনায় আগুন ও গাড়ি ভাঙচুর করে বলেও শেখ সেলিম উল্লেখ করেন।

২০১৩ সালে হেফাজতের আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে শেখ সেলিম বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে থেকে বিভিন্ন স্থানে বিনা কারণে কী তাণ্ডব করেছিল। সেদিন খালেদা জিয়া বিএনপিকে হেফাজতের পাশে থাকার নির্দেশ দিয়েছিল। তারা বায়তুল মোকাররমে মসজিদে আক্রমণ করে। কুরআন শরীফ পুড়িয়ে দেয়। বাংলাদেশ ব্যাংক ও আওয়ামী লীগ অফিসে আক্রমণ করে। এরা স্বাধীনতা বিরোধী। ইসলাম বিরোধী, জঙ্গি। এরা রাষ্ট্রের শত্রু, দেশের শত্রু। এদের কোন ছাড় দেয়া যেতে পারে না।

সংসদে সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনার একটি ছবি দেখিয়ে শেখ সেলিম বলেন, এরা তলোয়ার নিয়ে ঘোড়ার ওপর উঠে পেছনে শত শত জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র দিয়ে সাধারণ মানুষকে হত্যা এবং স্থাপনাকে ধ্বংস করার জন্য তাণ্ডব চালিয়েছে। ছবি দেখে মনে হচ্ছে প্রাচীনকালের মত কোন যুদ্ধে যাচ্ছে বিজয় করার জন্য।

সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের মনে রাখতে হবে। বাংলাদেশ তালেবান রাষ্ট্র নয়। এটা পাকিস্তান নয়। সন্ত্রাসী জঙ্গিদের বাংলার মাটিতে কোন স্থান নেই। সরকারকে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বাধীন দেশে এভাবে চলতে পারে না।

বিএনপি ২৪ থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত স্বাধীনতা দিবসের সব কর্মসূচি বন্ধ করে দিয়েছে অভিযোগ করে সেলিম বলেন, কারা এ ধরনের কর্মসূচি বন্ধ করে? যারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে তারা স্বাধীনতার কর্মসূচি ২৬ মার্চ বন্ধ করতে পারে? পারে না। বিএনপি-জামাত-হেফাজত এরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। বিএনপি ২৬ মার্চ স্মৃতিসৌধে যায়নি। কারণ তারা স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না।

বিএনপির সংসদ সদস্যদের ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, বিএনপির নেতারা এখানে আছে। তাদের বাপ-দাদার হিসেব নেয়া হোক। একাত্তরে তারা কোন দলে ছিল। শান্তি বাহিনীতে কারা ছিল। এর অনেক হিসেব আছে। এখানে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আছেন তাকে বলব, এগুলো বের করে জনসম্মুখে প্রকাশ করুন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে জিয়াউর রহমান। একাত্তরের পরাজিত জিয়া-মোস্তাক চক্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে আমাদের ৫০ বছর পিছিয়ে দিয়েছে। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করতে বঙ্গবন্ধু কন্যা যখন একটি পর্যায়ে নিয়ে আসছে সেই অপশক্তি এই জঘন্য কাজ শুরু করেছে। একাত্তরের পরাজিত শক্তি সরকার পতনের নামে এখন বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে তারা সহ্য করতে পারে না। বিএনপির নেতা মিজানুর রহমান মিনু প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার হুমকি দিয়েছে।

হেফাজতের সঙ্গে বিএনপিতে জড়িয়ে বক্তব্য দেয়ায় দলটির সংসদ সদস্যরা প্রতিবাদ করলে সেলিম বলেন, ব্যস্ত হবেন না। আমি শেষ করি। একটাও উত্তর দিতে পারবেন না। আমি কোন অসত্য কথা বলিনি।

নরেন্দ্র মোদির বিভিন্ন মুসলিম দেশের সফরের প্রসঙ্গ টেনে সরকার দলের সিনিয়র এই এমপি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিভিন্ন মুসলিম দেশে সফর করেছেন। সেসব দেশের সরকার ও জনগণ তাকে আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছেন। সেখানে কেউ কোন টু শব্দ করেনি। আর বাংলাদেশে মোদি এলে মুসলমানদের সর্বনাশ হয়ে যাবে। এখানে বাধা দেয়া হয়। তার আসা নিয়ে এই ধরনের জঘন্য রাজনীতি! এরা পাকিস্তানের নিয়াজী, রাও ফরমান আলী ও তালেবানের অনুসারী। এরা স্লোগান দেয় ‘আমরা সবাই তালেবান, বাংলা হবে আফগান’।

মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অকুণ্ঠ সমর্থনের কথা স্মরণ করে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ সেলিম বলেন, মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার ও দেশটির সব রাজনৈতিক দল সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়েছে। অস্ত্র দিয়ে তারা সাহায্য করেছে। ভারত আমাদের দুর্দিনের বন্ধু। সেই দেশের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে আসতে পারবে না এটা কোন ধরনের তামাশা? ভারতের প্রধানমন্ত্রী কোন ব্যক্তি নয়, একটি প্রতিষ্ঠান। যারা মোদির আসার বিরোধিতা করে তারা দেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারিনি। তারা ইয়াহিয়া, টিক্কা, নিয়াজীর বংশধর। বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী। এখনও পাকিস্তানের স্বপ্ন দেখে।

 

 

/ইএইচএস/এনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আত্মরক্ষার সিদ্ধান্ত আমরা নিজেরাই নেব: নেতানিয়াহু
আত্মরক্ষার সিদ্ধান্ত আমরা নিজেরাই নেব: নেতানিয়াহু
হেলমেটের মান নির্ধারণ হবে কবে?
হেলমেটের মান নির্ধারণ হবে কবে?
ঝালকাঠিতে নিহত ১৪ জনের পরিবার পাচ্ছে ৫ লাখ টাকা করে
ঝালকাঠিতে নিহত ১৪ জনের পরিবার পাচ্ছে ৫ লাখ টাকা করে
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
ফিলিস্তিনের পূর্ণ সদস্যপদ নিয়ে জাতিসংঘে ভোট
সর্বাধিক পঠিত
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
‘ভুয়া ৮ হাজার জনকে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’
এএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
রেস্তোরাঁয় ‘মদ না পেয়ে’ হামলার অভিযোগএএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
হজ নিয়ে শঙ্কা, ধর্ম মন্ত্রণালয়কে ‍দুষছে হাব
হজ নিয়ে শঙ্কা, ধর্ম মন্ত্রণালয়কে ‍দুষছে হাব
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’