X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘মহামারিকালে দেশে অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্যসেবায় ভোগান্তি’

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
১১ এপ্রিল ২০২১, ২২:৫৩আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০২১, ২২:৫৩

গত বছর কোভিড-১৯ মহামারিকালে বাংলাদেশে অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্যসেবার পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি মূল্যায়নে দেখা গেছে, জনস্বাস্থ্যের বেশকিছু ক্ষেত্রে সুফল অর্জনের জন্য অধিকতর প্রচেষ্টা প্রয়োজন। রবিবার (১১ এপ্রিল) ব্র্যাক আয়োজিত অনলাইন অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশে অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্যসেবায় কোভিড-১৯ এর প্রভাব: দ্রুত মূল্যায়ন’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে সুপারিশে এ কথা বলা হয়। 

ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচি (এইচএনপিপি) এবং অ্যাডভোকেসি ফর সোশ্যাল চেঞ্জ বিভাগ এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস (বিইউএইচএস) গবেষণাটি পরিচালনা করে।

সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তঃসত্ত্বা মা, প্রসূতি ও নবজাতক, বিভিন্ন রোগের টিকা প্রত্যাশী পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু, জরুরি রোগী, জটিল রোগে ভুগতে থাকা ব্যক্তি, বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা মহামারিকালে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্যদের চেয়ে নাজুক অবস্থায় আছেন। এই পরিস্থিতির প্রতিকারের জন্য এবং কোভিড পূর্ববর্তী স্বাস্থ্য খাতে অর্জিত সুফলগুলো ধরে রাখতে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে বহুপাক্ষিক উদ্যোগ গ্রহণের জন্য প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।

অনলাইন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের (ডিজিএইচএস) অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা) অধ্যাপক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে যে শুধু করোনা রোগী বা অন্য রোগে আক্রান্ত রোগীরা সমস্যায় পড়েছেন তা নয়, বরং সরকারের অনেক সাফল্যজনক স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে এবং রোগ প্রতিরোধ কর্মসূচিতেও এর প্রভাব পড়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘শুধু করোনা নয়, বরং প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে সাধারণ জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সহযোগী সংগঠনগুলোকে নিয়ে কাজ করতে চাই, যেখানে সরকারের নেতৃত্বে তাদের সমান অংশীদারিত্ব থাকবে।’

ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ্ বলেন, ‘যেহেতু এই মহামারির ঢেউ আগামী দুই বা আড়াই বছরের মধ্যে চলে যাচ্ছে না, সেদিকটি মাথায় রেখে আমাদের কমিউনিটি সিস্টেমকে শক্তিশালী করা দরকার। ব্র্যাক প্রতিরোধ, সুরক্ষা এবং ভ্যাকসিন মোবিলাইজেশন নিয়ে কাজ করতে চায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা গত বছর গাজীপুরে কমিউনিটি মোবিলাইজেশন করেছি এবং এরপরে এফসিডিও-এর সহায়তায় সেই সেবা ৬টি জেলায় সম্প্রসারণ করেছি। এই এলাকাগুলোতে সুফল পেয়েছি আমরা। কারণ, এখানে সংক্রমণ কম এবং ভ্যাকসিন নেওয়ার হারও বেশি। এখন আমরা যে সব এলাকায় সংক্রমণ বেশি, সেখানে এই সেবা সম্প্রসারণ করে বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিতে চাই। পাশাপাশি যে সব জায়গায় ব্র্যাক নেই, সেখানে অন্য এনজিও কীভাবে সম্পৃক্ত হতে পারে, সেই সুযোগগুলোও আমরা বিবেচনা করছি।’

গবেষণার ফলাফল উপস্থাপনা শেষে প্যানেল আলোচনায় বক্তব্য রাখেন— এইচএনপিপির সহযোগী পরিচালক ডা. মোর্শেদা চৌধুরী, বিইউএইচএসের  উপাচার্য প্রফেসর ফরিদুল আলম, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের  সহযোগী ডিন প্রফেসর ডা. মালাবিকা সরকার এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার তৌহিদুল ইসলাম। সঞ্চালক ছিলেন ব্র্যাকের ঊর্ধ্বতন পরিচালক কেএএম মোর্শেদ।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ৬০.৮% খানায় কিছুটা অসুস্থতা ছিল (কোভিড -১৯ বাদে) এবং ২৮.৬% জানিয়েছেন যে, তাদের চিকিৎসা খরচ বেশি হয়েছে। ১০% খানার অভিযোগ ছিল— হাসপাতালগুলো থেকে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণে তাদের অসুবিধা হয়েছে। দুই পঞ্চমাংশ খানা অভিযোগ করেছে— সঠিক সেবার অভাবে তাদের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে।  বিশেষত নারীও শিশুদের জন্য পরিস্থিতি আরও খারাপ ছিল। মহামারির আগে অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের দেওয়া পরিষেবাগুলো গবেষণাকালীন এসব খানার ৫৪ শতাংশ নারী পাননি। জরিপের সময়কালে ২০ শতাংশ প্রসব হয়েছে প্রশিক্ষণহীন ধাত্রীদের দিয়ে। মূলত উচ্চ যাতায়াত খরচ এবং কোভিড -১৯ এর ভয়ে গুরুতর অসুস্থ প্রতি সাত জনের একজন শিশুকে হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। শহরের তুলনায় গ্রামে সামগ্রিক পরিস্থিতি ছিল আরও খারাপ।

মহামারিতে স্বাস্থ্যসেবা খাতের চ্যালেঞ্জগুলো কমাতে এই গবেষণায় কিছু সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— এই পরিস্থিতিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার, স্বাস্থ্যতথ্য ব্যবস্থা জোরদারকরণ এবং সমন্বয় কর্মের কার্যকারিতা বৃদ্ধি। পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ এবং তাদের  প্রয়োজনীয় দক্ষতাগুলোর প্রশিক্ষণ দিয়ে  প্রস্তুত রাখা, আধুনিক ডায়াগনস্টিক এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম স্থাপন করাও গুরুত্বপূর্ণ। রেফারেল প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা উন্নত করার সুপারিশের পাশাপাশি বাংলাদেশে শক্তিশালী সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা তৈরি ও বজায় রাখতে স্বাস্থ্যখাতে অর্থায়নের পুনর্বিবেচনা করতেও বলা হয়েছে।

/এসও/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ী মিডফিল্ডারকে নিয়ে দুঃসংবাদ
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ