X
রবিবার, ২৯ জুন ২০২৫
১৫ আষাঢ় ১৪৩২

অক্সিজেন নিয়ে চলছে কাড়াকাড়ি!

জাকিয়া আহমেদ
১২ এপ্রিল ২০২১, ১১:০০আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২১, ১১:০০

৫৫ বছরের শাহজাহান আলী। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ভর্তি আছেন। তার ১৫ লিটার করে অক্সিজেন চলছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই অক্সিজেন লেভেল কমে চলে আসে ৭৫ শতাংশে। অন্য রোগীর কাছ থেকে অনেকটা জোর করেই হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা খুলে অক্সিজেন দেওয়া হয় শাহজাহান আলীকে।

দেশে করোনার সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে তাতে হাসপাতালগুলোতে সাধারণ বেডই পাওয়া যাচ্ছে না। পাওয়া যাচ্ছে না নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)। চিকিৎসকরা বলছেন, আক্রান্ত হয়ে যারা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে যান তাদের বেশিরভাগেরই দরকার হচ্ছে উচ্চমাত্রার অক্সিজেন। এর জন্য দরকার হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার।

কিন্তু এই ক্যানুলার সংখ্যা দেশে একেবারেই অপর্যাপ্ত। এটি পর্যাপ্ত পরিমাণ থাকলে রোগীদের আইসিইউতে যাওয়ার হার কমানো যায়, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

চিকিৎসকরা বলছেন, সাধারণ সিলিন্ডারে প্রতি মিনিটে ১৫ লিটার অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব। করোনা আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে যাদের দরকার হয় তাদের ৫০ ভাগ সুস্থ হয়ে যান ১৫ লিটারের মধ্যেই।

কিন্তু এরপরও যাদের দরকার হয়, তাদের জন্য হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা যন্ত্র লাগে। ওটা দিয়ে ৮০ লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন দেওয়া যায়।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন আইসোলেশন ওয়ার্ড-এ দায়িত্বরত ডা. শাহরিয়ার খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, হাসপাতালে ৬০- ৭০টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা আছে। কিন্তু করোনা আক্রান্ত ও সন্দেহভাজন করোনা রোগী ভর্তি আছেন প্রায় এক হাজার। দেখা যাচ্ছে অনেক রোগীর হঠাৎ করেই অক্সিজেন কমে যাচ্ছে। তখন মেশিন নিয়ে শুরু হয় টানাটানি। তুলনামূলক একটু ভালো রোগীর স্বজনকে বুঝিয়ে যার বেশি প্রয়োজন তাকে দিতে হচ্ছে। তবে এ নিয়ে হাসপাতালে চিৎকার চেঁচামেচি লেগেই আছে।

চিকিৎসকরা বলছেন. কোনও কারণে যদি হঠাৎ কারও অবস্থা ভালো হয়, তাকে বুঝিয়ে যার অবস্থা বেশি খারাপ তাকে ক্যানুলা দিতে বাধ্য হচ্ছি আমরা। কিন্তু এটা সমাধান নয়। আইসিইউতেও এই একই যন্ত্র দিয়ে রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া হয়। আর একদম শেষ পর্যায়ে গেলে তবেই রোগীকে ভেন্টিলেশনে (কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা) দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার একটি করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা বিভাগীয় শহরগুলোতেই পর্যাপ্ত নেই। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে তো চিন্তাই করা যায় না।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা বিষয়ক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায়, সারাদেশে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা রয়েছে ১১৫৮টি। অক্সিজেন কনসেনট্রেটর আছে ৯৫৮টি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক চিকিৎসক বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, গত পরশু সন্ধ্যা থেকে চারজন রোগী এলো যাদের স্যাচুরেশন ৬৫ থেকে ৮০ শতাংশ। সকলকেই হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা দিয়ে অক্সিজেন দেওয়া দরকার। অথচ কোনও মেশিন খালি নেই।

‘অধিকাংশ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মৃদু বা মাঝারি লক্ষণ দেখা যায়। কারও আবার কোনও লক্ষণই দেখা যায় না। খুব অল্প সংখ্যকেরই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার হয়। পর্যাপ্ত হাই ফ্লো অক্সিজেন সাপ্লাই থাকলে তাদের ভেতর থেকে হাতেগোনা দুয়েকজনের আইসিইউ লাগে।’ এমনটা জানালেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান।

৮০ লিটার অক্সিজেন দিয়ে সংকটাপন্ন রোগীদের শতকরা ৯০ শতাংশকেই কাভার করা যায় বলে মন্তব্য করেন প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী।

তিনি বলেন, ‘অধিকাংশ রোগীকেই হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা এবং হাই মাস্কসহ অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে ম্যানেজ করা যায়। যেহেতু অধিকাংশ হাসপাতালে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা আইসিইউতেই আছে, এ কারণে আইসিইউর দরকার হচ্ছে বেশি।’

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রোগীর অনুপাতে চিকিৎসকসহ অন্যান্য জনবল এবং হাই ফ্লো ক্যানুলার লাইন থাকতে হবে। এমনটা জানিয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সে হিসেবে আমরা অনেক ওভারলোডেড। এ হাসপাতালে প্রায় ১০০টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এর মধ্যে ৮০ থেকে ৮৫টি সবসময়ই চলছে।

‘নতুন রোগী এলে দেখা যাচ্ছে তার কিছুক্ষণ পরেই তার হাই ফ্লো ক্যানুলা লাগছে। এখানে স্বল্পতা থাকলেও থাকতে পারে।’

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক বলেন, ‘ইচ্ছে থাকলেও ১০০-এর জায়গায় ১৫০ মেশিন বানানো সম্ভব নয়। কারণ এখানে অক্সিজেন সাপোর্টেরও একটা বড় ব্যাপার রয়েছে। আর আমরা তো এখন সেটা নিয়েও হিমশিম খাচ্ছি।’

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খলিলুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, ‘এখন রোগীদের এতো অক্সিজেন দরকার হচ্ছে যে সংকট লেগেই আছে। এ হাসপাতালে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা রয়েছে ২০টি। তার মধ্যে কয়েকটি আবার কাজ করে না। ১২-১৩টি ঠিক আছে।’

অধ্যাপক খলিলুর রহমান বলেন, ‘ক্যানুলা চালানোর মতো সবাই দক্ষ নয়। চালাতে না পারার কারণেও নষ্ট হয়েছে কিছু।’

তবে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলার জন্য ইতোমধ্যেই হাসপাতাল তার চাহিদা জানিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৩০টি মেশিনের জন্য ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। হয়তো এরমধ্যে চলে আসবে।’

 

/জেএ/এফএ/এনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রাজধানীতে মাইক্রোবাস-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ২  
রাজধানীতে মাইক্রোবাস-মোটরসাইকেল সংঘর্ষে নিহত ২  
সিএমপির তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘বার্মা সবুজ’ গ্রেফতার
সিএমপির তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ‘বার্মা সবুজ’ গ্রেফতার
জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে সরকার ব্যর্থ, ৩ আগস্ট আমরাই ঘোষণা করবো: নাহিদ ইসলাম
জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে সরকার ব্যর্থ, ৩ আগস্ট আমরাই ঘোষণা করবো: নাহিদ ইসলাম
পাকিস্তানের মধ্যাঞ্চলে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প
পাকিস্তানের মধ্যাঞ্চলে মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প
সর্বাধিক পঠিত
খুলনা প্রেসক্লাবে প্রেস সচিবকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ
খুলনা প্রেসক্লাবে প্রেস সচিবকে ঘেরাও করে বিক্ষোভ
সরকারি গাড়িতে দাওয়াতে গেলো ইউএনও’র পরিবার
সরকারি গাড়িতে দাওয়াতে গেলো ইউএনও’র পরিবার
বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকেছিলেন অফিস সহকারী হয়ে, বেরোলেন এমবিএ’র সনদ নিয়ে
বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকেছিলেন অফিস সহকারী হয়ে, বেরোলেন এমবিএ’র সনদ নিয়ে
মুরাদনগরে গলায় ছুরি ধরে নারীকে ধর্ষণ, থানায় মামলা
মুরাদনগরে গলায় ছুরি ধরে নারীকে ধর্ষণ, থানায় মামলা
‘সরকার দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ না করলে আন্দোলন ঘোষণা করবো’
‘সরকার দেশবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ না করলে আন্দোলন ঘোষণা করবো’