ব্রিটেনে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ে মৃত্যুহার ও ক্ষতিগ্রস্ত ছিল সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি কমিউনিটিতে। সংক্রমণের দুই দফায় ক্ষতিগ্রস্ত এথনিক কমিউনিটির তালিকায় শীর্ষে ছিল বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিরা। কীভাবে ও কী কারণে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যুহার বাংলাদেশি কমিউনিটিতে, তা উঠে এসেছে সম্প্রতি প্রকাশিত এথনিসিটি সাবগ্রুপের (এসএজিই) প্রতিবেদনে।
বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ভবিষ্যতে কীভাবে সংক্রমণ ও মৃত্যুহার কমানো যায়, এই বিষয়ে কিছু পরামর্শ ও প্রস্তাবনাও রয়েছে এসএজিই-র প্রতিবেদনটিতে।
কমিশন অন রেস অ্যান্ড এথনিক ডিসপার্টিজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশি কমিউনিটিতে মৃত্যুহার ও ক্ষয়ক্ষতি বেশি হওয়ার নেপথ্যে ছিল সংক্রমণ ঝুঁকি। এথনিক মাইনোরিটি কমিউনিটির একাধিক অসু্বিধাজনক পরিস্থিতি সংক্রমণ ও মৃত্যুহার বাড়িয়েছে। মূলত, স্বাস্থ্যগত কারণে বাংলাদেশিরা তুলনামুলকভাবে দুর্বল। বাংলাদেশিরা প্রধানত খুচরা বিক্রয়খাত, পরিবহন বিশেষত ট্যাক্সি ও সেবাখাতে কাজ করে। তুলনামুলকভাবে অসুস্থতাকালীন সবেতন ছুটি কম পাওয়ার কারণে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করাও এ কমিউনিটিতে করোনা সংক্রমন ভয়াবহ হওয়ার বড় কারণ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশিরা মূলত যৌথ পরিবারে বসবাস করেন। একই ছাদের নিচে পরিবারের তরুণ ও বৃদ্ধরা বসবাস করায় পরিবারের তরুণদের স্কুল, কলেজ এবং কর্মস্থল থেকে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে, যা পরিবারের বয়স্কদের করোনা সংক্রমিত হওয়ার বড় কারণ।
এতে বলা হয়েছে, এসব কারণ সন্মিলিতভাবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্য ভয়াল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ব্রিটেনের রিটেইল ও হসপিটালিটি খাত দীর্ঘসময় খোলা রাখা, কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষায় এসব খাতের কর্মীদের জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে উদ্যোগের অভাবের উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
এছাড়া স্বনির্ভর এবং ছোট পরিবার ও ব্যবসায়ের জন্য সরকারের আর্থিক সহায়তা ও ঋণ অপর্যাপ্ত ছিল। বিশেষত স্বনির্ভর ব্যক্তিদের জন্য পূর্ববর্তী বছরের প্রদেয় ট্যাক্সের উপর ভিত্তি করে সরকাররে দেওয়া সহায়তা তাদের পরিবারের চাহিদা পুরণে অপর্যাপ্ত ছিল।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, করোনা যখন পরিবারগুলোকে সংক্রমিত করছিল তখন পরিবার ও স্বজনকে কীভাবে নিরাপদ রাখতে হবে সে সম্পর্কে জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত পরামর্শ ও সহায়তা ছিল অপ্রতুল।
এমন বাস্তবতায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে অভিজ্ঞতা থেকে ভবিষ্যতে যে কোনও প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় শিক্ষা নেওয়া জরুরি বলে সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে। কর্মীদের সুরক্ষায় নিরাপদ কর্মক্ষেত্র নিশ্চিত করা ও কর্মীদের অসুস্থতাকালীন অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি ও সহজীকরণ, ভ্যাকসিন নেওয়ার সময় সবেতন ছুটি, ঋণের পরিবর্তে অনুদান প্রদানের প্রস্তাব করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
লন্ডন স্কুল অব ইকনোমিক্স অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সের নৃ-তত্ত্ব বিজ্ঞানের অধ্যাপক লোরা বেয়ার সাজ এথনিসিটি সাবগ্রুপের এ গবেষণা প্রতিবেদনের নেতৃত্ব দেন।
ব্রিটেনের বাংলাদেশি কমিউনিটির বর্ষীয়ান লেখক ও অধ্যাপক ড রেনু লুৎফা শনিবার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এসব কারণ ছাড়াও বাংলাদেশি কমিউনিটির খাদ্যাভ্যাস, চিরাচরিত বাংলাদেশি রীতির খাবারে পুষ্টিগুণ ও ভিটামিনের অপর্যাপ্ততাও একটি বড় কারণ। এছাড়া বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে অনেক সময় বাইরে থেকে আসা কেয়ারারদের কাছ থেকেও অনেকে সংক্রমিত হয়েছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমাদের অপুষ্টিকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি কেয়ারারদের সুরক্ষা পোশাকের অভাব ছিল। তাদেরকে পিপিই দেওয়া হয়েছে অনেক পরে।