খুলনার কয়রা উপজেলায় বেড়িবাঁধের বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় ছিদ্র দিয়ে লোনা পানি প্রবেশ করেছে। দশালিয়া থেকে হোগলা পর্যন্ত কপোতাক্ষ নদীর প্রায় তিন কিলোমিটার বাঁধের অধিকাংশ জায়গা জরাজীর্ণ। ফলে গত বছরের ঘূর্ণিঝড় আম্পানের ক্ষত শুকিয়ে উঠার আগেই যে কোনও মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। এলাকার মানুষ ঘর-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, রাস্তা, মাছের ঘের, ফসলি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য সংগ্রাম করছেন প্রতিনিয়ত। তাদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
গত বছরের ২০ মে আম্পানের আঘাতে জোয়ারের পানির চাপে দশালিয়ার বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়। ১১ মাস অতিবাহিত হলেও টেকসই বাঁধ নির্মাণ করা হয়নি। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি বরাদ্দ হলেও টেকসই বাঁধ তৈরিতে গড়িমাসি করছে একটি মহল।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কয়রার দশহালিয়া থেকে হোগলা পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার বাঁধ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। জোয়ারের পানি বাঁধের বিভিন্ন স্থান দিয়ে চুইয়ে ও ছোট-বড় ছিদ্র দিয়ে এলাকায় প্রবেশ করছে। পানি বন্ধের জন্য ২৭ এপ্রিল কিছু মানুষকে কাজ করতে দেখা যায়। আবার মৎস্য ঘেরে নদী থেকে পাইপের মাধ্যমে পানি উঠানো হচ্ছে। ফলে ঝুঁকি আরও বাড়ছে।
স্থানীয় মাছ চাষি মতিয়ার রহমান বলেন, বাঁধ নিয়ে চিন্তিত। যে কোনও মুহূর্তে বাঁধ ভেঙে নদী ও তার ঘের একাকার হয়ে যেতে পারে। এছাড়া বাঁধ ভাঙলে কয়েকটি গ্রাম পানিতে ভেসে যাবে।
আরেক মাছ চাষি নাসির জানান, গত বছর আম্পানে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় তার দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখনও সে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তিনি লিজ নিয়ে ঘের (মৎস্য চাষ) করেন। এবার ভেঙে গেলে তাকে বড় ধরনের ক্ষতিতে পড়তে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন জানান, বাঁধ মেরামতে সরকারি বরাদ্দ হয়েছে। তবুও কাজ করতে গড়িমসি হচ্ছে। ফলে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। যে কোনও মুহূর্তে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও মশিউল আবেদীন বলেন, পানি প্রবেশের সংবাদ শুনেছি। তাৎক্ষণিক পানি বন্ধের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ইতোমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। আশা করি কোনও সমস্যা হবে না। এছাড়া ১৪ ফুট রাস্তা চওড়া করে ৪৮০ মিটার রাস্তার কাজও চলমান রয়েছে। অপরদিকে জাইকার অর্থায়নে হোগলা থেকে এক কিলোমিটার রাস্তার কাজ করা হবে।
উল্লেখ্য, উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া কপোতাক্ষ নদের বেড়িবাঁধ উপচে গত বছরের এপ্রিল মাসে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে। স্থানীয় লোকজন স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করে পানি প্রবেশ বন্ধ করেন। কিন্তু ২০ মে আম্পানে শেষ রক্ষা করতে পারেননি। বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হয়। এর আগে ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলার সময়ও ওই এলাকার বাঁধ ভেঙে লোনা পানিতে বড় রকমের ক্ষতি হয়।