X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘দেশের ৯২ শতাংশ শ্রমিকের স্বীকৃতি নেই’

আমানুর রহমান রনি
০১ মে ২০২১, ২৩:২৪আপডেট : ০৩ জানুয়ারি ২০২২, ১৯:৫৮

দেশের মোট শ্রমিকের প্রায় ৯২ শতাংশ শ্রমিকদের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি নেই। তারা অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক হিসেবে পরিচিত। এসব শ্রমিকদের রোগ-বালাই, অসুখ-বিসুখ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দুর্ঘটনায় ও মৃত্যুর সময়ে মানুষের দয়ার ওপর নির্ভর করতে হয়। তাদের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকায় তারা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তাদের প্রয়োজনে নূন্যতম অর্থ পায় না। ২০১৩ সালে নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য বিমার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা অজানা কারণে বন্ধ হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞরা, শ্রম আইনের পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে সকল শমিককে এক কাতারে নিয়ে আসার দাবি জানিয়েছেন।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী, অর্থনৈতিকভাবে কর্মক্ষম শ্রমশক্তি ৬ কোটি ৭ লাখ৷ এ শ্রমশক্তির মধ্যে ৫ কোটি ৮০ লাখ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত৷ বাকি ২৭ লাখ বেকার৷ পরিসংখ্যান আরও বলছে, পরিবারের মধ্যে কাজ করেন কিন্তু কোনও মজুরি পান না এমন মানুষের সংখ্যা ১ কোটি ১১ লাখ৷ আর ১ কোটি ৬ লাখ আছেন দিনমজুর, যাদের কাজের নিশ্চয়তা নেই, নেই মজুরির কোনও নিশ্চয়তা৷ দেশে বিভিন্ন পেশার প্রায় সাতকোটি শ্রমিক রয়েছে। এর মধ্যে ১০ শতাংশের কম শ্রমিকের প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি রয়েছে। বাকি প্রায় ৯২ শতাংশ শ্রমিকের কোন প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি নেই। এরমধ্যে রয়েছে, নির্মাণ শ্রমিক, জাহাজহভাঙ্গা শ্রমিক, গৃহশ্রমিক, মাটিকাটা শ্রমিক, কৃষি শ্রমিক, দিনমজুর, পরিবহন শ্রমিক, রিকশা শ্রমিক, হোটেল শ্রমিক, জেলে বা মৎস্য শ্রমিকসহ আরো অসংখ্য কারখানা ও ক্যাটাগরির শ্রমিক রয়েছে যাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোন স্বীকৃতি নেই।

এই বৃহৎ শ্রমিক জনগোষ্ঠির জন্য নেই কোনও সুরক্ষা বা সুনির্দিষ্ট মজুরি৷ পোশাক কারখানাসহ ৫৪ ধরনের শিল্পে সরকার সর্বনিম্ন মজুরি বেঁধে দিলেও শ্রমিকদের বিশাল একটি অংশ অনিশ্চিত জীবন যাপন করে। রয়েছে মৃত্যু ঝুঁকি।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজের (বিলস) হিসাবে, ২০২০ সালে ৮৪ জন, ২০১৯ সালে ১৩৪, ২০১৮ সালে ১৬১ জন এবং ২০১৭ সালে ১৩৪ জন নির্মাণ শ্রমিক কাজে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা গেছেন। এসব শ্রমিকরা মানুষের করুন আর সাহায্য নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। তারা কোনও ক্ষতিপূরণ পায়নি।

ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়ন বাংলাদেশ (ইনসাব) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এ কে এম শহিদুল আলম ফারুক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নির্মাণ শ্রমিকরা দুর্ঘটনায় মারা গেলে তাদের কেউ খোঁজ নেয়ার থাকে না। তাদের লাশটি বাড়ি পাঠাতেও চাঁদা তুলতে হয়। মানুষের সাহায্যে বা সদকার হয়ে থাকে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারি সাহায্য পাওয়া সোনার হরিণ। অনেক কাঠখড় পোড়ানোর পর কেউ কেউ সরকারি সহায়তা পায়, তবে তা অনেক দীর্ঘ প্রক্রিয়া। তাছাড়া সরকারি সহায়তা পেতে শ্রমিকের স্বীকৃতির বিষয়টিও রয়েছে। এতো সব কাগজপত্র গুছিয়ে কেউ আর সহায়তার নাম মুখে নেয় না। আমরা প্রস্তাব করেছিলাম, যাতে সব শ্রমিক সমানভাবে এই সহযোগিতা পায়, তবে সেটি বাস্তবায়ন হয়নি।’

এই শ্রমিক নেতা বলেন, ২০১৩ সালে শ্রমিকদের বীমা কাযক্রম শুরু করা হয়েছিল। বীমার ১৩শ টাকার প্রিমিয়াম সরকার ৮৫০ টাকা এবং শ্রুমিকের ৪৫০ টাকা দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, তাও বন্ধ হয়ে গেছে অজানা কারণে। বীমা চালু থাকলেও শ্রমিকরা কিছু সহায়তা পেতো সেটাও বন্ধ করে দেওয়া হলো।

তবে সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যান ফাউন্ডেশন দুর্ঘটনায় মৃত্যু, চিকিৎসা ও তাদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য ৩ হাজার ৫শ ১৪ জন শ্রমিককে ১১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। তবে শ্রমিক নেতারা দাবি করেছেন, এই অনুদান প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। অনুদান পেতেও অনেক কাঠখড় পুড়াতে হয় শ্রমিকদের।

বিলস’র পরিচালক কোহিনূর মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশের শ্রমিকদের জন্য তেমন কোন ব্যবস্থাই নেই। সামাজিক সুরক্ষার যেসব ব্যবস্থা রয়েছে, তার মধ্যেও শ্রমিকরা নেই। এমনকি স্বীকৃতিও নেই। কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের শ্রম আইনে নিযোগপত্র দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও শ্রমিকদের কোন নিয়োগপত্র দেওয়া হয় না। শ্রমিকরা শুরুতেই এভাবে অধিকার বঞ্চিত হয়।’

/এফএএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
এএফসি নারী চ্যাম্পিয়নস লিগে ভারত আছে, নেই বাংলাদেশ
এএফসি নারী চ্যাম্পিয়নস লিগে ভারত আছে, নেই বাংলাদেশ
‘প্রেমটা থাকুক, বিয়ে কোনও এক সময় হয়ে যাবে’
‘প্রেমটা থাকুক, বিয়ে কোনও এক সময় হয়ে যাবে’
শ্রম অধিকার ও বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের গতিশীলতা
শ্রম অধিকার ও বাংলাদেশ-মার্কিন সম্পর্কের গতিশীলতা
হ্যান্ডব্রেক ছাড়াই চলে রাজধানীর বাস, পায়ের ব্রেকেও নেই জোর
হ্যান্ডব্রেক ছাড়াই চলে রাজধানীর বাস, পায়ের ব্রেকেও নেই জোর
সর্বাধিক পঠিত
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
শনিবারে স্কুল খোলা: আন্দোলন করলে বাতিল হতে পারে এমপিও
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
কেমন আছেন মিল্টনের আশ্রমে আশ্রিতরা
কেমন আছেন মিল্টনের আশ্রমে আশ্রিতরা
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
‘চুন্নু স্বৈরাচারের দোসর’, বললেন ব্যারিস্টার সুমন
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা
এক লাফে ডলারের দাম বাড়লো ৭ টাকা