X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বর্ণ ব্যবসায়ীরাই জড়িয়ে পড়ছে স্বর্ণ ডাকাতিতে

রিয়াদ তালুকদার
১৩ মে ২০২১, ১৫:০৩আপডেট : ১৩ মে ২০২১, ১৫:০৩

দীর্ঘ ২০ বছর ধরে তাঁতীবাজারে স্বর্ণের ব্যবসা পদ্ম পলাশ ঘোষের। বিবেকানন্দ জুয়েলার্স নামে তার একটা প্রতিষ্ঠানও ছিল। অনেকদিন ধরে ব্যবসায় জড়িত থাকায় তাঁতীবাজারের অন্যান্য স্বর্ণব্যবসায়ীদের সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের কাছ থেকে আলাপচারিতায় জেনে নেয় স্বর্ণের অর্ডার কোথা থেকে আসছে, কবে কোথায় কিভাবে ডেলিভারী দেয়া হবে- এসব। তথ্যগুলো সে জানিয়ে দেয় ডাকাতি যারা করবে তাদেরকে। এভাবেই স্বর্ণব্যবসায়ের আড়ালে পদ্মপলাশ ঘোষ হয়ে ওঠে একটি ডাকাত চক্রের সক্রিয় সদস্য।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) সাভারে একটি স্বর্ণ ডাকাতি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারে, কেবল পদ্ম পলাশ ঘোষই নয়, আরও অনেক স্বর্ণ ব্যবসায়ীই জড়িত রয়েছে স্বর্ণ ডাকাতি সঙ্গে। আরো জানতে পারেন, বেশ কয়েকটি স্বর্ণ ডাকাতির সাথে এই পদ্ম পলাশ ঘোষের রয়েছে সরাসরি সংশ্লিষ্টতা। ডাকাত চক্রের দুটি অংশ, একটি গোয়েন্দা শাখা এবং অপরটি অপারেশন টিম। পদ্ম পলাশ ঘোষ ছিল গোয়েন্দা শাখার প্রধান।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কম সময়ে বেশি লাভের আশায় এ ধরনের ডাকাতির সাথে জড়িয়ে পড়ে সে। দশ থেকে পনেরো মিনিটের ডাকাতির সফল অভিযানে ভাগ পেত লাখ টাকার উপরে। এই চক্রের অপারেশন শাখার প্রধান সোহেল আহমেদ পল্লব (যে এর আগেই পিবিআইএর হাতে গ্রেফতার হয় বর্তমানে কারাগারে রয়েছে) এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ঘটনার সাথে তার সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে। পল্লব জানিয়েছে, পদ্ম পলাশ ঘোষের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই তাদের অপারেশনগুলো পরিচালিত হতো।

ডাকাতির অভিনব পদ্ধতি

পদ্ম পলাশ ঘোষের বিরুদ্ধে কিছুদিন আগে একটি ডাকাতি মামলা হয়। সে নিম্ন আদালতে জামিন নিতে আসে। কিন্তু জামিন না দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন বিচারক। পরবর্তীকালে জিজ্ঞাসাবাদের লক্ষ্যে আদালতের অনুমতি নিয়ে তাকে নিয়ে আসে পিআইবি। জিজ্ঞাসাবাদে বের হয়ে আসে ডাকাতির পুরো প্রক্রিয়াটি।

প্রথমে তারা একজন ব্যবসায়ীকে টার্গেট করত। ঘনিষ্ঠতার সুযোগে জেনে নিতো ওই ব্যবসায়ীর ডেলিভারি দেওয়া স্বর্ণ কোথায় যাচ্ছে, কখন যাচ্ছে, কিভাবে যাচ্ছে- এসব বিষয়। সকল তথ্য সংগ্রহের পর গোয়েন্দা শাখা সেসব জানিয়ে দিতো অপারেশন টিমকে। প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে পুরো পরিকল্পনার ব্লুপ্রিন্ট করা হতো। অপারেশন টিমের সদস্যরা টার্গেটকৃত ব্যক্তির গাড়িটি রাস্তায় থামাতো গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে। টার্গেটকৃত ব্যক্তির কাছে থাকা ব্যাগটিতে অবৈধ জিনিসপত্র রয়েছে বলে গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিত। কিছুদূর আসার পর ব্যক্তি কে মারধর করে তার সাথে থাকা ব্যাগটি নিয়ে চম্পট দিতো।

ডাকাতির স্বর্ণ হাতবদল হয় যেভাবে

একেকটি ঘটনার পরই যত দ্রুত সম্ভব স্বর্ণগুলো বিক্রি করতে তৎপর থাকে চক্রের সদস্যরা। ডাকাতির এই স্বর্ণ কেনার জন্য তাঁতীবাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে অনেকে জড়িত রয়েছে। তুলনামূলক কমদামে এসব স্বর্ণ কেনার পর দ্রুত তারা সেসব গলিয়ে নতুন কোন গয়না তৈরি করে ফেলে। যারা স্বর্ণ কেনে তাদের মধ্যে সম্প্রতি একজনকে গ্রেফতার করেছে পিবিআই। ডাকাতি হওয়া স্বর্ণ তাঁতিবাজার এলাকায় যারা নিয়মিত কেনে এমন আরও কয়েকজন ব্যবসায়ীকে চিহ্নিত করতে পেরেছে। তাদেরকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। শীঘ্রই তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে বলেও জানিয়েছেন পিবিআইয়ের একজন কর্মকর্তা।

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন পিবিআই এর ডাকাতি মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা রাশেদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, তাঁতীবাজারের আরো চার-পাঁচ জন ব্যবসায়ী বিভিন্ন সময়ে ডাকাতির সাথে জড়িত। তাদেরকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এ ডাকাতির মামলাটির আছে জড়িত ১০ জনকে এরই মধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার মধ্যে চক্রটির অপারেশন শাখার প্রধান এবং গোয়েন্দা শাখার প্রধানও রয়েছে।

স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির কথা

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনর ঢাকা জেলার এসপি খোরশেদ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, স্বর্ণ ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে আমরা কথা বলেছি। তদন্তে ওঠে আসা বিষয়গুলো তাদেরকে জানিয়েছি। পরামর্শ দিয়েছি- যেন তারা তাদের সহযোগী ব্যবসায়ীদেরকে নিজেদের তথ্য জানানোর ক্ষেত্রে সতর্ক থাকেন। দোকানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিচিতি বিষয়ে নিশ্চিত থাকেন। সেই সঙ্গে জানিয়েছি- পুরো পরিস্থিতি আমরাও নিয়মিত মনিটরিং করছি। এই ডাকাত চক্রের সাথে আরও যারা জড়িত তাদেরকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।

এদিকে, বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির সভাপতি এনামুল হক খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যারা আমাদের সমিতির সদস্য তাদেরকে আমরা স্বর্ণ ব্যবসায়ী বলি। অন্যদের আমরা স্বর্ণ ব্যবসায়ী বলি না। ঢাকা শহরে আমাদের সমিতির সাড়ে সাতশোর মতো সদস্য রয়েছে। তাঁতীবাজারে শত শত স্বর্ণের দোকান রয়েছে, সেখান থেকে মাত্র ৭০ জন আমাদের সমিতির সদস্য। বাকিরা আমাদের সদস্য নয়। তারপরও বিষয়গুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। আমাদের সমিতির কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে যদি এ ধরনের অভিযোগ আসে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।

/এমকে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ট্রলারের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে চার জন অগ্নিদগ্ধ
ট্রলারের ইঞ্জিন বিস্ফোরণে চার জন অগ্নিদগ্ধ
প্রিয় দশ
প্রিয় দশ
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সম্পর্কিত প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ করার নির্দেশ
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সম্পর্কিত প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ করার নির্দেশ
বাংলাদেশে চীনের উদ্যোক্তাদের বস্ত্র ও পাট খাতে বিনিয়োগের আহ্বান নানকের
বাংলাদেশে চীনের উদ্যোক্তাদের বস্ত্র ও পাট খাতে বিনিয়োগের আহ্বান নানকের
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
এবার চীনে আগ্রহ বিএনপির
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
রাজধানীর ৫ জায়গায় তরমুজ বিক্রি হবে কৃষকের দামে
রাজধানীর ৫ জায়গায় তরমুজ বিক্রি হবে কৃষকের দামে