X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
ডিজিটাল উপকূল-৩

উপকূলের ঘরে ঘরে ডিজিটাল ব্যাংক

শাহেদ শফিক, উপকূলীয় অঞ্চল থেকে ফিরে
১৩ মে ২০২১, ২৩:৪৩আপডেট : ১৬ মে ২০২১, ২৩:০৭

দুর্গম এক চর ঢালচর। বর্ষায় বলতে গেলে বাকি দেশের সঙ্গে যোগাযোগ থাকে বন্ধ। আবহাওয়া ভালো থাকলে দিনে দুয়েকবার যাতায়াতের সুযোগ আছে উপজেলা হাতিয়া বা মনপুরার সঙ্গে। এ চরে ১০ হাজার মানুষের বাস। এখানকার বাসিন্দাদের অনেকে কাজ করেন শহর ও অন্যান্য অঞ্চলে। অন্য সব যোগাযোগ অনুন্নত হলেও লোকগুলোর উপার্জিত অর্থ মুহূর্তেই চলে যাচ্ছে তাদের ঘরে। আর এমনটা সম্ভব হয়েছে ডিজিটাল মোবাইল ব্যাংকিং সেবার কারণে।

দিনে আয় সন্ধ্যায় বাজার

এই চরের মসজিদ মার্কেট এলাকায় বাস করেন মাইমুনা আক্তার। স্বামী গিয়াস উদ্দিন চট্টগ্রামে রিকশা চালান। তার দিনের উপার্জিত অর্থ সন্ধ্যায় চলে আসে মাইমুনার মোবাইলে। বিকাশ, নগদ, রকেট ও ড্যাচ বাংলাসহ সব সুবিধাই আছে এই পরিবারের। টাকা পাওয়ার পর তা তুলতে ও বাজার করতে সন্ধ্যায় বের হন মাইমুনা।

মাইমুনার মতো চরের বাকি সব পরিবারেরও আছে মোবাইল ওয়ালেট ও মোবাইল ব্যাংকিং সুবিধা। চরের বাজারে রয়েছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দোকান। মুহূর্তেই নগদ টাকা উঠিয়ে নিতে পারেন তারা।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সুবিধা রয়েছে দোকানে দোকানে মাইমুনার সঙ্গে কথা হয় বাংলা ট্রিবিউনের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এক সময় স্বামী দূরের কোনও জেলা শহরে কাজের সন্ধানে গেলে সুদে টাকা নিয়ে আমাদের দিয়ে যেতো। মাসের পর মাস সেই ঋণ ও সুদ পরিশোধ করতে হতো আমাদের। দিশেহারা হয়ে পড়তাম। এখন সুদের কারবারিরা সেধেও ঋণ দিতে পারে না। কারণ, স্বামী দিনে যা আয় করে সন্ধ্যার মধ্যেই সেটা আমার মোবাইলে চলে আসে। মোবাইলই এখন আমাদের ব্যাংক।’

সরেজমিন দেখা গেছে, ঢালচরের প্রতিটি মানুষের মোবাইল ফোনে ব্যাংকিং কোম্পানিগুলোর অ্যাকাউন্ট রয়েছে। উপকূলীয় উপজেলা সুবর্ণচরের দুর্গম এলাকাগুলোতেও মোবাইল ব্যাংকিং জনপ্রিয়তা পেয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম ও হাটবাজারগুলোতে মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানিগুলোর এজেন্ট আছে যথেষ্ট।

ডাচ বাংলা মোবাইল ব্যাংকিং (রকেট) কর্মকর্তা মো. এরশাদ হোসেন জানান, ‘২০১১-১২ সালে সুবর্ণচরে মোট এক হাজার গ্রাহকও বানাতে পারিনি। ধীরে ধীরে মানুষের আস্থা ফিরলে প্রচুর গ্রাহক হয়।’

এ কর্মকর্তার মতে, সুবর্ণচরের প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকই এখন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আওতায় আছে। ডিজিটাল এ লেনদেন ব্যবস্থা বদলে দিয়েছে এখানকার মানুষের জীবনযাত্রা।

উপকূলের ঘরে ঘরে ডিজিটাল ব্যাংক উপবৃত্তির টাকা কাটতে পারে না

সোনাদিয়া ইউনিয়ন ডিজিটাল তথ্যসেবা কেন্দ্রের পরিচালক মুজাম্মেল হোসেন মিলন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘একসময় লেনদেনের জন্য কয়েক কিলোমিটার হেঁটে জেলা সদরে যেতে হতো। এতে সময় তো লাগতোই, নিরাপত্তার ঝুঁকিও ছিল। এখন মানুষ মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন করছে। প্রতিটি পরিবারে অন্তত একটি করে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট আছে। শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকাও এর মাধ্যমে আসছে।’

নিঝুম দ্বীপের নামারবাজার স্কুলের শিক্ষার্থী ঝরনা আক্তার (ছদ্মনাম) বলেন, ‘আগে স্যারেরা বিভিন্ন খরচের কথা বলে আমাদের উপবৃত্তির টাকা কেটে রেখে দিতো। এখন পারে না। কারণ, টাকা আমাদের মোবাইল অ্যাকাউন্টে চলে আসে।’

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সরকারের দূরদর্শিতার কারণে অর্থনীতির চাকা ঘুরছে মাইমুনাদের মতো উপকূলের প্রতিটি ঘরে। এর সুফল পাওয়া সম্ভব হয়েছে ডিজিটালাইজেশনের কারণেই।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নব্বইয়ের দশকে যখন দেশে মোবাইল ফোনের ব্যবহার শুরু হয় তখনও এমনটা কেউ ভাবতে পারেনি। মোবাইল ফোনের টেকনিক্যাল ব্যবহার বদলে দিচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি।

উপকূলের ঘরে ঘরে ডিজিটাল ব্যাংক পরিসংখ্যান

দেশের জনগোষ্ঠীর বড় একটি অংশ এখন এসব সেবার গ্রাহক। সারা দেশে এসব সেবায় নিবন্ধনের সংখ্যা ১৪ কোটি (একজনের একাধিক অ্যাকাউন্ট ধরে)। সক্রিয় ব্যবহারকারী আছে ৫ কোটির কিছু কম।

এশিয়ান সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট (এসিএফডি) পরিচালিত অন্য এক জরিপে দেখা যায়, তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের মাধ্যমে মাসে ১ হাজার ১১ কোটি টাকা যায় গ্রামে। ৬২ শতাংশ শ্রমিক নিয়মিত গ্রামে টাকা পাঠান। এদের ৮২ শতাংশই মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নেন।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) মোবাইল ব্যাংকিং কোম্পানি বিকাশ-এর ওপর এক জরিপ পরিচালনা করে। তাতে দেখা গেছে, বিকাশ ব্যবহারে মানুষের আয় বাড়ছে।

গবেষণার ফলাফলে বলা হয়েছে, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবহার আরও বেড়ে যায়। বন্যার সময় ক্যাশ-ইন ৩৩ শতাংশ এবং ক্যাশ-আউট ৩০ শতাংশ বৃদ্ধির তথ্য পাওয়া যায়। এটি এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর অভিঘাত মোকাবিলার সক্ষমতাকেই তুলে ধরে।

জানতে চাইলে বিকাশ-এর হেড অফ করপোরেট কমিউনিকেশনস শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুর্গম এলাকার মানুষের অন্যতম ভরসা মোবাইল ব্যাংকিং। লেনদেন পর্যালোচনা করলেও দেখা যায় বাংলাদেশের অর্থনীতির মতো আমাদের বিকাশ-এর ক্যাশইন ও ক্যাশআউট সেবা শহর থেকে গ্রামমুখী। অর্থাৎ শহরে টাকা ক্যাশইন হয় বেশি এবং গ্রামে ক্যাশ আউট হয় বেশি।’

/এফএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারে লিঙ্গ বৈষম্যের হার সবচেয়ে বেশি: গবেষণা
সংসদে অর্থমন্ত্রীছয় মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন ৬ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা
ফোন হারিয়ে গ্রাহক জানলেন ব্যাংকে রাখা ১২ লাখ টাকা আর নেই
সর্বশেষ খবর
নির্মোহ মূল্যায়নের খোঁজে জাসদ
নির্মোহ মূল্যায়নের খোঁজে জাসদ
সাফজয়ী ভাইয়ের সঙ্গে লড়াই, নেই কোনও ছাড়
সাফজয়ী ভাইয়ের সঙ্গে লড়াই, নেই কোনও ছাড়
বিয়ে না করানোয় মাকে হত্যা
বিয়ে না করানোয় মাকে হত্যা
ব্রাজিলের জার্সিতে এই বছরই শেষ মার্তার
ব্রাজিলের জার্সিতে এই বছরই শেষ মার্তার
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী