ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছে যশোর জেলা প্রশাসন ও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। যশোর জেলার আট উপজেলার স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসাকে আশ্রয়ণকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলা ও উপজেলাভিত্তিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। একইসঙ্গে দুর্যোগ পরবর্তী প্রস্তুতি হিসেবে ত্রাণসামগ্রী, শুকনো খাবার, জরুরি ওষুধ মজুদের পাশাপাশি বিদ্যুৎবিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এনডিসি একেএম মামুনুর রশিদ জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে ৫৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া উপজেলাভিত্তিক কমিটিগুলো প্রস্তুত করা হচ্ছে। দুর্যোগ পরবর্তীকালে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য ত্রাণসামগ্রী, ওষুধ, খাবার স্যালাইন মজুদ করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে মেডিক্যাল টিম। এছাড়া ঘূর্ণিঝড়ের পরে বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করতে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মী ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে প্রস্তুতি নিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যশোর রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। সোমবার প্রস্তুতি সভায় কর্মীদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হাসান টুকুন।
এদিকে ধেয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ইয়াস প্রতিরোধে প্রস্তুতি সভা করেছে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ। বেলা ১১ টায় বন্দরের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় ঝড় মোকাবিলায় প্রস্ততি গ্রহণ করা হয়। এসময় বন্দরের সব বিভাগের প্রধান কর্মকর্তাদের নির্দেশনামূলক করণীয় কর্মকাণ্ড ঠিক করে দেন বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাাল মো. মুসা। তিনি এসময় বন্দর কর্তৃপক্ষের স্কুল অ্যান্ড কলেজ সাইক্লোন শেল্টার হিসেবে ব্যবহারের জন্য খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এছাড়া সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয়ে আসা দুর্গতদের প্রয়োজনীয় খাবার, বিশুদ্ধ পানি, লাইটিং ব্যবস্থা ও মেডিসিন সরবরাহের ব্যবস্থার নির্দেশ তিনি।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপসচিব মুন্সি মো. মাকরুজ্জামান জানান, ঝড়ের সময় বন্দরের বহির্নোঙ্গর ও অভ্যন্তরীণ অ্যাঙ্কোরে নোঙরে থাকা পণ্যবাহী দেশি-বিদেশি জাহাজ নিরাপদে সরিয়ে আনতে সহায়ক জলযান প্রস্তত রাখা, বন্দরের জেটি এলাকার আভ্যন্তরে কন্টেইনার ও অন্যান্য কার্গো সমূহকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব হতে রক্ষা করতে সিঙ্গেল টায়ারে সুশৃঙ্খলভাবে সাজিয়ে রাখা, কার্গো হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্টগুলোকে ইকুইপমেন্ট ইয়ার্ডে সঠিকভাবে বেধে রাখা, মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষে একটি কন্ট্রোলরুম স্থাপন করাসহ ঘূর্ণিঝড়ে কোনও জাহাজ ও জলযান বন্দর চ্যানেলে ক্ষতিগ্রস্ত বা ডুবে গেলে তা দ্রুত অপসারণে কয়েকটি স্যালভেজ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির সিদ্ধান্ত হয় সভায়।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. মুসার সভাপতিত্বে সদস্য (হারবার ও মেরিন) ক্যাপ্টেন ওয়াদুদ তরফদার, সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) মো. ইমতিয়াজ হোসেন, পরিচালক (প্রশাসন) ও হারবার মাস্টার কমান্ডার শেখ ফখর উদ্দিন, প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক ও তড়িৎ) লে. কর্নেল মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন, প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা লে. কমান্ডার বি এম নুর মোহাম্মদ, পরিকল্পনা প্রধান জহিরুল হক ও পরিচালক (ট্রাফিক) মো. মোস্তফা কামালসহ বন্দরের সব বিভাগের প্রধানরা এসময় উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন:
কখন কোথায় আঘাত হানতে পারে ‘ইয়াস’?
গুমোট উপকূল, চারদিকে ‘ইয়াস’ ভীতি
গতিপথ বদলেছে ইয়াস, ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ৪ জেলা
সৃষ্টি হয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’, বাতাসের গতিবেগ ৮৮ কিলোমিটার
আসছে ‘ইয়াস’: আবার রক্ষা করবে সুন্দরবন!
বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ, পায়রায় ২ নম্বর সতর্ক সংকেত
‘ইয়াস’ মোকাবিলায় ৮ নির্দেশনা, কন্ট্রোল রুম চালু
ইয়াস আতঙ্কে সুন্দরবনের ৮ টহল ফাঁড়ি বন্ধ
এগিয়ে আসছে ইয়াস, কয়রার বেড়িবাঁধ নিয়ে উদ্বেগ