X
বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

এগিয়ে আসছে ইয়াস, কয়রার বেড়িবাঁধ নিয়ে উদ্বেগ

খুলনা প্রতিনিধি
২৪ মে ২০২১, ১৭:১৮আপডেট : ২৪ মে ২০২১, ১৮:১৬

খুলনার উপকূলীয় এলাকার মানুষের কাছে আতঙ্কের নাম বেড়িবাঁধ। একদিকে ঘূর্ণিঝড় আইলার পর ভেঙে যাওয়া বাঁধ সংস্কার হলেও তা স্থায়ী হয়নি। অন্যদিকে উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। এ অবস্থায় কয়রার প্রায় ২৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয়রা।

খুলনার কয়রা উপজেলার চারদিকে নদী। শুধুমাত্র পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ দু’টি জনপদকে ঘিরে রেখেছে। দুর্বল বেড়িবাঁধের কারণে বর্ষা মৌসুমে চাপ বেড়ে বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করে লোকালয়ে। উপকূলীয় জনপদের বেশ কিছু জায়গায় দেখা দেয় স্থায়ী জলাবদ্ধতার। মাঝে মধ্যে গ্রীস্ম মৌসুমেও বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ঢোকে।

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, সংস্কারের অভাবে কয়রার ২৫ কিলোমিটারের মতো বেড়িবাঁধ নাজুক অবস্থায় রয়েছে। বাঁধের কোথাও কোথাও মাত্র দেড় থেকে দুই হাত মাটি অবশিষ্ট রয়েছে। অবস্থা এতটাই খারাপ যে, বাঁধের অনেক জায়গা দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে (লিকেজ) পানি প্রবেশ করছে। জোড়াতালির বেড়িবাঁধ, দীর্ঘমেয়াদি ও সুপরিকল্পিত কার্যক্রমের অভাব এখনও দৃশ্যমান। এর মধ্যে আসছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। এতে আতঙ্ক বেড়ে গেছে এসব এলাকার মানুষের। বিশেষ করে ঝুঁকির মুখে রয়েছে দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের আংটিহারা, খাসিটানা, জোড়শিং, মাটিয়াভাঙ্গা। উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের গাতিরঘেরি, গাববুনিয়া, গাজিপাড়া, কাটকাটা। কয়রা সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর কয়রা, ৪ নম্বর কয়রার পুরাতন লঞ্চঘাট সংলগ্ন এলাকা, মদিনাবাদ লঞ্চ ঘাট, ঘাটাখালি, হরিণখোলা। মহারাজপুর ইউনিয়নের উত্তর মঠবাড়ি, দশালিয়া, লোকা। মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের কালিবাড়ি, নয়ানি, শেখেরটেক এলাকা।

কয়রা উপজেলা প্রশাসন বলছে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় তারা প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। শারীরিক নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ঘূর্ণিঝড়ে কয়রার মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে আনতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম, প্রস্তুত রাখা হয়েছে মেডিক্যাল টিম। এরই মধ্যে কয়রাবাসীকে সতর্ক করতে মাইকিং শুরু হয়েছে।

উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ইয়াস বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। এ অবস্থায় ঘূর্ণিঝড়কে কেন্দ্র করে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদেরকে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। করোনার মধ্যে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা ও ১১৮টি আশ্রয়কেন্দ্রের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজে লাগানো হবে। ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতি এড়াতে কাজ করছেন রেডক্রিসেন্ট, সিপিপি, বেসরকারি এনজিও’র স্বেচ্ছাসেবকরা।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলায় বাঁধ ভেঙে যাওয়ার পর ১২ বছরেও উন্নয়ন হয়নি ১২১ কিলোমিটার বাঁধের। সীমানা জটিলতার কারণে অবহেলার শিকার হচ্ছে মানুষগুলো।

ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধের ফাইল ছবি পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, ২০২০ সালের ২০ মে আম্পানের প্রভাবে অন্তত ৩০ কিলোমিটার বাঁধ ভেঙে লোকালয় তলিয়ে যায়। দক্ষিণ বেদকাশী ইউনিয়নে শাকবাড়িয়া নদীর আংটিহারা মজিদ গাজীর বাড়ির পাশে, জোড়শিং বাজারের পাশে, কপোতাক্ষ নদের চোরামুখা খেয়াঘাটের কাছে, গোলখালী তসলিম মোল্লার বাড়ির পাশে, উত্তর বেদকাশি ইউনিয়নের কপোতাক্ষ নদের গাজীপাড়া গ্রামে, কাটকাটা বাজারের শাকবাড়ীয়া নদীর তীল, মহারাজপুর ইউনিয়নের দশালিয়া গ্রামে কপোতাক্ষ নদী, কয়রা সদর ইউনিয়নের হরিণখোলা ও গোবরা ঘাটাখালি গ্রামে কপোতাক্ষ নদের আধা কিলোমিটার এলাকা ভেঙে তলিয়ে যায়। স্থানীয় মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বেড়ি বাঁধ নির্মাণে কাজ করে। ২০০৯ সালের ২৫ মে উপকূলীয় অঞ্চল ঘূর্ণিঝড় আইলার আঘাতেও লণ্ডভণ্ড হয় উপজেলার বেড়িবাঁধগুলো। সে সময় তিন বছর মানুষ নোনা পানিতে আবদ্ধ ছিল। দীর্ঘদিনেও ৬০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে পর্যাপ্ত মাটি দেওয়া হয়নি। পাউবো কর্তৃপক্ষ মাটি না দেওয়ায় বাঁধগুলো দুর্বল অবস্থায় রয়েছে। এরপরও গত ১২ বছরে যে বরাদ্দ হয়েছে তার সিংহভাগই হয়েছে লুটপাট।

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন অভিযোগ করেন, ২০১৮-১৯ এবং ২০১৯-২০ অর্থ বছরে উপজেলার বেড়িবাঁধ সংস্কারে সাড়ে চার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। এছাড়াও ১৮-১৯ অর্থ বছরে সাড়ে তিন কোটি টাকা বরাদ্দ হয়। অস্বচ্ছতা এবং অনিয়ম করেই সংস্কার কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। যে কারণে দুর্বল বাঁধ আর মজবুত হয়নি।

খুলনা ত্রাণ ও পুর্ণবাসন অধিদফতরের সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের আঘাতে প্রাণহানি ও সম্পদের নিরাপত্তার জন্য কয়রায় ১১৮টি, দাকোপে ১২৩টি, ডুমুরিয়ায় ১৯টি, বটিয়াঘাটায় ১৮টি ও পাইকগাছায় পাঁচটি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তত রাখা হয়েছে। এসব কেন্দ্রের ধারণ ক্ষমতা এক লাখ ৯০ হাজার ৩৭০ জন। ২০২০ সালের ২০ মে আম্পান নামক প্রাকৃতিক দুর্যোগে খুলনা জেলায় দু’লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কয়রা উপজেলার কয়েকটি বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। আম্পানে গাছ পড়ে তিন জনে মৃত্যু হয়।

কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস জানান, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস মোকাবিলায় সাতটি ইউনিয়নে এক হাজার ২৬০ জন সিপিপি কর্মী প্রস্তুত রয়েছে। দক্ষিণ বেদকাশী, উত্তর বেদকাশী, মহারাজপুর, মহেশ্বরীপুর ও সদর ইউনিয়নে কাল থেকে মাইকিং করা হবে। এ পাঁচটি ইউনিয়ন সব সময় দুর্যোগে ঝূঁকিপূর্ণ থাকে। আশ্রয়কেন্দ্রের জন্য শুকনো খাবার ও শিশুখাদ্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আজিজুল হক জোয়ার্দার জানান, খুলনায় পাঁচ হাজার ৩২০ জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রয়েছে। সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় শুকনো খাদ্য ও অর্থ বরাদ্দ করা হয়নি। আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন:

কখন কোথায় আঘাত হানতে পারে ‘ইয়াস’?
ইয়াসের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে প্রস্তুত যশোর ও মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ

গুমোট উপকূল, চারদিকে ‘ইয়াস’ ভীতি
গতিপথ বদলেছে ইয়াস, ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ৪ জেলা
সৃষ্টি হয়েছে ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’, বাতাসের গতিবেগ ৮৮ কিলোমিটার
আসছে ‘ইয়াস’: আবার রক্ষা করবে সুন্দরবন!
বঙ্গোপসাগরে গভীর নিম্নচাপ, পায়রায় ২ নম্বর সতর্ক সংকেত

‘ইয়াস’ মোকাবিলায় ৮ নির্দেশনা, কন্ট্রোল রুম চালু
ইয়াস আতঙ্কে সুন্দরবনের ৮ টহল ফাঁড়ি বন্ধ

/টিটি/
সম্পর্কিত
ইয়াসের এক মাস‘নদীতে না সাগরে আছি বুঝতে পারি না’
এবার কোমর পানিতে জুমার নামাজ আদায়
ইয়াসে ক্ষতিগ্রস্ত ১৫ লাখ মানুষ
সর্বশেষ খবর
জোরে সালাম শুনেই ঘাড় ফিরিয়ে উত্তর দেন খালেদা জিয়া
জোরে সালাম শুনেই ঘাড় ফিরিয়ে উত্তর দেন খালেদা জিয়া
বজ্রাঘাতে প্রাণ গেলো ১০ জনের
বজ্রাঘাতে প্রাণ গেলো ১০ জনের
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
ব্যর্থতার অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে আইনি নোটিশ
বাবাকে খাবার পৌঁছে দিতে গিয়ে নিখোঁজ শিশুর লাশ মিললো নদীতে
বাবাকে খাবার পৌঁছে দিতে গিয়ে নিখোঁজ শিশুর লাশ মিললো নদীতে
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
তীব্র তাপপ্রবাহ যেখানে আশীর্বাদ
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম