কুড়িগ্রামে করোনা সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় জেলার পৌর এলাকার কয়েকটি ওয়ার্ড ও বাজারে এক সপ্তাহের জন্য জনসমাগম ও অবাধ চলাচল নিয়ন্ত্রণের (রেসট্রিকটেড মোড) সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সোমবার (১৪ জুন) বিকালে জেলা করোনা সংক্রান্ত কমিটির ভার্চুয়াল মিটিংয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিভিল সার্জন ডা. হাবিবুর রহমান এবং জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মিটিংয়ে উপস্থিত কুড়িগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন ডা. আমিনুল ইসলাম জানান, সাম্প্রতিক সময়ে কুড়িগ্রামে সংক্রমণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে জেলার সদর উপজেলাসহ সীমান্তবর্তী কয়েকটি উপজেলা লকডাউনের সুপারিশ করা হয়। আলোচনা, প্রস্তাব এবং সংক্রমণের মাত্রা বিবেচনায় আপাতত কুড়িগ্রাম পৌর এলাকার তিনটি ওয়ার্ডে জনসমাগম ও অবাধ চলাচল নিয়ন্ত্রণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ জনগণের চলাচলে রেসট্রিকশন আনা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘জেলায় করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় আমরা ম্যাপিংয়ের কাজ করেছি। জেলার কোন অঞ্চলগুলোতে সংক্রমণের মাত্রা বেশি সেটা নির্ণয় করে আমরা আপাতত পৌর এলাকার ২, ৩ ও ৭নং ওয়ার্ডে জনসমাগম ও মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এই এলাকাতে সংক্রমণ বেশি। এই এলাকায় আমরা কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছি। মঙ্গলবার (১৫ জুন) বিকাল ৫টা থেকে পরবর্তী সাত দিন এই বিধিনিষেধ চলবে। এরপরও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ না হলে আমরা কঠোর লকডাউনে চলে যাবো।’
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘শহরের হাসপাতাল পাড়া এলাকায় ওষুধ ও খাবারের দোকান ছাড়া অন্যান্য দোকানপাট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও জিয়া বাজার ও পৌর বাজার এলাকায় মোটরসাইকেল কিংবা অটোরিকশা ও রিকশা চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। যাতে মানুষের সমাবেশ বা সমাগমটা কম হয়। কয়েকটি পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই পয়েন্টগুলোতে মোবাইল কোর্ট ও পুলিশের মাধ্যমে মাধ্যমে ছোট ছোট বাহনে যাত্রী পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করা হবে, যাতে তারা অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে পৌর এলাকায় প্রবেশ করতে না পারে।’
‘আমরা আপাতত আগামী সাত দিন পর্যবেক্ষণ করবো। এই পদ্ধতির একটা প্রভাব পড়তে পারে। যদি এতে পরিস্থিতির উন্নতি না হয় তাহলে পরবর্তী সময়ে কঠোর বা সর্বাত্মক লকডাউনে যাবো।’ যোগ করেন জেলা প্রশাসক।
বিকাল সাড়ে ৪টায় শুরু হওয়া ভার্চুয়াল মিটিংয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান যুক্ত ছিলেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, সোমবার (১৪ জুন) জেলায় ২৯ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৯ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ১৩ জনই সদর উপজেলার বাসিন্দা। গত ৯ দিনে (৫ মার্চ থেকে ১৪ মার্চ পর্যন্ত) জেলায় ২৩৯টি নমুনা পরীক্ষায় ১০৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ অবস্থায় সংক্রমণ ঠেকাতে জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে সচেতনতার পাশাপাশি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সংশ্লিষ্ট এলাকা লকডাউনের বিকল্প নেই বলে মনে করছে স্বাস্থ্য বিভাগ।
স্বাস্থ্য বিভাগ আরও জানায়, জেলার সদর উপজেলায় সংক্রমণের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। গত ৯ দিনে আক্রান্ত ১০৩ জনের মধ্যে ৭৯ জনই সদর উপজেলার বাসিন্দা।
