X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের ৫২৯১ কোটি টাকা

গোলাম মওলা
১৮ জুন ২০২১, ১০:৪২আপডেট : ১৮ জুন ২০২১, ১০:৪২

আগের বছরের তুলনায় সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন ব্যাংকে (সুইস ব্যাংক) বাংলাদেশিদের টাকার পরিমাণ ৭ শতাংশ কমলেও ২০২০ সালে এ অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৬ কোটি ২৯ লাখ ফ্র্যাংক। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা ৫ হাজার ২৯১ কোটি টাকা (প্রতি সুইস ফ্র্যাংক ৯৪ টাকা হিসাবে)। তবে আগের বছরের চেয়ে এ আমানত ৩৭৬ কোটি টাকা কমেছে। ২০১৯ সালে যা ছিল ৫ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, দেশে বিনিয়োগ না হওয়ায় সুইস ব্যাংকে অনেকেই টাকা রাখছেন। বাংলাদেশের নিয়ম অনুযায়ী যেকোনও ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন অন্তত ৫০০ কোটি টাকা হতে হয়। সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের যে টাকা এখন জমা আছে, তা অন্তত ১০টি ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধনের সমান।

প্রসঙ্গত, সারাবিশ্বে ধনী ব্যক্তিদের টাকা সুইস ব্যাংকে রাখার আগ্রহের পেছনে মূল কারণ দেশটির গোপনীয়তা নীতি। সুইজারল্যান্ডের আইনে ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য নয়। টাকার উৎসও তারা জানতে চায় না। তবে কোন দেশের গ্রাহকদের কী পরিমাণ অর্থ সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে জমা আছে, তার একটি ধারণা প্রতিবছর এসএনবির বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে পাওয়া যায়। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদের বাধ্যবাধকতা মেনে এসএনবি ওই তথ্য প্রকাশ করলেও সেখানে গ্রাহকের বিষয়ে কোনও ধারণা পাওয়া যায় না।

সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অর্থের পরিমাণ প্রথমবার ১০ কোটি সুইস ফ্রাঙ্ক ছাড়িয়ে যায় ২০০৬ সালে। এটি ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষ বছর। ৯ কোটি ৭২ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক থেকে বেড়ে ওই বছর জমার পরিমাণ দাঁড়ায় ১২ কোটি ৪৩ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক। এরপর সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রথম বছর ২০০৭ সালে জমা অর্থের পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ২০ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক হয়।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, ‘বাংলাদেশিদের টাকা সুইস ব্যাংকে জমা থাকলেও এর পুরোটা পাচার নয়। এর মধ্যে সুইজারল্যান্ডে যারা কাজ করছেন তাদের আমানত রয়েছে।’ তবে বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে কাউকে সেখানে টাকা নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।

প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২০ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানতের স্থিতি ৫৬ কোটি ২৯ লাখ ডলার। আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে যা ছিল ৬০ কোটি ৩০ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৮ সালে ছিল ৬১ কোটি ৭৭ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৭ সালে ছিল ৪৮ কোটি ১৩ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৬ সালে ৬৬ কোটি ১৯ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৫ সালে ৫৫ কোটি ০৮ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১৪ সালে যা ছিল ৫০ কোটি ৬০ লাখ ফ্র্যাংক।

২০১৩ সালে ৩৭ কোটি ২০ লাখ ফ্র্যাংক স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ ৩ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা। ২০১২ সালে ছিল ২২ কোটি ৯০ লাখ ফ্র্যাংক। ২০১১ সালে ছিল ১৫ কোটি ২০ ফ্র্যাংক। ২০১০ সালে ছিল ২৩ কোটি ৬০ লাখ ফ্র্যাংক, ২০০৯ সালে ১৪ কোটি ৯০ লাখ, ২০০৮ সালে ১০ কোটি ৭০ লাখ, ২০০৭ সালে ২৪ কোটি ৩০ লাখ, ২০০৬ সালে ১২ কোটি ৪০ লাখ, ২০০৫ সালে ৯ কোটি ৭০ লাখ, ২০০৪ সালে ৪ কোটি ১০ লাখ, ২০০৩ সালে ৩ কোটি ৯০ লাখ ফ্র্যাংক এবং ২০০২ সালে ছিল ৩ কোটি ১০ লাখ ফ্র্যাংক।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে ২০২০ সালে সুইজারল্যান্ডের ২৫৬টি ব্যাংকে আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩৬ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। আগের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে ছিল এক লাখ ৩০ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। এ হিসাবে এক বছরে আমানত কমেছে ৬ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। এছাড়া ২০১৮ সালে যা ছিল এক লাখ ২৭ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। ২০১৭ সালে ছিল এক লাখ ৩৫ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। ২০১৬ সালে ছিল এক লাখ ৩২ হাজার কোটি। ২০১৫ সালে সুইস ব্যাংকে বিদেশিদের মোট আমানত ছিল এক লাখ ৩৩ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। ২০১৪ সালে এক লাখ ৩৮ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। ২০১৩ সালে ছিল এক লাখ ২৩ হাজার কোটি, ২০১২ সালে ছিল এক লাখ ২৯ হাজার কোটি ফ্র্যাংক। ২০১১ সালে এক লাখ ৪০ হাজার কোটি, ২০১০ সালে এক লাখ ৩৪ হাজার কোটি এবং ২০০৯ সালে ছিল এক হাজার ৩৩ হাজার কোটি ফ্র্যাংক।

প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারতীয়দের সুইস ব্যাংকে জমানো অর্থের পরিমাণে এবার বড় উল্লম্ফন ঘটেছে। ৮৯ কোটি ১৯ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক থেকে বেড়ে ২.৫৫ বিলিয়ন হয়েছে। পাকিস্তানিদের জমা অর্থের পরিমাণ ৩৫ কোটি ৯৬ লাখ থেকে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ৬৪ কোটি ২২ লাখ সুইস ফ্রাঙ্ক হয়েছে।

সুইজারল্যান্ডের ২৪৩টি ব্যাংকের যে হিসাব দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক দিয়েছে, তাতে একক দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্যের নাগরিকদের জমা অর্থের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, ৩৭৭ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক। এর পরের অবস্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জমার পরিমাণ ১৫২ বিলিয়ন সুইস ফ্রাঙ্ক। তালিকায় এর পরে রয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ফ্রান্স, হংকং, জার্মানি, সিঙ্গাপুর ও লুক্সেমবার্গের নাম।

 

/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত
দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত
দেশে দেশে রমজানের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও রকমারি উৎসব
দেশে দেশে রমজানের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি ও রকমারি উৎসব
অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে চীনের দাবি ‘অযৌক্তিক’: ভারত
অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে চীনের দাবি ‘অযৌক্তিক’: ভারত
‘বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছিল, আ.লীগ তা ব্যর্থ করে দিয়েছে’
‘বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছিল, আ.লীগ তা ব্যর্থ করে দিয়েছে’
সর্বাধিক পঠিত
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা সাকিবকে আমার বাসায় নিয়ে আসেন: মেজর হাফিজ
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা সাকিবকে আমার বাসায় নিয়ে আসেন: মেজর হাফিজ
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই
‘সরলতার প্রতিমা’ খ্যাত গায়ক খালিদ আর নেই