X
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
৫ চৈত্র ১৪৩০

শক্তিশালী শেয়ার বাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ছে

গোলাম মওলা
১৮ জুন ২০২১, ১৭:০১আপডেট : ১৮ জুন ২০২১, ১৭:০১

২০২০ সালের শুরুতেও পুঁজিবাজার ছিল হতাশার। সেই বাজার এখন শুধু ঘুরে দাঁড়াতেই শুরু করেনি, একটি শক্তিশালী পুঁজিবাজার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। এরই মধ্যে অনেক পরিবর্তন এসেছে এই বাজারে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে প্রায় এক বছর ধরে। দুর্বলতাগুলোও ধীরে ধীরে দূর হচ্ছে। শেয়ার বাজার যে শক্ত ভিত্তির ওপরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তার প্রমাণ মেলে বিএসইসির সর্বশেষ নেওয়া সিদ্ধান্তেই। বৃহস্পতিবারের (১৭ জুন) সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন দাম বা ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়েছে।

শেয়ারের দামের ভয়াবহ পতন ঠেকাতে গত বছরের ১৯ মার্চ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়। যাতে বেঁধে দেওয়া ওই সীমার নিচে কোনও শেয়ার নামতে না পারে।

এভাবে গত বছরের মার্চে শেয়ার বাজারের ভয়াবহ পতন থামিয়েছিল বিএসইসির তৎকালীন কমিশন। ওই কমিশনে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন এম খায়রুল হোসেন। ফ্লোর প্রাইস আরোপের আগে ১৮ মার্চ দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স নেমেছিল ৩ হাজার ৬০০ পয়েন্টে। এর কিছুদিনের মধ্যেই বিএসইসির নেতৃত্বেও বদল আসে। খায়রুল হোসেনের বিদায়ের পর বিএসইসির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম। নতুন নেতৃত্ব দায়িত্ব নেওয়ার পর শেয়ার বাজার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে।

শুধু তাই নয়, গত রবিবার (৬ জুন) বিগত সাড়ে ১০ বছরের মধ্যে শেয়ার বাজারে সর্বোচ্চ লেনদেনের রেকর্ড হয়। তিন দিন পর বুধবার (৯ জুন) সেই রেকর্ড ভেঙে আরও উচ্চতায় উঠে। এদিন ইতিহাসের সর্বোচ্চ লেনদেনের কাছাকাছি চলে আসে। এর আগে ২০২০ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে রেকর্ড পরিমাণ অর্থ উত্তোলন করেছেন উদ্যোক্তারা।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতি যতদিন উন্নতি না হবে, ততদিন মানুষ শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করবে। তবে বাজারে যদি সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হয়, সে ক্ষেত্রে শেয়ার বাজার একদিন শক্তিশালী বাজার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।’ 

এদিকে টানা ৯ সপ্তাহ ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর গেল সপ্তাহে দেশের শেয়ার বাজারে কিছুটা দরপতন হয়েছে। এতে প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা কমে গেছে।

গেল সপ্তাহে লেনদেন হওয়া পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে তিন কার্যদিবসই শেয়ার বাজারে দরপতন হয়। সেইসঙ্গে কমেছে সবকটি মূল্যসূচক। পাশাপাশি লেনদেনের গতিও কমেছে।

গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৮ হাজার ১৩৪ কোটি টাকা। যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৫ লাখ ৯ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। আগের ৯ সপ্তাহে ডিএসই’র বাজার মূলধন বাড়ে ৫০ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। এই হিসাবে অর্ধলাখ কোটি টাকার ওপরে বাড়ার পর ডিএসই’র বাজার মূলধন দুই হাজার কোটি টাকার মতো কমেছে।

এদিকে, গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ১৩ দশমিক ৮৯ পয়েন্ট বা দশমিক ২৩ শতাংশ। আগের ৯ সপ্তাহ শেয়ার বাজার টানা ঊর্ধ্বমুখী থাকায় সূচকটি বাড়ে ৮১১ দশমিক ৮৬ পয়েন্ট। প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি গত সপ্তাহজুড়ে কমেছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ এর সূচক। গেল সপ্তাহে এই সূচকটি কমেছে ৮ দশমিক শূন্য ৪ পয়েন্ট । আগের সপ্তাহে সূচকটি বেড়েছিল ১ দশমিক ৫১ পয়েন্ট।

অপরদিকে, ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচকও গত সপ্তাহে কমেছে। গত সপ্তাহে সূচকটি কমেছে ৮ দশমিক ৫৫ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি বাড়ে ৬ দশমিক ৩১ পয়েন্ট।

সবকটি মূল্যসূচকের পতনের পাশাপাশি গত সপ্তাহে ডিএসইতে লেনদেন অংশ নেওয়া বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমেছে। সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে দাম বেড়েছে ১৪৮টি শেয়ারের দাম। দাম কমেছে ২১০টির। আর ১৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৯৫৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৪৩৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ৪৭৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা। গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে ৯ হাজার ৭৯৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় ১২ হাজার ১৮৮ কোটি ২৩ লাখ টাকা। সে হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে ২ হাজার ৩৮৯ কোটি ৫৬ লাখ টাকা।

অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে লেনদেন হয়েছে ৪৪৪ কোটি ৮৪ লাখ ৮২ হাজার ২৩২ টাকা। এর আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৫২৭ কোটি ৪৫ লাখ ৮৯ হাজার ২৫৩ টাকা। লেনদেন হওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে দাম বেড়েছে ১৪২টির, কমেছে ১৭৬টির, আর অপরিবর্তিত রয়েছে ২০টি কোম্পানির শেয়ারের দাম। এতে সিএসইর প্রধান সূচক ১৫ পয়েন্ট কমে ১৭ হাজার ৫৭০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

 

/এপিএইচ/
সম্পর্কিত
‘গুজবে’ কান না দেওয়ার অনুরোধ পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার
‘ফিক্সড ইনকাম সিকিউরিটিজ হতে পারে বিনিয়োগের ভালো অপশন’
থ্রি-আই এএমসিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ডের আবেদন শুরু রবিবার
সর্বশেষ খবর
ঈদ কেনাকাটায় প্রিমিয়ার ব্যাংকের কার্ডে বিশেষ ছাড়
ঈদ কেনাকাটায় প্রিমিয়ার ব্যাংকের কার্ডে বিশেষ ছাড়
শুটিংয়ের অন্তরালে...
শুটিংয়ের অন্তরালে...
সোনার দাম কমলো
সোনার দাম কমলো
মামুনুল হকের বিরুদ্ধে তৃতীয় দফায় সাক্ষ্য দিলেন তদন্ত কর্মকর্তা
মামুনুল হকের বিরুদ্ধে তৃতীয় দফায় সাক্ষ্য দিলেন তদন্ত কর্মকর্তা
সর্বাধিক পঠিত
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
দিন দিন নাবিকদের সঙ্গে কঠোর আচরণ করছে দস্যুরা
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
সুইডেনের রাজকন্যার জন্য দুটি হেলিপ্যাড নির্মাণ, ৫০০ স্থানে থাকবে পুলিশ
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা সাকিবকে আমার বাসায় নিয়ে আসেন: মেজর হাফিজ
অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা সাকিবকে আমার বাসায় নিয়ে আসেন: মেজর হাফিজ
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
সঞ্চয়ী হিসাবের অর্ধকোটি টাকা লোপাট করে আত্মগোপনে পোস্ট মাস্টার
‘বিএনএমের সদস্য’ সাকিব আ.লীগের এমপি: যা বললেন ওবায়দুল কাদের
‘বিএনএমের সদস্য’ সাকিব আ.লীগের এমপি: যা বললেন ওবায়দুল কাদের