X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

কদম কেন ছিঁড়বেন না

উদিসা ইসলাম
১৯ জুন ২০২১, ১১:৫৪আপডেট : ২০ জুন ২০২১, ০২:৪৭

বাঙালি জীবনে ঋতুকেন্দ্রিক গান ফুল ফলে ভরা। এখন বর্ষাকাল। আষাঢ়ের শুরুর দিন থেকেই গুনগুন করে ওঠে মন; রবীন্দ্রনাথের গান—বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান। কিংবা জাতীয় কবি কাজী নজরুলের দোলে শিহরে কদম, বিদরে কেয়া, নামিলো দেয়া। বৃষ্টি হচ্ছে আর হাতে কদম নিয়ে তার শোভা অনুভব করবেন না তা কি করে হয়। কিন্তু ভাবুনতো, খুঁজেখুঁজে ব্যাকুল হয়েও একটা কদম গাছ পাবেন না একসময়; তখন হাতে নিয়ে ফুলের শোভা দূরে থাক, পরের প্রজন্মকে ছবি দেখিয়ে চেনাতে হবে এই ফুল। আর এর জন্য দায়ী হবো আমরা যারা নির্বিচারে ফুল ছিঁড়ে ফেলছি। ভাবছেন ফুল ছিঁড়লে গাছ কীভাবে বিলুপ্ত হবে?

প্রাণ প্রতিবেশ গবেষকরা বলছেন, ভাদ্রমাসে যখন গাছে গাছে ফল থাকে না তখন পাখিদের প্রাণীদের খাবারের আকাল চলে। কদম তখন প্রধান খাবার হয়ে ওঠে বাদুড় ও কাঠবিড়ালির জন্য। ওরাই বীজ ছড়ানোর বাহন। ফলে ফুল যদি আগেই ছিঁড়ে ফেলা হয় তাহলে পাখিরা খাদ্য বঞ্চিত হবে। একসময় আমরা কদমের শোভা বঞ্চিত হবো।

কদম গাছ ও ফুলের পরিচিতিতে জানা যায়, কদমের কাণ্ড সরল, উন্নত, ধূসর থেকে প্রায় কালো এবং বহু ফাটলে রুক্ষ, কর্কশ। শাখা অজস্র এবং ভূমির সমান্তরালে প্রসারিত। নিবিড় পত্রবিন্যাসের জন্য কদম ছায়াঘন। শীতে কদমের পাতা ঝরে যায়, বসন্তে কচি পাতা গজায়। কদমের একটি পূর্ণমঞ্জরিকে সাধারণত একটি ফুল বলেই মনে হয়। তাতে বলের মতো গোল, মাংসল পুষ্পাধারে অজস্র সরু সরু ফুলের বিকীর্ণ বিন্যাস। ফল মাংসল, টক এবং বাদুড় ও কাঠবিড়ালির প্রিয় খাদ্য। ওরাই বীজ ছড়ানোর বাহন। গাছের ছাল জ্বরের ঔষধ হিসেবেও উপকারী।

কদম গাছ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশ্লেষক গওহার নঈম ওয়ারা এ সময়টাকে কদমবসন্ত বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘মন যতই চাক, কদমফুল ছিঁড়বেন না। কেউ হীরার আংটির বিনিময়ে চাইলেও না। কদম তিনবার পুষ্পিত  হয়। তাকে ফুটতে দিন। ভাদ্রমাসে যখন গাছে গাছে ফল থাকে না তখন পাখিদের, প্রাণীদের খাবারের আকাল চলে, সেটা তাদের মঙ্গাকাল। ঠিক তেমনই যেমনটা কার্তিকে আমাদের মঙ্গা হতো। ফলে ওই সময় কদম প্রধান খাবার হয়ে ওঠে বাদুড় ও কাঠবিড়ালির। ওরাই বীজ ছড়ায়। পাখ-পাখালি না খেলে কদম বীজ থেকে গাছ হবে না। কদম বাঁচাতে-পাখিদের বাঁচাতে কদম ফুল ছেঁড়া বন্ধ রাখুন। এছাড়া কদমের অনেক গুন, সেগুলো বিষয়ে নিজেদের মধ্যে তথ্যবিনিময় হওয়া জরুরি।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রেজিনা লাজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কদম ফল পাকলে ফলটি অনেকে খায়। একটা ফলের ভেতরে প্রায় ৮ হাজার বীজ থাকে। পাখি, বাদুড়, কাঠবিড়ালির খুব প্রিয় এই ফল। পাখিদের খাদ্য ধ্বংস করে দিচ্ছি কিনা সেটা ভেবে দেখা দরকার এবং অযথা ফুল ছেঁড়া বন্ধ করতে হবে। ফুল বেশি বেশি ছিঁড়লে যেকোনও উদ্ভিদের বিস্তার ব্যাহত হয়। কারণ ফল পরিপক্ক না হলে বীজের অঙ্কুরোদগম হবে না। তবে ফল পেকে গেলে এটা ফেটে যায় এবং বাতাস অথবা বৃষ্টির পানির মাধ্যমেও বীজের বিস্তার ঘটে।’

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন

 

/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কবিগুরুর  ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী: গঠিত হলো সোসাইটি, দেশজুড়ে বর্ণিল আয়োজন
কবিগুরুর ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী: গঠিত হলো সোসাইটি, দেশজুড়ে বর্ণিল আয়োজন
প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় ভোটগ্রহণ শুরু
প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় ভোটগ্রহণ শুরু
পিএসজিকে হারিয়ে ফাইনালে ডর্টমুন্ড
চ্যাম্পিয়নস লিগপিএসজিকে হারিয়ে ফাইনালে ডর্টমুন্ড
রাজস্থানকে হারিয়ে প্লে অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো দিল্লি
রাজস্থানকে হারিয়ে প্লে অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো দিল্লি
সর্বাধিক পঠিত
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
শেখ হাসিনাই হচ্ছেন ভারতে নতুন সরকারের প্রথম বিদেশি অতিথি
শেখ হাসিনাই হচ্ছেন ভারতে নতুন সরকারের প্রথম বিদেশি অতিথি